হ্যাঁ, সত্যি।
ফকনার মারা পড়েছে?
হ্যাঁ, পড়েছে।
আর নিশো? নিশোর কী অবস্থা?
মারা গেছে স্যার।
তোমার গলা এমন শুকনো শোনাচ্ছে কেন?
আমি আহত। হাঁটুতে গুলি লেগেছে। হাতের আঙুল উড়ে গেছে।
শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলাম। তবে দেশের জন্যে সবাইকে কিছু-না-কিছু ত্যাগ করতে হয়। তুমি কয়েকটা আঙুল ত্যাগ করলে।
জ্বি স্যার।
আমাদের দিকের হতাহতের সংখ্যা কেমন?
অনেক।
তাতে কোন অসুবিধা নেই। নিহতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হবে। বিরাট ক্ষতিপূরণ। তাদের সবাইকে জাতীয় বীর ঘোষণা করা হবে।
ইনফ্যানট্রি লেফটেন্যান্ট নুখতা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়। সে বীরের মতো যুদ্ধ করেছে।
শুনে সুখী হলাম। শোন, নিশোর মৃতদেহ কি লুকানো হয়েছে?
হ্যাঁ।
ভালো, খুব ভালো। অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। দেশের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব তোমার জন্যে ব্যবস্থা হবে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। আপনার পক্ষে কি এখানে আসা সম্ভব হবে? সৈন্যরা আপনাকে দেখতে পেলে অত্যন্ত আনন্দিত হবে। তারা বীরের মতো যুদ্ধ করেছে।
আমি আসব। সৈন্যরা আমার সন্তানের মতো। আমি অবশ্যই আসব। সামরিক হেলিকপ্টারে করে আসব।
কখন রওনা হবেন স্যার?
ধর দশ মিনিট। দশ মিনিটের মাথায় রওনা হচ্ছি।
জেনারেল ডোফা রিসিভার নামিয়ে পাশে দাঁড়ানো মিলিটারি এ্যাটাচির চোখে চোখ রেখে হাসলেন। মুহূর্তের মধ্যেই হাসি সামলে নিয়ে মৃদু গলায় বললেন, মাওয়া মিথ্যা কথা বলছে। সাজানো কথা বলছে।
মিলিটারি এ্যাটাচি অবাক হয়ে বলল, আমার কাছে কিন্তু স্যার সাজানো কথা বলে মনে হয় নি।
তোমার বুদ্ধি একটি গরিলার বুদ্ধির চেয়ে খুব বেশি নয় বলেই কিছু বুঝতে পারছ না। ও ধরা পড়েছে ফকনারের হাতে। ব্যাটা যা বলতে বলছে, তাই সে বলছে। বানরের মতো ভীরু একদল মানুষ নিয়ে আমার সৈন্যবাহিনী।
মিলিটারি এ্যাটাচি এক বার ভাবল জিজ্ঞেস করে—স্যার, কি করে বুঝলেন মাওয়া মিথ্যা কথা বলছেন? কিন্তু জিজ্ঞেস করার মতো সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারল না। সে আসলেই ভীরু।
রবিনসন এগিয়ে গেল ফকনারের দিকে
ঘড়িতে বাজছে এগারটা একুশ। রবিনসন এগিয়ে গেল ফকনারের দিকে। নরম গলায় বলল, ফকনার, আমি কি তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে পারি?
নিশ্চয়ই পার।
তোমার পরিকল্পনা আমার পছন্দ হয় নি।
জানি। এবং পছন্দ না-হবার কারণও জানি। আমার পরিকল্পনা বেশি সহজ। সহজ বলেই পছন্দ হয় নি। জটিল কিছু হলে তোমার পছন্দ হত।
আমাদের সঙ্গেই আছে।
আমরা তাকে ফেরত চাই।
ভালো কথা, ফেরত দেওয়া হবে। তার পরিবর্তে আমরা কি পাব?
কি চাও?
একটা বিমান, যা আমাদের নিয়ে যাবে। আমরা কোনো রকম ঝামেলা চাই না।
কেন চাও না তা বোঝার মতো বুদ্ধি আমাদের আছে।
তোমরা বিমান পাঠাবে এখানকার এয়ারপোর্টে। আমরা প্রথমে পরীক্ষা করে দেখব সব ঠিক আছে কি না। তোমাদের দিক থেকে দুজনকে আমরা হোস্টেজ হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাব। দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যেমন ধর মিনিস্টার অব ডিফেন্স।
হোস্টেজ নিয়ে যাবার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।
হোষ্টেজ এই জন্যেই নিতে চাই, যাতে বিমান আকাশে ওঠার পর তোমরা কোনো ঝামেলা না-কর। এয়ার টু এয়ার-মিসাইল তোমাদের আছে বলে শুনেছি।
ঠিকই শুনেছ। তবে কথা কী জান, আমাদের সঙ্গে দরদান করার মতো অবস্থায় তোমরা নেই বলেই মনে হয়।
মিনিস্টার অব ডিফেন্সকে হোস্টেজ হিসেবে দিতে না-চাও, তোমাকে পেলেও চলবে। ব্রিগেডিয়ার মন্দ কি? নিশোকে তোমাদের প্রয়োজন, এইটুকু বুঝতে পারি।
আমাদের যতটা প্রয়োজন বলে তুমি ভাবছ, তত প্ৰয়োজন কিন্তু না। যাই হোক, এই ফ্রিকোয়েন্সিতেই পরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
কত পরে?
মনে হচ্ছে খুব ব্যস্ত?
হ্যাঁ, কিছুটা।
নিশো কেমন আছে?
এখনো টিকে আছে, বেশিক্ষণ থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এই মুহূর্তে তাকে দেখে মোটামুটি সুখী বলেই মনে হচ্ছে কবিতা লিখছে সম্ভবত।
ওপাশের কথা বন্ধ হয়ে গেল। ফকনার বেঁটে এলের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, আমি আরেক মগ কফি খাব, ব্যবস্থা কর। জনাথনকে আসতে বল।
জনাথন সঙ্গে-সঙ্গে উঠে এল। ফকনার জনাথনকে আড়ালে নিয়ে গেল। আড়ালের প্রয়োজনীয়তাটা জনাথন ঠিক বুঝতে পারছে না। ফকনার ফিসফাস করবার মতো লোক নয়।
ব্যাপার কি ফকনার?
ব্যাপার খুবই খারাপ। ওদের ভাবভঙ্গি অন্য রকম।
তোমার ধারণা, আমাদের আটকে ফেলতে চাইছে?
তাই।
কি করতে বল?
ফোর্টনকে অফিসারশ্রেণীর কেউ-কেউ নিশ্চয়ই জীবিত আছে?
থাকার তো কথা। কারাপ্রধান মাওয়া জীবিত আছে বলে আমার ধারণা।
জীবিত থাকলে অবশ্যি তাকে আনতে হবে। কত জন তোমার লাগবে? দশ জন।
পনের জন নিয়ে যাওয়া পছন্দমতো পনের জন। এবারকার অপারেশন আগের বারের মতো হবে না। যত দূর সম্ভব ক্ষতি করবার চেষ্টা করবে। ওদের যোগাযোগের কেন্দ্র পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে হবে।
তোমার পরিকল্পনাটা কি?
মজার পরিকল্পনা। জেনারেল ডোফাকে বড় ধরনের ধোঁকা দিতে চাই।
আমরা কি এখনি রওনা হয়ে পড়ব?
হ্যাঁ, রওনা হয়ে যাও। কতক্ষণ লাগবে বলে তোমার ধারণা?
ঘন্টা দুই।
তোমাকে এক ঘন্টা সময় দেওয়া হল। এক ঘন্টার ভেতর মাওয়াসহ কমপক্ষে তিন জনকে এখানে চাই। দরকার হলে আরো পাঁচ জন নিয়ে যাও।
তোমার পরিকল্পনাটা কী বল তো শুনি।
এতটা সময় নষ্ট করা কি উচিত হবে? মাত্র এক ঘন্টা সময় তোমাকে দেওয়া হয়েছে। এর দুমিনিট তুমি নষ্ট করে ফেলে।
এক ঘন্টা একুশ মিনিটের মাথায়
এক ঘন্টা একুশ মিনিটের মাথায় কারারক্ষী মাওয়া, এক জন আর্টিলারির ক্যাপ্টেন, দুজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এবং এক জন হাবিলদার মেজরকে নিয়ে জনাথন উপস্থিত হল। মাওয়া জীবিত হলেও গুরুতর আহত। গুলি লেগে তার বাঁ হাতের তিনটি আঙুল উড়ে গেছে। ডান পায়ের উরুতেও গুলি লেগেছে। তাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। বাকি অফিসাররা সুস্থ, তবে তারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। চোখে-মুখে দিশাহারার ভাব। অপ্রকৃতস্থ দৃষ্টি। চোখ রক্তবর্ণ।