বেশি হলে খেও না, তোমাকে পায়ে ধরে সাধছি?
পয়সা দিচ্ছি, ঠিক জিনিস খাব। পানি-মেশান ব্লাডি মেরী খাব কেন?
আলবত খাবে। তুমি একা নও, তোমার চোদ্দগুষ্টি খাবে।
টাকা-পয়সা নিয়েও শফিকের সঙ্গে তার খিটমিটি লেগেই আছে। ঘণ্টায় দু ডলারের বেশি কিছুতেই দেবে না। পোষালে কাজ কর, না-পোষালে করবে না। দশ ঘণ্টা কাজ করলে সে হিসাব করে বের করে সাত ঘণ্টা কাজ হয়েছে। তার বড়ো মেয়ে এ্যালেনকে নিয়েও তার আদিখ্যেতার অন্ত নেই। সুযোগ পেলেই গলা নিচু করে বলবে, খবৰ্দার, কোনো রকম ফষ্টিনষ্টির চেষ্টা করবে না। আমার মেয়েটা খারাপ। একটু ইশারা করলেই সর্বনাশ। আমি যদি দেখি এইসব কিছু হচ্ছে, তাহলে খুন করে ফেলব, হুঁ-হুঁ!
এ্যালেন নিজেও তার মায়ের মতো তিন-মণী বস্তা। তাকে নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করার ইচ্ছা হবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু মেয়ের মা তা বোঝে না।
মেয়েটির স্বভাব-চরিত্র অবশ্যি সত্যি সত্যি ভালো নয়। আড়ালে পেলেই শফিকের সঙ্গে কুৎসিত সব অঙ্গভঙ্গি করে। একদিন বেশ ভালোমানুষের মতো শফিককে মুভি দেখাতে নিয়ে গেল। মুভি দেখাবার এত সাধ্যসাধনার কারণ জানা গেল মুভি শুরু হবার পর। হার্ড কোর পণো মুভি একটি। মেয়েটি মেঘস্বরে বল, সব কায়দা-কানুন যাতে শিখতে পোর, সে জন্যেই নিয়ে এলাম। অনেক কিছু জানার আছে।
টুকটুক করে টোকা পড়ছে
টুকটুক করে টোকা পড়ছে দরজায়। তার মানে যে এসেছে সে পরিচিত কেউ নয়। পরিচিতরা ডোরবেল বাজায়। ডোরবেলটি এমন জায়গায় যে অচেনা কারোর চোখে পড়ে না।
আনিসের মনে হল যে এসেছে সে এক জন মহিলা। শুধুমাত্র মেয়েরাই দরজায় দু বার টোকা দিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তৃতীয় বার টোকা দেয়। ছেলেদের এত ধৈৰ্য নেই।
আনিস দরজা খুলে দিল। একটি মেয়েই দাঁড়িয়ে আছে, মালিশা। দিনের আলোয় তাকে একেবারেই চেনা যাচ্ছে না। তার উপর সে বেশ সাজগোজ করেছে। কাঁধে লাল টকটকে ভেলভেটের ব্যাগ। সোনালি চুলগুলিকে লম্বা বেণী করে কাঁধের দু পাশে ঝুলিয়ে দিয়েছে। রাতের আলোয় যতটা অল্পবয়েসী মনে হয়েছিল, এখন অবশ্যি সে-রকম লাগছে না।
তুমি কি আমাকে চিনতে পারছি?
তা পারছি। তুমি মালিশ। মালিশা গিলবার্ড।
আমি কি তেতিরে এসে বসতে পারি?
হ্যাঁ, পার!
মেয়েটি ঘরে ঢুকেই বলল, তুমি সন্ধ্যাবেলা ফ্ৰী আছ?
কেন বল তো?
আমি তোমাকে কোনো একটি ভালো রেস্টুরেন্ট নিয়ে যেতে চাই। আজ আমার জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন মালিশা।
ধন্যবাদ। তুমি কি যাবে আমার সঙ্গে?
আনিস ইতস্তত করতে লাগল।
তোমার ইচ্ছা না হলে যেতে হবে না।
আনিস বলল, কোথায় যেতে চাও?
আমার পকেটে চল্লিশ ডলার আছে। এর মধ্যে হয়, এরকম কোনো রেস্টুরেন্ট। মেক্সিকান খাবার তোমার পছন্দ হয়? সেগুলি বেশ সস্তা।
মেক্সিকান খাবার আমার খুব পছন্দ।
তোমাকে খুব একটা ভালো রেস্টুরেন্টে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল আমার। কিন্তু কী করব বল? রোজগারপাতি নেই। হাইস্কুল পাস করি নি। কাজেই রেস্টুরেন্টের ওয়েটেস আর বেবিসিটিং-এর বেশি কিছু পাই না। চল্লিশ ডলার জমাতে হলে আমাকে দু মাস রোজ আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়।
আনিস বলল, তুমি যদি কিছু মনে না কর, তাহলে আমি বরং ডিনারটা কিনি।
মালিশা হেসে ফেলল।
এখন আমার অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু শিগগিরই আমি মাল্টিমিলিওনিয়ার হচ্ছি। কাজেই টাকা খরচ করতে মায়া লাগে না আমার।
আনিস বলল, মিলিওনিয়ার সত্যি সত্যি হচ্ছে তুমি?
ইউ বেট। আমার মা ডলারের বস্তার উপর শুয়ে আছে। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, যদি বিষটিষ খাইয়ে দিই। আমিও বুড়িকে ভজিয়ে রাখছি। প্রতি সপ্তাহে চিঠি দিই–মা, তোমার শরীর কেমন আছে? ঠিকমতো ওষুধপত্র খাচ্ছ তো? গরমের সময় অবশ্যই হাওয়াই থেকে ঘুরে আসবে। হা হা হা।
আনিস হেসে ফেলল। মালিশ বলল, বুড়ো—বুড়ি হলেই মানুষ এরকম হয়ে যায়। ডলারই তখন প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। জীবন দিয়ে ডলার আগলে রাখে। আমার মতে পঞ্চাশের ওপর বয়স হলেই তাকে ঘাড় ধরে একটা নির্জন দ্বীপে ফেলে দিয়ে আসা উচিত। না-না, আমি খুব সিরিয়াস। জান তুমি, আমার মারা কত টাকা আছে? আন্দাজ করতে পারে?
না।
মা দু নম্বর বিয়ে করে এক জন পোল ব্যবসায়ীকে। তার হচ্ছে সী কার্গোর ব্যবসা। আমার স্টেপফাদার মারা যাবার পর সবকিছু আমার মা পেয়েছে। তার মধ্যে আছে রাজপ্রসাদের মতো দুটি বাড়ি। একটি ফ্লোরিডাতে, অন্যটি বোহেমিয়া আইল্যাণ্ডে। মা সবকিছু বিক্রি করে ডলার বানিয়ে ব্যাঙ্কে জমা করেছে। নিজে গিয়ে উঠেছে ওল্ড হোমে। সস্তায় থাকা-খাওয়া যায়। বিশ্বাস করতে পার?
বিশ্বাস করা কঠিন।
আমি তারই মেয়ে। আর দেখ, চল্লিশটি ডলার খরচ করতে আমার গায়ে লাগছে।
আনিস দেখল, মেয়েটির চোখ ছলছল করছে। আমেরিকান মেয়ে কাঁদবে না ঠিকই। এরা মাচকাতে জানে না।
আনিস বলল, ছটার আগে নিশ্চয়ই তুমি খেতে যাবে না? কফি খাও একটু!
কফিতে দুধ চিনি নাও তুমি?
দু চামচ চিনি। দুধ চাই না।
আনিস কফি বানাতে বানাতে বলল, মিলিওনিয়ার যখন হবে, তখন এত টাকা খরচ করবে কীভাবে?
প্রথমেই প্লাস্টিক সার্জারি করব। আমার বুক দুটি বড়োই ছোট। সিলিকোন রাগ দিয়ে বড়ো করব। আমাকে দেখে অবশ্যি বোঝা যায় না, আমার বুক এত ছোট। আমি অন্য ধরনের ব্রা ব্যবহার করি। ফোম ব্ৰা।
ও আচ্ছা।
এই ব্রাতে ছোট বুকও খুব এটাকটিভ মনে হয়। ব্রা খুললেই তুমি হতাশ হবে। দেখতে চাও?