রিমি অনির প্যান্ট বদলে দিল। কাঁথা ভাঁজ করে অনির নিচে দিয়ে দিল। ঘমের মধ্যে বড় মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে। তার মেয়েটা রাজকন্যার মতো সুন্দর হয়েছে। রিমি অনির ঠোঁটে চুমু খেল।
জোবেদা খানম কঠিন গলায় বললেন, কতবার বললাম ঘুমের মধ্যে চুমু দেবে না। ঘুমের মধ্যে চুমু দিলে আয়ু কমে। অসুখবিসুখ হয়। নিয়ম-কানুন কিছু মান না বলেই তো অশান্তি হয়।
কোনো অশান্তি হয় না। আপনি চুপ করে ঘুমুতে চেষ্টা করুন তো। যত দিন যাচ্ছে, ততই আপনার যন্ত্রণা অসহ্য হচ্ছে।
জোবেদা খানম চিবিয়ে-চিবিয়ে বললেন, অসহ্য হলে আমার জন্যে হচ্ছে না, তোমার জন্যে হচ্ছে। তখন বলেছিলাম পুলিশের মেয়ে বৌ করে আনার দরকার নাই। কেউ আমার কথা শুনল না। এখন একেবারে হাতেনাতে ফল।
রিমি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাল। ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। তৌহিদের পাশে গিয়ে খানিকক্ষণ বসা যাক।
তৌহিদ বিছানায় উঠে বসেছে। শুধু যে বসেছে তাই না। সিগারেট ধরিয়েছে। রিমি সিগারেট নিয়ে কড়া কিছু কথা বলতে গিয়েও বলল না। আহা খেয়ে ফেলুক। এমন ভয়ংকর একটা খারাপ জিনিস পুরুষ মানুষেরা এত আগ্রহ করে খায় কেন কে জানে।
রিমি বলল, কফি আনব?
হুঁ।
কাল কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাবে।
আচ্ছা।
আচ্ছা না, যাবে।
একবার তো গেলাম, কিছু বলতে পারল না। খামাখা টাকা নষ্ট।
ঐ ডাক্তার বলতে পারে নি বলে কেউ পারবে না–তাতো না। কাল যাবে কিন্তু।
আচ্ছা।
তৌহিদ সিগারেটে টান দিতে-দিতে বলল, আবার মার সঙ্গে ঝগড়া করলে? একজন বুড়ো মানুষ।
উনি কি-যে খারাপ ব্যবহার করেন, তা তো তুমি জান না।
তোমার যখন আশি বছর বয়স হবে, তখন তুমি এর চেয়েও খারাপ ব্যবহার করবে।
না আমি করব না। বিশ্বাস কর, আমি করব না।
বলতে-বলতে রিমি তৌহিদের হাতে হাত রাখল। হাতে হাত রাখাটা ঠিক হল না। রাগারাগি এখনো চলছে। এর মধ্যে আগ বাড়িয়ে…….অবশ্য দুপুররাতে শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করাটা অনুচিত হয়েছে। না করেইবা সে কী করবে? ভদ্রমহিলার মন এত ছোট। যত দিন যাচ্ছে, ততই ছোট হচ্ছে। এক সপ্তাহ হয় নি তাঁর সব গয়না তিনি দান। করেছেন। সব গয়না পেয়েছে তাঁর তিন মেয়ে। যে ছেলের বাড়িতে আছেন তার স্ত্রীর জন্যে কিছুই নেই। তার জন্যে কোনো চক্ষুলজ্জাও বোধ করছেন না। শাশুড়ির সামান্য গয়নার জন্যে রিমির কোনো ক্ষোভ নেই। কিন্তুি তিনি এমন করবেন কেন?
তারা রাত চারটার দিকে ঘুমুতে গেল। সোফা ছেড়ে খাটে উঠে আসতে রিমির একটু লজ্জা লাগছিল। এটা এক ধরনের পরাজয়। তবে মাঝেমাঝে পরাজিত হতে খারাপ লাগে না। তৌহিদ বলল, ঘুম আসছে না। একটা রিলাক্সেন খাব?
কিছু খেতে হবে না। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাক।
শুয়েই তো আছি।
শ্বাসকষ্টটা নেই তো?
না।
রিমি স্বামীর কাছে ঘন হয়ে এল। তার ঘুমুতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছা করছে গল্প করে রাতটা কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আশ্চর্য, যে মানুষটা একটু আগেও বলছিল ঘুম আসছে না সে ঘুমিয়ে পড়েছে। জেগে আছে রিমি। একা-একা জেগে থাকতে খুব খারাপ লাগে।
পাশের কামরা থেকে জোবেদা খানমের কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি একা-একা ঝগড়া করছেন। আজ তাঁর প্রতিপক্ষ হচ্ছে আজরাইল। আজরাইল এত লোককে রোজ নিচ্ছে: তাকে কেন নিচ্ছে না—এটা তাঁর ক্ষোভের বিষয়। এই সংসারে থেকে তিনি আর অপমান সহ্য করতে পারছেন না। তাঁর মন্দ কপাল বলেই তিনি আশি বছর বয়সে হয়েছেন সকলের চোখের কাঁটা। বিশেষ করে তার ছেলের বৌয়ের। পুলিশের মেয়ে যেন সংসারে না আনা হয়—এই নিয়ে কত আপত্তি করলেন। কেউ তাঁর কথা শুনল না। এখন মজাটা তো হাতে-হাতেই দেখছে। কত কষ্টে যে তিনি এখানকার মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তা তিনি জানেন, আর জানেন উপরে মাবুদ।
রিমির ইচ্ছা করছে উঠে গিয়ে বলে এখানে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে কে আপনাকে বলেছে? আপনি চলে গেলেই পারেন। আপনার তো আরো দুই ছেলে ঢাকা শহরেই থাকে। তাঁরা তো আর পুলিশের মেয়ে বিয়ে করে নি। তাদের সঙ্গে গিয়ে থাকলেই হয়। মেজোছেলের সঙ্গে পড়ে আছেন কেন? মেজোছেলে এমন কী রসগোল্লা?
বলা হল না। তবে জমা রইল। এক সময় রিমি বলবে। কঠিন-কঠিন কথা শুনাবে। আজকের রাতটা থাক।
টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি তেমন কোন বড় ঘটনা না। তবে এবারে অনেক দিন পর বৃষ্টি হচ্ছে। এটা যে শ্রাবণ মাস-রিমি ভুলেই গিয়েছিল।
সমস্যাটা কী বলুন তো
আপনার সমস্যাটা কী বলুন তো?
ডাক্তার পূর্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন। ইনি খুব ব্যস্ত ডাক্তার। রুগীর দিকে শুধু-শুধু তাকিয়ে নষ্ট করার সময় তাঁর নেই। প্রশ্ন করা মাত্রই জবাব চান। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, তৌহিদ কখনোই খুব গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না। রিমিকে সঙ্গে নিয়ে এলে হত। রিমি আসত কিন্তু আজ সকালেই অনির খুব জ্বর এসেছে। রিমি অনিকে নিয়েই ব্যস্ত।
বলুন আপনার কী অসুবিধা?
তৌহিদ ইতস্তত করে বলল, তেমন কোনো অসুবিধা নেই।
ডাক্তারের চোখে বিরক্তি আরো গাঢ় হল, তিনি হাতের কলম নামিয়ে চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন। যেন এক্ষুনি জেরা শুরু করবেন। কোর্টে বসে-বসে জেরা করার নিয়ম থাকলে এইভাবেই জেরা করা হত।
অসুবিধা নেই তবে এসেছেন কেন? আমার ভিজিট দুশ টাকা। শুধু-শুধু দুশ টাকা দিতে আসেন নি।
তৌহিদ বলল, মাঝে-মাঝে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
এটাতো ভয়ানক অসুবিধা। অসুবিধা নেই বলছেন কেন? কত দিন পরপর এরকম হয়?