মার কথায় তেঁতুল গাছ আর কাটা হয় নি।
শাকচুন্নিটা এখনো আছে?
থাকতে পারে। রাজনীতিতে ঢোকার পরে দেশের বাড়িতে আর যাওয়া হয়। জনগণের সেবা করতে গিয়ে নিজের বাড়িঘর ভুলে গেছি, তার মূল্যায়ন কই! খামাখা তিন মাস জেল খাটলাম। পত্রিকায় ছবি দিয়ে নিউজ করল–সন্ত্রাসী গ্রেফতার। দেশের জন্যে কিছু করাই হয়েছে সমস্যা। আচ্ছা আজকে যাই।
হামিদ চলে যাওয়ার দুঘণ্টার মধ্যে জাবিন টেলিফোন করল। তিনি তখন নিউ মার্কেটে বইয়ের দোকানে। লাইব্রেরির মালিক কাদের খান, সানাউল্লাহর জন্যে সিঙ্গাড়া আনিয়েছেন। মিনি সিঙ্গাড়া। একসঙ্গে দুটা তিনটা মুখে দেয়া যায়। এমন সময় জাবিনের টেলিফোন। জাবিন মহা উত্তেজিত।
বাবা, তুমি হামিদ আংকেলকে ব্যাটারি খাইয়ে দিয়েছ?
সানাউল্লাহ বললেন, আমি কেন ব্যাটারি খাওয়াব? উনি নিজের আগ্রহে খেয়েছেন। তাও পুরোটা খান নাই। অর্ধেকের মতো খেয়েছেন। তিনটা সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। পরে খাবেন।
বাবা, কী হচ্ছে আমি কি জানতে পারি?
তেমন কিছু হচ্ছে না রে মা, ব্যাটারি খাওয়া হচ্ছে। কেউ যদি আগ্রহ করে ব্যাটারি খেতে চায় সেখানে আমাদের কী বলার আছে? কথায় আছে আপরুচি খানা।
বাবা, তুমি কি খবর পেয়েছ ব্যাটারি খেয়ে এখন তার কী অবস্থা? প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা। তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। কথাবার্তাও বলছেন পাগলের মতো। ডাক্তার সাহেব হামিদ আংকেলকে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনার নামটা বলুন। হামিদ আংকেল বললেন, নিজের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে আমার বাবার নাম আদম। আর মার নাম হাওয়া। এই দুজনের নাম মনে আছে।
সানাউল্লাহ বললেন, মা, এই বিষয়ে পরে কথা হবে। আমি সিঙ্গাড়া খাচ্ছি। সিঙ্গাড়া মুখে নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে। খাদ্য মুখে নিয়ে কথা বলা অত্যন্ত রিস্ক। শ্বাসনালিতে খাদ্য ঢুকে যেতে পারে।
সানাউল্লাহ মোবাইল ফোন পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন। কাদের খান কান। খাড়া করে সানাউল্লাহর কথাবার্তা শুনছিলেন। তিনি বললেন, স্যার যদি কিছু মনে না করেন ব্যাটারি খাওয়ার একটা প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। কে ব্যাটারি খেয়েছে?
সানাউল্লাহ বললেন, আমার খালাতো ভাই। ব্যাটারি তার স্টোমাক নিতে পারে নি। কারণ ব্যাটারি মূলত ভূতদের খাদ্য। হামড়ু ড়ুমরু আগ্রহ করে খায়।
আপনার বাড়িতে যে দুটা ভূতের বাচ্চা থাকে তাদের কথা বলছেন?
হুঁ।
ওরা এখনো আছে?
যাবে কোথায়? বাবা মা ফেরার।
কাদের খান বললেন, স্যার, আপনাকে একটা ছোট্ট অনুরোধ করব। ভূতের বাচ্চা দুটাকে নিয়ে একটা বই লিখে ফেলেন। শিশুতোষ রচনা। আমরা ছাপব। ধ্রুব এষকে দিয়ে কভার করাব। ভেতরে চার কালারের ইলাসট্রেশন থাকবে। বাচ্চারা ভূত-প্রেতের গল্প খুব পছন্দ করে।
সানাউল্লাহ বললেন, ভূত নিয়ে একটা বই লেখার আমার পরিকল্পনা আছে। তবে গল্প-উপন্যাস না। গবেষণামূলক। যেমন ভূতদের সমাজ ব্যবস্থা। তাদের রাজনীতি। তাদের খাদ্যাভ্যাস। শ্রেণীভেদ।
কাজ কি শুরু করেছেন?
চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। শিগগিরই লেখা ধরব। ভূত সম্পর্কে আমাদের অনেক অজ্ঞতা আছে, সেইসব দূর করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করি পেত্নী এবং শাকচুন্নি এই দুয়ের মধ্যে তফাত কী? আপনি কি বলতে পারবেন?
জি-না।
সানাউল্লাহ বললেন, একজনের খোঁজ পেয়েছি— থিয়সফিষ্ট। প্রেতচর্চা করেন। ভালো মিডিয়াম। চক্রে বসে ভূতদের ডাকলেই তারা চলে আসে। তার সঙ্গে অনেক ঝামেলা করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছি। পরশু সন্ধ্যায় যাব।
কাদের খান বললেন, স্যার, আমাকে কি সঙ্গে নিয়ে যাবেন? আমার খুব শখ।
সানাউল্লাহ বললেন, আপনি যেতে চাইলে অবশ্যই যাবেন।
কাদের খান বললেন, স্যার, আপনি যে ভূতের বইটা লিখবেন তার নাম ঠিক করেছেন?
হুঁ। ভূতের ক খ গ।
নামটা বদলাতে হবে স্যার। তসলিমা নাসরিন এই ধরনের নাম ব্যবহার করে নানান কেচ্ছা কাহিনী বলেছেন। ভূতের ক খ গ শুনলে সবাই ভাববে ভূতদের প্রেমলীলা।
ভূতবৃত্তান্ত নামটা কেমন?
কঠিন নাম। আরো সহজ কিছু দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথের গান ভেঙে একটা নাম দিলে কেমন হয় স্যার? রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে—দিনের শেষে ঘুমের দেশে। আপনি বইটার নাম দিলেন— দিনের শেষে ভূতের দেশে।
সানাউল্লাহ বললেন, নামটা খারাপ না।
কাদের খান বললেন, স্যার, আপনার এই বই আমরা ছাপব। আপনি আর কাউকে দিতে পারবেন না। পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছি স্যার। রয়েলটির অ্যাডভান্স। আপনি না বললে শুনব না।
সানাউল্লাহ রয়েলটির পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটা ভিসিডি প্লেয়ার কিনলেন। সন্ধ্যার পর তেমন কিছু করার থাকে না। হম ডমরুকে নিয়ে হিন্দি ছবি দেখা যেতে পারে।
শুধু মানুষের বিনোদন দেখলে চলবে না। ভূতের বিনোদনের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। পশুপাখি, কীটপতঙ্গ সবার বিনোদন দরকার।
ভিসিডি প্লেয়ারের সঙ্গে তিনি মেড ইন আমেরিকার দুটা A সাইজ ব্যাটারিও কিনলেন। হামিদকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া দরকার। খালি হাতে যাওয়া ঠিক না। আগে রোগী দেখতে হরলিক্সের কৌটা নিয়ে যাবার নিয়ম ছিল। কলেজে পড়ার সময় তার একবার জন্ডিস হয়েছিল। তার আত্মীয়স্বজনরা সবাই হরলিক্সের কৌটা নিয়ে রোগী দেখতে এসেছিলেন। সেবার সর্বমোট উনিশটা হরলিক্সের কৌটা পেয়েছিলেন।
এখন বাংলাদেশ বদলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। এখন আর হরলিক্সের কৌটা নিয়ে যাওয়া যায় না। ব্যাটারি নিয়ে যাওয়া যায়। মেড ইন আমেরিকা ব্যাটারির প্রতি হামিদ যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। ব্যাটারি খাওয়া না-খাওয়া পরের কথা। ব্যাটারি পেয়ে সে খুশি হবে তা ধরে নেয়া যায়।