মাওয়া গম্ভীর গলায় বলল, কম্বল বিকেলের মধ্যেই পাবেন।
মাথার ওপরে এই বাতি—এটা কি নিভিয়ে রাখা যায়?
এই বাতি রাত নটার পর থেকে জ্বলবে না।
মাওয়া খাবারের প্যাকেট টেবিলে সাজিয়ে রাখল। ফ্রাঙ্কে কফিও আছে। ভালো কফি। খাবারগুলি যত্ন করে তৈরি করা। সৈন্য বা কয়েদিদের সাধারণ খাবার নয়।
মাওয়া, এই খাবারগুলি কে রান্না করে?
আমার স্ত্রী ও বড় মেয়ে।
চমৎকার রান্না। তাদের আমার ধন্যবাদ দিও।
ধন্যবাদ দেওয়া যাবে না। কারণ, আপনি যে এখানে আছেন, এটা তাদের জানানো যাবে না।
যখন আমি এখানে থাকব না, কিংবা এই পৃথিবীতেই থাকব না, তখন দিও। তাদের বলবে, আমি সারা জীবন খাওয়াদাওয়া নিয়ে কষ্ট করেছি, কিন্তু জীবনের শেষ দিনগুলিতে খুব ভালো খানাপিনা করেছি।
আমি বলব।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মাওয়া ওঠার উপক্রম করল। নিশো বললেন, বাইরের কী খবর? আমার মৃত্যুসংবাদ দেশবাসী কীভাবে নিয়েছে?
আমি জানি না কীভাবে নিয়েছে, বাইরের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ফোর্টনক শহর থেকে অনেক দূরে।
তা অবশ্যি দূরে। তোমার স্ত্রী, কন্যা? ওরা খবরটা কীভাবে নিয়েছে?
জানি না, মিঃ নিশো। আমি আমার স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আলাপ করি না। রাজনীতি মেয়েদের বিষয় নয়।
রাজনীতি কোথায়, তুমি কথা বলবে একটি মানুষের মৃত্যু নিয়ে!
আমি কথা কম বলি।
আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে কথা কম বলাটাই বড় মানবিক গুণ বলে ধরা হয়। অথচ আমি সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছি একটি দেশের, যেখানে আমরা সবাই ইচ্ছেমতো বকবক করতে পারব।
মাওয়া আর দাঁড়াল না। নিশো গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। মাওয়া কম্বল নিয়ে এল না। দু শ পাওয়ারের বাতি জ্বলতেই থাকল।
জেনারেল সিমসন
জেনারেল সিমসন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ফকনারের কাছ থেকে পাওয়া এ জবাব তিনি যেন আশা করেন নি। তিনি চশমা খুলে চশমার কাচ পরিষ্কার করলেন। টেবিলে রাখা পানির গ্লাসে ছোট্ট একটি চুমুক দিয় মৃদুস্বরে বললেন, আপনি সত্যিসত্যি মিশনটির ব্যাপারে আগ্রহী নন?
না।
আপনি কি সমস্ত কাগজপত্র ভালোমতো দেখেছেন?
দেখেছি বলেই বলছি, এটা অসম্ভব। ফোর্টনকে আক্রমণ করা মাত্রই জেনারেল ডোফার প্রেসিডেন্ট ব্যাটালিয়ানে খবর পৌঁছবে। এরা হেলিকপ্টার নিয়ে দশ মিনিটের ভেতরে চলে আসতে পারবে। স্থলপথে আসতে ওদের লাগবে খুব বেশি হলে দেড় ঘণ্টা। ওদের রুখতে আমার দরকার পুরোপুরি একটা সৈন্যবাহিনী। আর্টিলারি সাপোর্ট।
জেনারেল সিমসন মৃদুস্বরে বললেন, দেড় ঘণ্টার মধ্যেই যাদি কাজ সেরে আপনারা আকাশে উড়তে পারেন, তাহলে কেমন হয়?
কীভাবে উড়ব?
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তৈরি একটা পুরোনো ধরনের রানওয়ে আছে। সেখানে দেড় ঘন্টার ভেতর একটা বিমান পাঠাতে পারি।
রানওয়ে ফোর্টনক থেকে কত দূরে?
পঞ্চাশ মাইলের কম। সত্তর কিলোমিটার।
সম্ভব নয়। ডোফা নির্বোধ নয়। প্রথমেই সে রানওয়ে দখল করবার জন্যে সৈন্য পাঠাবে।
জেনারেল সিমসন মৃদুস্বরে বললেন, আপনাকে আমি যথেষ্ট সাহসী ভেবেছিলাম।
আমি সাহসী। সাহসী মানেই কিন্তু নির্বোধ নয়। আচ্ছা, আমি উঠি।
একটু বসুন। এক মিনিট।
ফকনার বসল। বিরক্ত ভঙ্গিতে সিগারেট ধরাল।
সিমসন কিছুই বলছেন না। শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। এক মিনিট অপেক্ষা করতে বলার কারণ ধরা যাচ্ছে না।
এক মিনিট হয়ে গেছে মিঃ সিমসন। সিমসন নড়েচড়ে বসলেন। ভারি গলায় বললেন, মিশনটি আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। আপনি না করলে অন্য কাউকে দিয়ে করাতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, আপনি এটি পরিচালনা করুন। আপনার যত রকম সাহায্য-সহযোগিতা দরকার, আপনি সব পাবেন।
আমরা আপনাকে এবং আপনার সঙ্গী-সাথীকে রাতের বেলা ফোর্টনকের পাঁচ মাইলের ভেতর নামিয়ে দেব এবং বেরিয়ে আসবার জন্যে পুরানো রানওয়েতে বিমান থাকবে। যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা ছাড়াও আপনার প্রাপ্য টাকার পুরোটাই আপনাকে অগ্রিম দেওয়া হবে। টাকার পরিমাণ শুনলে আপনার ভালো লাগবে।
কত টাকা?
এক মিলিয়ন ইউএস ডলার। অনেক টাকা!
এক মিলিয়ন ইউএস ডলার তো আমি একাই নেব। আমার সঙ্গী-সাথীরা কী পাবে?
কজন থাকবে আপনার দলে?
তিন জন অফিসার, পাঁচ জন এনসিও এবং পঞ্চাশ জন কমান্ডো।
এদের জন্যে কত চান আপনি?
দু মিলিয়ন ইউএস ডলার।
আমি রাজি আছি।
আমি যে-তিন জন অফিসার নেব, তাদের একজনের নাম জনাথন। এন্ড্রু জনাথন। সে শিকাগোতে আত্মগোপন করে আছে। আপনারা তাকে খুঁজে বের করবেন এবং আমার কাছে পৌঁছে দেবেন।
সিমসন তাকিয়ে রইলেন, কিছু বললেন না।
আমার দ্বিতীয় অফিসার ইউটার জেলে বন্দি। তাকেও আমার কাছে পৌঁছে দেবেন।
তা কী করে সম্ভব! এক জন কয়েদিকে বের করে আপনার সঙ্গে দেওয়া চলে না। আপনি অদ্ভুত কথা বলছেন!
আমি আমার শর্তগুলির কথা বলছি। তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, আমার দলের ট্রেনিংয়ের জন্য প্রথম শ্রেণীর সুযোগ-সুবিধা আছে, এমন একটি জায়গা দরকার। গামাল হাসিম নামে আরো এক জন ব্যবসায়ীকে আমার প্রয়োজন। এবং…..
আপনার সব প্রয়োজনের কথাই আমি শুনতে রাজি আছি কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদিকে এর জন্যে বের করে আনা যায় না।
সিআইএ অনেক কিছু করতে পারে বলে শুনেছি।
আপনি ভুল শুনেছেন।
মোরান্ডায় আমি আমার দলবল নিয়ে এখনি নামতে পারি, যখন আমি জানব ঐ কয়েদি আমর পাশে আছে।
তার নাম কি?
বেন ওয়াটসন।