সেটা নির্ভর করে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে তার ওপর এবং মিশনটি কী ধরনের তার ওপর।
জুলিয়াস নিশোকে ফোর্টনক থেকে বের করে আনা।
মৃত একজন মানুষকে বের করে আনার প্রয়োজনটি ধরতে পারলাম না।
জুলিয়াস নিশো বেঁচে আছেন।
ফকনার সিগারেট ধরিয়ে দীর্ঘ টান দিয়ে শুকনো গলায় বলল, মিঃ হপার, আপনি কে?
আমি সিআইএ-র সঙ্গে আছি।
আমার সঙ্গে কী ধরনের কথা বলার দায়িত আপনাকে দেওয়া হয়েছে?
মিশন সম্পর্কে যদি আপনি উৎসাহী হন, তাহলে আপনাকে শিকাগোতে নিয়ে যাবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কখন যেতে চান?
আমরা এখনি রওনা হতে পারি।
যাবেন কিসে?
আমি সেনাবাহিনীর একটি বিমান নিয়ে এসেছি। একটা টু-সীটার।
আপনি নিজেই চালাবেন?
হ্যাঁ। আমি একজন বৈমানিক। এক সময় বিমানবাহিনীতে ছিলাম।
বিষয়টি খুব জরুরি মনে হচ্ছে?
খুবই জরুরি।
টাকার ব্যাপারে সিআইএ কৃপণতা করবে না বলে আশা করতে পারি।
টাকা কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করি। মিঃ ফকনার, আপনি তৈরি হয়ে নিন।
আমি তৈরিই আছি। শুধু একটা নোট লিখে দরজায় রেখে যাব।
লিজা ব্রাউন পিজার প্যাকেট নিয়ে এসে দরজায় আটকানো নোটটি পড়ল।
লিজা, তুমি খাবারের প্যাকেটটি দরজার বাইরে রেখে যাও। দেখা হল না বলে দুঃখিত। তারপর বল, তুমি কেমন আছ? ফকনার।
পুনশ্চঃ খাবারের বিল আমি এসে মিটিয়ে দেব।
লিজা ব্রাউন বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটির বয়স খুবই অল্প। সাদামাঠা চেহারা। মাথার চুল ছেলেদের মত কাটা বলেই হয়তো সমস্ত চেহারায় একধরনের মায়াকাড়া ভাব এসেছে। সে কি কিছুটা হতাশ হয়েছে? হয়তো-বা। অল্পবয়সী মেয়েরা সহজেই হতাশ হয়।
ফকনার ক্রমেই বিরক্ত হচ্ছিল
ফকনার ক্রমেই বিরক্ত হচ্ছিল।
তাকে এক ঘন্টার ওপর এন্ট্রি-রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এন্ট্রি-রুমটি ছোট। আলো-বাতাস নেই। বসার জন্যে চামড়ার গদিওয়ালা চেয়ারগুলি নোংরা। সমস্ত মেঝেতে সিগারেটের ছাই। এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের এন্ট্রি রুমের এই অবস্থা কেন? নাকি ইচ্ছা করেই এ-রকম রাখা হয়েছে মনের ওপর চাপ ফেলবার জন্যে।
দেড় ঘন্টার মাথায় তাকে জানানো হল, জেনারেল সিমসন ব্যস্ত, তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ডাক পড়বে। তাকে একজন কে এসে এক কাপ কফি দিয়ে গেল। ইন্সট্যান্ট কফি—এমন একটা গন্ধ, নাকে গেলেই বমি-বমি ভাব হয়।
জেনারেল সিমসনের অফিসের দরজা খুলল। অল্পবয়সী একটি তরুণ (সম্ভবত জেনারেলের পিএ) এসে বলল, মিঃ ফকনার, আপনি আসুন। সে ফকনারকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।
প্ৰকাণ্ড সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপাশে যে-ছোটখাটো মানুষটি বসে আছেন, তাঁকে ফকনারের মোটেই পছন্দ হল না। জেনারেল সিমসনের বয়স ষাটের কোঠায়। শরীর অশক্ত। মাথায় একগাছিও চুল নেই। মাথা নিচু করে বসে-থাকা মানুষটিকে দেখেই মনে হয় অনেক ধরনের রোগ-ব্যাধি এঁকে ধরে আছে। পিঙ্গল বর্ণের চোখ। তাকানোর ভঙ্গিতে একধরনের অবহেলা আছে, যা অন্যদের মনে হীনমন্য দেয়। জেনারেল সিমসন ভারি স্বরে বললেন, আপনিই ফকনার। কর্নেল ফকনার?
হ্যাঁ।
বসুন।
ফকনার বসল। সে আশা করেছিল জেনারেল সিমসন উঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করবেন। তিনি তা করলেন না, যেন ফকনার একজন ছোট পদের অধস্তন কর্মচারী। তার সঙ্গে বাড়তি সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজন নেই।
জেনারেল সিমস কিছুক্ষণের জন্যে একটা ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। টেলিফোনে কাকে যেন কী-সব বললেন। এও একধরনের চাল। চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো—তুমি অত্যন্ত নগণ্য ব্যক্তি। বসে থাক চুপচাপ। আমার কাজ শেষ হোক, তারপর দেখা যাবে।
সেনাবাহিনী থেকে আপনাকে ডিসচার্জ করা হয়েছিল?
হ্যাঁ।
কেন?
ফকনার ঠাণ্ডা স্বরে বলল, কেন করা হয়েছিল তা নিশ্চয়ই আপনি জানেন। যেপ্রশ্নের উত্তর জানেন, তার উত্তর আবার শোনাবার কারণ দেখি না।
ফকনার সিগারেট ধরাল। সে তার বিরক্তি চেপে রাখতে পারছিল না। জেনারেল সিমসন বললেন, আমি নন-স্মকার, তামাকের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। দয়া করে। সিগারেটটি ফেলে দিন।
আমি বরং পাশের ঘরে গিয়ে সিগারেট শেষ করে আসি। ইতোমধ্যে আপনার যা বলবার ঠিকঠাক করে রাখুন। লম্বা ধরনের আলাপ-পরিচয় আমার পছন্দ নয়।
মিঃ ফকনার, লম্বা আলাপ আমারও পছন্দ নয়। আপনি সিগারেট নিয়েই বসুন। আপনাকে কী জন্যে ডাকা হয়েছে আপনি তা জানেন, আশা করতে পারি।
কিছু জানি।
জুলিয়াস নিশোকে ফোর্টনকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁকে এ-মাসের ২৬ কিংবা ২৭ তারিখে হত্যা করা হবে।
তার আগে নয় কেন?
এ-মাস হচ্ছে জেনারেল ডোফার জন্মমাস। জন্মমাসে আফ্রিকানরা হত্যার মতো বড় অপরাধ করে না, ওদের অনেক রকম কুসংস্কার আছে।
মাস তো শেষ হবে ত্রিশ তারিখে। ২৬/২৭ বলছেন কেন?
চান্দ্রমাসের কথা বলছি। আফ্রিকানরা চান্দ্রমাস মেনে চলে।
আপনি নিশ্চিত যে, ২৬/২৭ তারিখের আগে নিশোকে হত্যা করা হবে না?
নব্বই ভাগ নিশ্চিত। দশ ভাগ আনসারটিনিটি সবসময়ই থাকে। এখন আপনিই বলুন, জুলিয়াস নিশোকে এই সময়ের ভেতর কি উদ্ধার করা সম্ভব?
জগতে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
এটা একটা ছেলেমানুষি কথা, পৃথিবীতে অনেক কিছুই অসম্ভব। আমার সঙ্গে ভাবাবেগে তাড়িত হয়ে কোনো কথা বলবেন না। আপনি আমাকে বলুন, এই মিশন গ্রহণ করতে আপনি রাজি আছেন?
ফকনার লোকটিকে পছন্দ করতে শুরু করল। এ কাজের লোক। কথাবার্তার ধরন দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। এবং এর সঙ্গে কথাবার্তা হওয়া উচিত সরাসরি। কথার মারপ্যাচ না-দেখালেও চলবে।