ভালো।
আপনার জন্যে একটি সুসংবাদ আছে। বলব?
বলো।
অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশনের জন্যে আপনার যে সব কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছিল সেখানে কিছু সমস্যা ছিল, তারপরেও আপনি ইমিগ্রেশন পেয়ে গেছেন।
ও।
বাবা Congratulation. বাকি জীবন আপনি অতি সুসভ্য দেশে থাকবেন। ক্যাঙ্গারু দেখবেন।
সানাউল্লাহ বললেন, হুঁ।
আগামী মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে আপনাকে চলে আসতে হবে। আমি জানি আপনি নিজ থেকে আসবেন না। কাজেই আমি এসে আপনাকে নিয়ে যাব। বাবা, ঠিক আছে?
হুঁ।
ঢাকায় আপনার যে জায়গাটা আছে পাঁচ কাঠা না?
হুঁ।
জায়গাটা তো মোটামুটি প্রাইম লোকেশনে। আমরা একটা ডেভেলপারকে দিয়ে দিব। তারা মাল্টি স্টোরিড অ্যাপার্টমেন্ট হাউস বানাবে। দুটা থাকবে আপনার নামে। দেশে যখন বেড়াতে আসবেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টে উঠবেন।
সানাউল্লাহ বললেন, একটা সমস্যা আছে।
কী সমস্যা?
আমার বাড়ির সামনে একটা কাঠাল গাছ আছে। ডেভেলপারকে দিলে তারা কাঁঠাল গাছটা কেটে ফেলবে। তখন ভূতের বাচ্চা দুটা যাবে কই? ওরা তো কাঁঠাল গাছেই থাকে।
বাবা, আমি তো নিজেই আসছি। তখন কাঁঠাল গাছে, গাছের ভূত এইসব নিয়ে Detail কথা হবে। গুড নাইট।
গুড নাইট।
সানাউল্লাহ লেখায় মন দেবার চেষ্টা করছেন। মন বসছে না। নিজের দেশ ফেলে ছাতার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে থাকতে হবে। ক্যাঙ্গারু দেখতে হবে? দেখার মতো কী আছে এই অদ্ভুটার ভেতর? এত বড় জন্তু ব্যাঙের মতো লাফিয়ে চলে।
ভিসিভিতে ছবি শেষ হয়েছে। রফিক ঘুমুতে চলে গেছে। সানাউল্লাহ ডাকলেন, হমডু।
হমড়ু সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, জি।
তোদের নিয়ে গবেষণামূলক বই লিখছি। তোরা সাহায্য না করলে পারব না। আমার হাতে সময় কম। আমাকে চলে যেতে হবে অস্ট্রেলিয়ায়, ক্যাঙ্গারু দেখতে হবে। যাই হোক, তোরা রেস্ট নে আমি বইয়ের ইনট্রোডাকশনটা লিখে ফেলি।
পত্রিকার প্রথম পাতায় খবর
পত্রিকার প্রথম পাতায় খবর— ডাক্তারের চেম্বারে সন্ত্রাসী হামলা। হামলায় ডাক্তারের একজন অ্যাসিসটেন্ট এবং তিনজন রোগী গুরুতর আহত। ব্যাপক ভাঙচুর।
সানাউল্লাহ খবর পড়ে আনন্দ পেলেন। হামিদ স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েও কাজকর্ম চালাতে পারছে এটা আশার কথা। তিনি খবরের কাগজ সঙ্গে নিয়েই আবু করিমের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। পত্রিকা বন্ধুর সামনে মেলে বললেন, খবর পডেছ?
আবু করিম বললেন, পড়েছি। এই দেশে বাস করা যাবে না। ডাক্তারের চেম্বারে সন্ত্রাসী হামলা, চিন্তা করা যায়? সব ছেড়ে-ছুড়ে বনে চলে যেতে ইচ্ছা করে। তোমার করে না?
সানাউল্লাহ জবাব দিলেন না। তাঁর কাছে এখন মনে হচ্ছে সন্ত্রাসী হামলার পুরো ব্যাপারটা চেপে যাওয়াই ভালো।
ডা. আবু করিম বললেন, তোমার ব্যাপারটা কী বলো তো? সাতদিন হয়ে গেল তোমার খোঁজ নাই। এদিকে নতুন একটা প্রিপারেশন রেডি করেছি। টেস্টার
সানাউল্লাহ বললেন, প্রিপারেশনটা কী?
ভাতের আচার।
ভাতের আচার হয় না-কি?
আবু করিম বললেন, হওয়ালেই হয়। সারা পৃথিবীতে ভাত দিয়ে অনেক কিছু হয়। জাপানিরা বানায় রাইস ওয়াইন। চায়নিজরা বানায় রাইস টি। কোরিয়ানরা ভাতের সঙ্গে শুকরের চর্বি মিশিয়ে ফার্মেন্টেড করে কী যেন বানায়। নববর্ষে খায়। নামটা ভুলে গেছি।
সানাউল্লাহ বললেন, ভাতের আচারটা কীভাবে বানিয়েছ?
আবু করিম বললেন, শীলপাটায় ভাত পিষে মন্ত্রে মতো করেছি। মার্বেলের গুলির মতো গুলি বানিয়ে রোদে শুকিয়েছি। এদিকে তেতুলের রস, আস্ত অড়বড়ই, আস্ত আমলকি, আমচুর, শুকনা মরিচ, পাঁচ ফুরন দিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন Semisolid বস্তু তৈরি করেছি। তার ভেতর ভাতের মার্বেল ছেড়ে দিয়ে রোদে শুকিয়েছি।
সানাউল্লাহ বললেন, শুনে তো অসাধারণ লাগছে।
আবু করিম বললেন, একটা ভয় ছিল ভাতের মার্বেলের ভেতর রস ঢুকবে কি-না। রস ঢুকেছে। এক্ষুনি আনছি খেয়ে দেখো।
সানাউল্লাহ ভাতের মার্বেল আস্ত একটা মুখের ভেতর ঢুকালেন এবং কিছুক্ষণের জন্যে স্থির হয়ে গেলেন।
আবু করিম আগ্রহের সঙ্গে বললেন, কেমন বুঝছ?
সানাউল্লাহ বললেন, এতই সুস্বাদু যে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে বাকি জীবন মুখে নিয়ে বসে থাকি।
আবু করিম বললেন, এটার প্রিপারেশনই মুখে নিয়ে বসে থাকার প্রিপারেশন। আস্তে আস্তে ভাতের গোল্লা থেকে রস বের হবে।
অসাধারণ। পেটেন্ট করে ফেলা উচিত। পেটেন্ট না করলে অন্যকেউ প্রচার করে ফেলতে পারে। দেখা যাবে চ্যানেল আইয়ের রান্নার অনুষ্ঠানে কেকা ফেরদৌসি ভাতের আচারের রেসিপি দিয়ে দিচ্ছেন।
আবু করিম বললেন, তাহলে তো চিন্তার বিষয়। পেটেন্ট অফিসে খোঁজ নেয়া উচিত আচারের পেটেন্ট হয় কি-না। আন্তর্জাতিক কোনো পেটেন্ট কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করা দরকার। কষ্ট করে একটা জিনিস বানালাম, দেখা গেল জাপানিরা বাজারে ছেড়ে দিল। নাম দিল কেও মেও। কোটি কোটি ডলারের বিজনেস হাতছাড়া হয়ে গেল।
সানাউল্লাহ বললেন, আচারের নতুন কী প্রজেক্ট হাতে নিয়েছ?
আবু করিম বললেন, নেশাখোরদের জন্যে তামাকের একটা আচার বানিয়েছি। যারা জর্দা, সিগারেট, গাঁজা এইসব খায় তাদের জন্যে। এই জিনিস বাজারে ছাড়া ঠিক হবে না। দেখা যাবে এই আচার খেয়েই সবাই নেশা করছে।
সানাউল্লাহ বললেন, আচারটা বানিয়েছ কী দিয়ে?
আবু করিম বললেন, তামাক পাতা, চা পাতা, গাঁজা গাছের পাতার সঙ্গে ভিনিগার এবং সৈন্ধব লবণের প্রিপারেশন। এর সঙ্গে সমপরিমাণ কাগজি লেবুর রস দিয়েছি। একটা আস্ত বোম্বাই মরিচ ছেড়ে দিয়েছি।