হ্যাঁ।
নাম কি তোমার?
রবার্ট।
হ্যালো রবার্ট।
হ্যালো।
আমি কি আসতে পারি তোমাদের বাগানে?
হ্যাঁ, পার।
আমার নাম ফকনার।
ফকনার ভেতরে ঢুকেই হাত বাড়িয়ে দিল—ছেলেটি এগিয়ে দিল তার ছোট্ট হাত।
এখন থেকে আমরা দুজন বন্ধু হলাম, কি বল রবার্ট?
হ্যাঁ, বন্ধু হলাম।
এখন বল, মিঃ রবিনসন তোমার কে হয়?
আমার দাদা।
আমি সেরকমই ভাবছিলাম। রবিনসন কি আছে?
আছে।
কী করছে?
ব্যায়াম করছে।
ফকনার স্বস্তিবোধ করল। ব্যায়াম-ট্যায়াম করছে যখন, তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে শরীরের প্রতি নজর আছে।
দাদাকে ডেকে দেব?
আমার এমন কিছু তাড়া নেই। আমি বরং তোমার সঙ্গেই কিছুক্ষণ গল্প করি। এবাড়িতে তোমরা দুজন ছাড়া আর কে থাকে?
আমরা দুজনই শুধু থাকি। তোমার বাবা-মা?
বাবা মারা গেছেন। মার বিয়ে হয়ে গেছে। থ্যাংকস্ গিভিংয়ের সময় আমি মার কাছে যাই।
বাহ, চমৎকার! খুব মজা হয়?
হয়। এবারে ক্রিসমাসে মা আমাদের এখানে আসবে। মার সঙ্গে আসবে পলিন।
পলিন কে?
পলিন আমার সৎ বোন। ভীষণ পাজি।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। আর খুব মিথ্যাবাদী।
বল কী।
হ্যাঁ।
যদি আসে, তাহলে তো বড্ড মুশকিল হবে।
না, হবে না। ও আমার খুব বন্ধু।
আচ্ছা।
পলিন খুব ভালো মেয়ে।
কিন্তু একটু আগে বলেছ, সে পাজি।
পাজি, কিন্তু ভালো মেয়ে। মাঝে-মাঝে পাজিরাও ভালো হয়।
ফকনার শব্দ করে হেসে উঠল। বহুদিন এমন প্রাণ খুলে সে হাসে নি।
হাসি থামতেই চোখে পড়ল, বারান্দায় গম্ভীর মুখে রবিনসন দাঁড়িয়ে আছে। রোগা লম্বা একটি মানুষ। চোখে স্টিল রিমের চশমা। সব চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক। ক্লাসে ফিলসফি বা সমাজতত্ত্ব পড়ান। ফকনার হাত নাড়ল। রবিনসন তার কোনো উত্তর দিল না। তার মুখ আরো গম্ভীর হয়ে গেল। যেন সে কিছু আশঙ্কা করছে।
কেমন আছ রবিনসন?
ভালো।
তোমার নাতির সঙ্গে কথা বলছিলাম, চমৎকার ছেলে! তোমার নাতি আছে, জানতাম না।
রবিনসন জবাব দিলো না।
এই বাড়িটি নিজের নাকি?
হ্যাঁ। নগদ পয়সায় কিনেছ, না মর্টগেজ্ড্।
মর্টগেজ্ড্।
এমন গম্ভীর হয়ে আছ কেন? মনে হচ্ছে আমাকে দেখে খুশি হও নি।
না, হই নি।
পুরনো দিনের বন্ধুত্বের খাতিরে একট সহজ হতে পার।
তোমার সঙ্গে আমার কখনো বন্ধুত্ব ছিল না।
চশমা নিয়েছ দেখছি!
বয়স হচ্ছে। ইন্দ্রিয় দুর্বল হচ্ছে।
হতাশাগ্রস্তর মতো কথা বলছ রবিনসন।
হতাশাগ্রস্তর মতো না। স্বাভাবিক একজন মানুষের মতই কথা বলছি।
শরীর কিন্তু ভালোই আছে। এবং তুমি হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না, সাদা চুলে তোমাকে চমৎকার দেখাচ্ছে। আইনস্টাইনের মতো লাগছে।
ধন্যবাদ। আমি কি নিরিবিলিতে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে পারি?
পার। ব্রেকফাস্ট করে আসি নি। ব্যবস্থা করা যাবে?
যাবে।
ফকনার শিস দিতে লাগল। সে শিসের ভেতর কোনো–একটা গানের সুর বাজাবার চেষ্টা করছে, এবং লক্ষ করছে রবার্টকে। ছেলেটি নিজের মনে কথা বলছে এবং একা-একা হাঁটছে। হাঁটছে দুর্বলভাবে, যেন পায়ে তেমন জোর নেই। পলিও নাকি? ফকনার সিগারেট ধরাল। সিগারেট খুব বেশি খাওয়া হচ্ছে। রবিনসন গিয়েছে। ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করতে। এত সময় লাগাচ্ছে কেন? রাজকীয় কোনো ব্যবস্থা নাকি?
কফির কাপে চুমুক দিয়ে ফকনার হালকা গলায় বলল, এই বাড়ি কত টাকায় মর্টগেজুড়?
ত্ৰিশ হাজার ডলার।
কত বছরে দিতে হবে?
কুড়ি বছর। তোমার রোজগারপাতি কি?
তেমন কিছু না।
কিছু করছ না?
করছি।
বছরে কত আসে?
খুবই সামান্য। বলার মতো কিছু না।
দুঃসময় যাচ্ছে?
রবিনসন জবাব দিল না। ফকনার তার স্বভাবসুলভ সহজ ভঙ্গিতে বলল, আমি তোমার জন্যে একটি চেক নিয়ে এসেছি। এ দিয়ে মর্টগেজের পুরো টাকাটা দেওয়া যাবে এবং কাজ শেষ হলে তুমি সমান পরিমাণ টাকা পাবে। বাকি জীবন হেসে-খেলে চলে যাবার কথা।
রবিনসন চুপ করে রইল।
কাজটা কী, জানতে চাও না?
না। কারণ আমি অবসর নিয়েছি। বাকি যে-কটা দিন বাঁচব, রবার্টের সঙ্গে থাকতে চাই।
বেঁচে থাকার জন্যেও তো টাকার প্রয়োজন। তুমি আমার জন্যে যে-ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করলে, তা দেখে মনে হয় তোমার ঝুড়ি ফুটো হয়ে গেছে।
ফকনার, আমি অবসর নিয়েছি।
মানুষ অবসর নেয় এক বারইযখন মারা যায়। তোমাকে আমার ভীষণ দরকার।
কিন্তু আমার তোমাকে দরকার নেই। আমার দরকার রবার্টকে। ওর কেউ নেই। আমি ওর অভিভাবক।
ফকনার হেসে উঠল।
হাসছ কেন?
তোমার কথা শুনে। তুমি বললে, তুমি তার অভিভাবক। কপর্দকহীন এক জন অভিভাবকের ওর কোনো প্রয়োজন নেই। ওর প্রয়োজন ডলারের। ডলারের মতো বড় অভিভাবক এখনো তৈরি হয় নি।
আমি তোমার সঙ্গে যুক্তিতর্কে যেতে চাচ্ছি না।
চাচ্ছ না, কারণ তোমার কাছে তেমন কোন যুক্তি নেই।
ফকনার, তুমি এখন যেতে পার।
ফকনার উঠল না। নরম গলায় বলল, রবিনসন, আমার অবস্থা তোমার চেয়েও খারাপ। এই মিশনটির ওপর আমার বেঁচে থাকা নির্ভর করছে। প্ল্যানটি তোমাকে করে দিতে হবে। প্লিজ।
অন্য বিষয় নিয়ে কথা বল ফকনার। গান-বাজনায় তোমার কি এখনো আগের উৎসাহ আছে?
ফকনার দীর্ঘ সময় চুপচাপ বসে রইল। ছোট্ট ছেলেটি দিব্যি নিজের মনে ঘুরছে। বকবক করছে। কী বলছে সে? ফকনারের ইচ্ছা হল ছেলেটির কথা শুনতে।
ফকনার, আমার একটু কাজ আছে।
উঠতে বলছ?
হ্যাঁ।
আমি একটি খসড়া পরিকল্পনা করেছিলাম, সেটা একটু দেখবে?
না। আমি দুঃখিত ফকনার।
ফকনার উঠে দাঁড়াল। ছোট্ট ছেলেটি বলল, চলে যাচ্ছ?