যেমন ধর, আমরা জানি ফোর্টনকে বর্তমান সৈন্যসংখ্যা তিন শ পঞ্চাশ। গিয়ে দেখলাম রাতারাতি সেখানে এক ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তখন নিশ্চয়ই আমাদের তৈরি প্ল্যান খাটবে না। কী বল?
স্যার, সেরকম কোনো সম্ভাবনা কি আছে?
থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই আছে। কেন, ভয় লাগছে?
কমান্ডোদের মধ্যে বেশ কয়েক জন উঁচু গলায় হেসে উঠল। এমন করাটা জনাথনের সঙ্গে সম্ভব ছিল না।
প্রথম পরিকল্পনাটি এরকম—আমরা দক্ষিণ দিক থেকে আসব—এই যে দেখ, এইদিক থেকে। আট জন সেন্ট্রিকে শেষ করবার দায়িত্ব থাকবে আট জনের। ওপর। কাজটি করতে হবে বেয়োনেটের সাহায্যে, কোনক্রমেই গুলি করা যাবে না। ঠিক একই সময় দুজন চলে যাবে কারারক্ষী মাওয়ার বাসভবনে। মাওয়া থাকে এইখানে—দোতলায়। দোতলায় ওঠার সিঁড়ি আছে। সিঁড়িতে কোনো দরজা নেই। মাওয়ার বাড়ির সামনে থাকে এক জন সেন্ট্রি। তাকে সামলানোর পর এরা ঢুকবে মাওয়ার ঘরে এবং চাবি নিয়ে দ্রুত চলে আসবে এই জায়গায়। এখানে আছেন জুলিয়াস নিশো। তারা চাবি নিয়ে এখানে এসেই দেখবে, আমি সেলের সামনে অপেক্ষা করছি।
স্যার, যদি চাবি না-পাওয়া যায়?
না-পাওয়া গেলেও কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের সঙ্গে তালা ভাঙার যন্ত্র আছে। তবে আমি সেটা ব্যবহার করতে চাই না। এতে অনেক সময় নষ্ট হবে। আমাদের হাতে এত সময় নেই।
এবার আমি তোমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্যারাকেই সব সৈন্যরা থাকবে। খুব সম্ভব ঘুমিয়ে থাকবে। আমাদের পনের জনের একটি দলের ওপর দায়িত্ব থাকবে ব্যারাক সামলানোর।
কিভাবে সামলানো হবে?
ভালোভাবেই সামলাতে হবে। আমরা পেছনে কিছু রেখে যাব না। এখন পর্যন্ত পঁচিশ জন কমান্ডো ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের হাতে আছে আরো পঁচিশ জন। ঠিক না?
জ্বি স্যার।
এই পঁচিশ জনের দশ জন থাকবে রিজার্ভে। এদের দায়িত্ব হচ্ছে নিশোকে ঠিকমত বের করে নিয়ে আসা।
বাকি পনের জনের?
বাকি পনের জনের দায়িত্ব ফোটনকে নয়। তারা সরাসরি চলে যাবে এয়ারপোর্টে। সেটা তারা দখল করবে এবং আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে। তাদের দায়িত্বে থাকবে এমন একজন লোক, যার ওপর ভরসা করা চলে। বেন ওয়াটসন। বেন ওয়াটসন হচ্ছে একাই একটি ব্রিগেড। তোমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করবে, তারাই সেটা টের পাবে। ফোর্টনকের জন্যে যেমন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, এয়ারপোর্টের জন্যে সেরকম কিছু তৈরি করা হয় নি। তার কারণ, বেন ওয়াটসন কোনো রকম প্ল্যানিং-এ বিশ্বাসী নয়। একেক জনের কর্মপদ্ধতি একেক রকম।…….
এখন আমরা এ-জায়গা থেকে পঁচিশ গজ দূরে চলে যাব। সবাইকে আমি কাজ ভাগ করে দেব। আমি দেখাব, কী করে আসতে হবে, কোন দিক দিয়ে আসতে হবে। এবং আমরা চেষ্টা করব, কত কম সময়ে কাজটা শেষ করতে পারি সেটা দেখতে। তোমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের হাতে সময় খুব কম, এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট। এর মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করে প্লেনে উঠতে হবে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে চাও?
কাঁটাতারের বেড়া কে কাটবে?
রবিনসন হেসে ফেলল এবং হাসতে-হাসতে বলল, আমি। ঐ কাজটি আমি খুব ভালো করতে পারি। এস, এখন শুরু করা যাক। প্রথম প্ল্যানটি আমরা এখন দেখব। স্কোয়াড, অ্যাটেনশন। টু দা লেফট, কুইক মার্চ।
মোরান্ডা
মোরান্ডা।
২৪শে ডিসেম্বর। বুধবার। সকাল ৯টা।
জেনারেল ডোফা গার্ড রেজিমেন্ট পরিদর্শনে এসেছেন। তাঁর মুখ অস্বাভাবিক গম্ভীর। তাঁর সঙ্গী-সাথীরা এর কারণ বুঝতে পারছিল না। তারা শঙ্কিত বোধ করছিল।
জেনারেল ডোফা পরিদর্শনের কাজ সারলেন। প্রথাগত বক্তৃতা দিলেন-সৈন্যদের কাজ হচ্ছে দেশের আদর্শকে সামনে রাখা। দেশের প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিদর্শনের শেষে চা-চক্রের ব্যবস্থা ছিল। ডোফা চা-চক্রে রাজি হলেন না। আগের চেয়েও গম্ভীর মুখে প্রেসিডেন্ট হাউসের দিকে রওনা হলেন।
আজ ক্রিসমাস ইভ। ক্রিসমাস ইভের প্রাক্কালে তিনি সবসময়ই একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণ প্রচার হয় বেতার ও টিভিতে। আজকের ভাষণটি তৈরি হয়েছে এবং তাঁর কাছে কপি এসেছে। ভাষণ তাঁর পছন্দ হয় নি। বক্তৃতা-লেখককে কিছু কড়া-কড়া কথা শুনিয়েছিলেন। নতুন একটি ভাষণ তৈরি করে আনার কথা।
নতুন ভাষণটি আগেরটির চেয়েও বাজে হয়েছে। ডোফা ধমকে উঠলেন, এক জিনিসই তো আপনি লিখে এনেছেন। দু-একটা শব্দ এদিক-ওদিক হয়েছে। এর বেশি কিছুই তো করা হয় নি। নতুন কিছু লিখুন।
বক্তৃতা-লেখক বিনীতভাবে বললেন, কি লিখব, যদি একটু বলে দেন।
জুলিয়াস নিশোর কথা তো বক্তৃতায় কিছুই নেই। তাঁর কথা থাকা উচিত। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে কি কি করা হবে তা বলা দরকার।
কি কি করবেন, স্যার?
সংগ্রহশালা করা যায়। এই জাতীয় কিছু লিখে আনুন, সব কি আমিই বলে দেব নাকি? মাউ উপজাতিদের সম্বন্ধেও কিছু লেখা উচিত। যান, নতুন করে লিখুন। আমার প্রতিটি বক্তৃতায় একই জিনিস থাকে।
বিকেলে তিনি গেলেন প্রেসিডেন্ট রেজিমেন্ট পরিদর্শনে। এটা তাঁর হঠাৎ পরিদর্শন। আগে কিছুই ঠিক করা ছিল না। তাঁর মুখ আগের মতোই গম্ভীর। প্রেসিডেন্ট রেজিমেন্টের জেনারেল র্যাবি এর কারণ বুঝতে পারলেন না। কোথাও কোনো ঝামেলা হয়েছে কি? হবার তো কথা নয়। সবকিছু বেশ স্বাভাবিক। প্রেসিডেন্ট কি মাউ উপজাতিদের নিয়ে চিন্তিতঃ চিন্তিত হবার মতো তেমন কোনো কারণ কি সত্যি-সত্যি আছে?