বেন ওয়াটসন জুনিয়র?
হ্যাঁ।
তার সঙ্গে আপনার পরিচয়ের সূত্রটি কি?
এই প্রশ্ন কি অবান্তর নয় জেনারেল?
হ্যাঁ, অবান্তর। এক জন কয়েদিকে মিশনে পাঠানো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পক্ষেও সম্ভব নয়।
ফকনার উঠে দাঁড়াল। শীতল স্বরে বলল, আমাকে যেভাবে নিয়ে এসেছেন ঠিক সেভাবে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থাও করবেন, এটা আশা করতে পারি নিশ্চয়ই।
নিশ্চয়ই আশা করতে পারেন।
জেনারেল সিমসন বেল টিপলেন এবং যান্ত্রিক স্বরে বললেন, আপনার সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ। আপনাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার, বিদায়ের সময় জেনারেল সিমসন উঠে দাঁড়ালেন এবং হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলেন। কোমল স্বরে বললেন, ভালো থাকবেন মিঃ ফকনার।
প্লেনে ওঠার আগে-আগে জেনারেল সিমসনের এডিসি তার হাতে একটা মোটা খাম দিয়ে বলল, জেনারেল আপনাকে দিয়েছেন।
কী আছে এর মধ্যে?
আমি জানি না। জেনারেল বলেছেন কাগজপত্রগুলি মন দিয়ে পড়তে।
কাগজপত্র বিশেষ কিছু না। একটি চেক, যেখানে টাকার অঙ্ক লেখা নেই। এবং দু লাইনের একটি নোট।
আমি বেন ওয়াটসনের ব্যাপারে চেষ্টা করছি।
এন্ড্রু জনাথন
এন্ড্রু জনাথন
বয়স : ৪৩।
উচ্চতা : ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।
ওজন : এক শ পনের পাউন্ড।
চোখ; নীল বর্ণ।
চুল: পিঙ্গল।
জন্মস্থান : ক্যানসাস সিটি।
জনাথন লোকটি ছোটখাটো। ঈগলের মতো তীক্ষ চোখ ছাড়া তার চেহারায় অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। তাকে দেখলেই মনে হয় অ্যানিমিয়ায় ভুগছে। দুর্বল এবং অসুস্থ একটি ভাব আছে তার মধ্যে। ইদানীং সে ডান পা একটু টেনে-টেনে হাঁটছে। আর্থরাইটিসের প্রথম ইশারা হতে পারে। তাদের পরিবারের আর্থরাইটিসের ইতিহাস আছে।
লোকটি কথা বলে কম। কাজকর্ম বিশেষ কিছু করে না। থাকে ওয়াশিংটনের পশ্চিমের একটা হোটলে। মাসে এক বার সিটি ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচ শ ত্রিশ ডলার নিয়ে এসে হোটেলের বিল মেটায়। মাসে দু বার যায় সিঙ্গেলস ক্লাবে,উদ্দেশ্য কোনো মেয়ের সঙ্গ পাওয়া যায় কি না। উদ্দেশ্য সফল হয় না কোনো সময়ই। মেয়েরা তেতাল্লিশ বছরের কোনো মানুষের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ বোধ করে না। তার চেয়েও বড় কথা জনাথন নাচ জানে না। কাজেই কোনো মেয়েকে গিয়ে বলতে পারে নাতুমি কি আমার সঙ্গে খানিকক্ষণ নাচবে?
অবশ্যি তার সময় সেজন্যে যে খুব খারাপ কাটে তা নয়। সমুদ্রের পারে প্রতিদিনই সে বেশ কিছুটা সময় কাটায়। কয়েকটা বিয়ার খায়। কোনো কোনো দিন মুভি দেখে, তারপর ফিরে আসে নিজের ঘরে। প্রতি রাতেই তার ভালো ঘুম হয়। জীবন থেকে অবসর নেওয়া একজন মানুষ, যার জীবনে তেমন কোনো উত্তেজনা নেই। উত্তেজনার প্রয়োজন নেই।
এক দিন দুপুর আড়াইটার দিকে এই লোকটি হঠাৎ গা-ঝাড়া দিয়ে উঠল। তার সুটকেস গুছিয়ে নিয়ে হোটেলের বিল মিটিয়ে দিল। হোটেলের মালিক অবাক হয়ে বলল, অসময়ে চলে যাচ্ছেন।
জনাথন হাসল।
আবার আসবেন।
আসব। নিশ্চয় আসব।
জনাথনের গায়ে একটি সামার কোট। মাথায় ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সাদা টুপি। হাতে রেক্সিনের একটি হ্যান্ডব্যাগ। সে হেঁটে-হেঁটে গেল গ্রে হাউন্ড বাস স্টেশনে। সুটকেস বুক বল নিউ অরলিংটনের ঠিকানায়।
ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে গেল ফ্লাওয়ার শপে। ফুলের দোকানের ছোট্ট মেয়েটিকে বলল, টকটকে লাল রঙের তিন ডজন গোলাপ দিতে পার? সবচেয়ে বড় সাইজ। মেয়েটি হেসে বলল, বিশেষ কোনো উৎসব বুঝি?
হ্যাঁ, খুব বড় উৎসব।
তোড়া বানিয়ে দেব?
দাও।
দাম কিন্তু অনেক পড়বে। এগুলি এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে।
আমি ক্যাশ পেমেন্ট করব। দামের জন্যে অসুবিধা নেই।
তুমি নিজেই নিয়ে যাবে?
হ্যাঁ, আমি নিজেই নিয়ে যাব। জনাথন কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, ফুলের সঙ্গে আর কী দেওয়া যায়, বল তো?
কাকে দিচ্ছ?
তা বলা যাবে না।
আমার মনে হয় ফুলগুলিই যথেষ্ট। চমৎকার ফুল! আমাকে কেউ কোনোদিন এতগুলি ফুল একসঙ্গে দেয় নি।
জনাথন চলে গেল ফলের দোকানে। এক ঝুড়ি আপেল কিনল। টকটকে লাল রঙের আপেল। বড় সুন্দর।
ফুল এবং ফলের ঝুড়ি হাতে সে বেলা চারটার দিকে সমুদ্রের পারে উপস্থিত হল। এই জায়গাটি তার খুব ভালো চেনা। গত ছ মাসে প্রতি দিন এক বার করে এসেছে। চষে বেড়িয়েছে চারদিক। এটা কি উদ্দেশ্যমূলক ছিল? হয়তো বা। জনাথনের চোখে-মুখে এখন আর আগের আলস্য নেই। চোখ ঝকঝক করছে। ঈগল পাখির দৃষ্টি। সে এগিয়ে গেল সাউথ পয়েন্ট টার্মিনালে। বেশ কয়েকটি শখের প্রমোদতরী ভিড় করে আছে। সুন্দর-সুন্দর নাম সুইট সিক্সটিন, দি ড্রিম, দি রেড রিবন। এরা সন্ধ্যার আগে-আগে ছেড়ে যাবে। রাত দশটা-এগারটার দিকে ফিরে আসবে।
জনাথন যে-প্ৰমোদতরীটির কাছে এসে দাঁড়াল, তার নাম দি ফার ইস্ট। চমৎকার দোতলা একটি ছিমছাম জলযান। ধবধবে সাদা রঙ। নীল জলের সঙ্গে এত চমৎকার মানিয়েছে।
এখানে কি পল ভিন্তানি আছেন?
কেন? আমার একটু প্রয়োজন ছিল।
কী প্রয়োজন?
আমি তাঁর জন্যে কিছু উপহার নিয়ে এসেছিলাম।
জনাথন তার উপহার দেখাল এবং বিনীত ভঙ্গিতে হাসল। মৃদুস্বরে বলল, একসময় তাঁর কাছ থেকে উপকার পেয়েছিলাম, সেই জন্যে আসা।
উপহার আমার কাছে দাও নিয়ে যাচ্ছি। নাম কী বল। পল ভিন্তানিকে বলব।
আমি একজন অভাজন ব্যক্তি। নাম বললে চিনতে পারবেন না। দেখলে হয়তো চিনতে পারতেন।
না, তুমি যেতে পারবে না। নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে।