তাই দিয়েছিলাম, না?
হা। আজও কি সেরকম হবে?
ফকনার হেসে ফেলল, তোমার বুঝি খুব ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে ইচ্ছা করে? হ্যাঁ। আমার ইচ্ছা করে ফারপোতে ডিনার খেতে। সেখানে ডিনারের মাঝখানে অর্কেস্ট্রা বাজারে আমার প্রিয় গান-ব্লু দানিয়ুব।
আর কি?
এই, আর কিছু না।
তুমি তৈরি থাক, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।
ফকনার ফারপোতে দুটি সিট রিজার্ভ করল। অর্কেস্ট্রাকে বলল, র দানিয়ুব-এই গানটি বাজাতে হবে। ফ্লাওয়ার শপে টেলিফোন করে বলল, আগামী এক মাস প্রতি দিন দুটি করে লাল গোলাপ লিজা ব্রাউনের নামে পাঠাতে হবে। কে পাঠাচ্ছে, সেসব কিছুই বলা যাবে না। ঠিকানা হচ্ছে ফার্গো পিজা পার্লার নর্থ অ্যাভি। লিজার বাড়ির ঠিকানা জানা থাকলে ভালো হত। ফকনারের ঠিকানা জানা নেই।
ট্রেনিং ক্যাম্প
ট্রেনিং ক্যাম্প।
লরেনকো মারকুইস।
মোজাম্বিক, আফ্রিকা।
১৫ই ডিসেম্বর। মঙ্গলবার।
ভোর ৫-৩০।
বাহাত্তর জন সদস্য খোলা মাঠে অপেক্ষা করছে। সূর্য ওঠার অপেক্ষা। হার্ডি ফকনার তাদের প্রথম কিছু বলবে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনজাতীয় কিছু হয়তো। দলের সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা, তারা নিজেদের মধ্যে চাপাস্বরে কথাবার্তা বলছে। এদের দাঁড় করানো হয়েছে পাঁচটি ভাগে। বার জনের একটি রিজার্ভ দলও আছে।
তারা দাঁড়িয়ে আছে প্ৰকাণ্ড একটি ভোলা মাঠের মাঝামাঝি জায়গায়। মাঠটির চারপাশে ঘনবন। পূর্বদিক থেকে হাড়-কাঁপানো শীতল হাওয়া বইছে। সূর্য উঠে গেছে। বনের আড়ালে থাকায় তার আলো এসে এখনো পৌঁছচ্ছে না।
দলের সবাই নড়েচড়ে উঠল। তাঁবুর ভেতর থেকে হাতি ফকনার বের হয়ে। আসছে। তার মাথায় ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সাদা টুপি। রঙিন একটি হাওয়াই শার্ট। গলায় লাল রঙের স্কার্ফজাতীয় কিছু।
কি, কেমন আছ তোমরা?
কেউ কোনো জবাব দিল না।
শীতের প্রকোপটা মনে হয় একটু বেশি। আফ্রিকা একটি অদ্ভুত জায়গা। দিনের বেলা প্রচন্ড গরম, রাতে শীত, তাই না?
ঠিক বলেছেন স্যার।
আমি সবসময় ঠিকই বলি। এখন কাজের কথায় আসা যাক। তোমাদের ট্রেনিংয়ের দায়িত্বে যে-আছে, তার সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিই। তার নাম এড়ু জনাথন। জনাথন, একটু এদিকে এস। তোমার হাসিমুখ ওদের দেখিয়ে দাও।
জনাথন এগিয়ে এল। তার মুখ হাসিমুখ নয়।
এই ছোটখাটো মানুষটির নাম এন্ড্রু জনাথন। এর সম্পর্কে আমি কিছু বলব না। তোমরা নিজেরা আজ দিনের মধ্যেই তার সম্পর্কে জানবে। হা-হা-হা। আমার নিজের ট্রেনিংও এই লোকের কাছে। সে ছিল ইউএস ম্যারিনের RSM. এখানে যারা পুরোনো লোক আছে, তারা তাকে চিনবে। আমরা তাকে ডাকতাম ইয়েললা জাগুয়ার।
দলটির মধ্যে চাপা ধরনের কথাবার্তা বাড়তেই থাকল। ফকনার সেদিকে কোন কান না-দিয়ে নিজের মনেই বলতে লাগল, লাঞ্চের আগ পর্যন্ত হবে ড্ৰিল। লাঞ্চের পর অস্ত্রের ট্রেনিং। ঠিক আছে? এখন বাজছে—পাঁচটা চল্লিশ। এই ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ ভোর পাঁচটা চল্লিশে আমি তোমাদের তুলে দিচ্ছি জনাথনের হাতে। যথাসময়ে আমি আবার নিজের হাতে তোমাদের নেব। গুড লাক।
ফকনার এগিয়ে এসে প্রত্যেকের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করল, দু-একটা ছোটখাটো প্রশ্নও করল, যেমনকি, চোখ লাল কেন? রাতে ঘুম ভালো হয় নি? বাহ্, তোমার হাত দেখি মেয়েমানুষদের মতো নরম। এত নরম হাতে কি রাইফেল মানায়? তোমার হাতে থাকা উচিত ফুল। কি, ঠিক বললাম না?
ফকনারের সঙ্গে-সঙ্গে বেন ওয়াটসন এবং রবিনসনও মাঠ ছেড়ে গেল। সূর্য উঠে। এসেছে। এন্ড্রু জনাথন শুধু দাঁড়িয়ে আছে। জনাথনের কোমরে একটি লুগার টুয়েন্টিওয়ান পিস্তল। গায়ে গলাকাটা গেঞ্জি। গলায় ফুটবল রেফারিদের বাঁশি। সে বাঁশিতে তীব্র ফুঁ দিয়ে আচমকা সবাইকে চমকে দিল।
অ্যাটেনশন। তোমাদের অনেকেই দেখি দাড়ি-গোঁফ এবং লম্বা-লম্বা চুল। আজ দিনের মধ্যেই এ-সব বাড়তি ঝামেলা থেকে নিজেদের মুক্ত করবে। তোমাদের কারোকারো মুখে একটু বাঁকা হাসি দেখতে পাচ্ছি। কারণ, তোমরা নিজেদের খুব শক্ত মানুষ ভাবছ এবং চোখের সামনে এক জন ছোটখাটো মানুষকে দেখছ। তবে সুখের কথা, তোমরা অনেকেই আমাকে চেন। আগে পরিচয় হয়েছে। যারা চেন না তাদের বলছি, একজন মানুষকে একটি রাইফেলের চেয়েও বড় হবার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমরা কেউ যদি আমার কথার অবাধ্যতা কর, আমি তৎক্ষণাৎ গুলি করে পথের কুকুরের মতো মারব। আমার কোমরে যে-বস্তুটি দেখছ, তার নাম লুগার টুয়েন্টিওয়ান। মানুষের মৃত্যু আমাকে স্পর্শ করে না। তোমাদের চেয়েও অনেক অনেক ভালোমানুষকে আমি চোখের সামনে মরতে দেখেছি। কাজেই আমি যখন বলব, লাফ দাও লাফ দেবে। তোমার সামনে খাদ আছে কি নেই সে-সব দেখবে না। পরিষ্কার হয়েছে?
কেউ কোনো জবাব দিল না।
গুলি করে মারার কথাটা আমার মনে হয় অনেকেই বিশ্বাস করছ না। তোমাদের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, এখানে আইন-আদালত বলে কিছু নেই। আমি এড়ু জনাথন-আমিই আইন। আমার এই ছোট পিস্তলটি হচ্ছে আদালত।
সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।
কারোর কিছু বলার আছে?
কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
এস, এখন আমি দেখব, তোমাদের শারীরিক ফিটনেস কোন পর্যায়ে আছে। আমি বাঁশি বাজাবার সঙ্গে-সঙ্গে দশ কদম হাঁটবে, তারপর পঞ্চাশ কদম দৌড়াবে, তারপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়বে। সঙ্গে-সঙ্গে উঠেদাঁড়াবে। দৌড়াবে। আবার শোবে। যতক্ষণ-না আমি থামতে বলব, এটা চলতে থাকবে। শুরু করা যাক।