ডেনিস বেয়ার সে-কথার জবাব না দিয়ে মালিশার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল, আমার মনে হয়, আই বি এম-এ তোমার যে শেয়ার আছে সেগুলি বিক্রি করে ফেলা উচিত। আই বি এম ফল করতে শুরু করেছে। তুমি কি ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল পড়?
না।
এখন থেকে নিয়মিত পড়বে। আমি এক জন এ্যানালিস্টও ঠিক করে রেখেছি। সে সপ্তাহে এক দিন এসে তোমাকে ওয়াল স্ট্রীটের ব্যাপারগুলি এক্সপ্লেইন করবে। মালিশা শুকনো গলায় বলল, গাড়িটা একটু রাখতে বল, আমার বমি আসছে।
গাড়ি থামাবার আগেই মুখ ভৰ্তি করে বমি করল মালিশা। আই এ্যাম সরি।
সরি হবার কিছুই নেই।
এখন কি ভালো লাগছে?
নাহ, বড্ড খারাপ লাগছে। প্লীজ, আমাকে হোটেলে নিয়ে চল।
কী ভয়ংকর সুন্দর
ইন্টারস্টেটে আসামাত্র হাইওয়ে পেট্রল পুলিশ গাড়ি থামাল। ফার্গো মুরহেড এলাকায় তুষারঝড় হবার সম্ভাবনা–প্রচুর বরফ পড়ছে। হাইওয়ে ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে। টম নেমে এল গাড়ি থেকে।
অফিসার, আমাকে যেতেই হবে। এই মেয়েটির বাবা মারা যাচ্ছে–এই সময় মেয়েটির তার বাবার কাছে থাকা দরকার।
রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। অনেক গাড়ি স্কিড করে পথের পাশে পড়ে আছে।
আমি খুব কেয়ারফুল ড্রাইভার। বিশ মাইলের উপর স্পীড ভুলব না। প্লীজ, অফিসার, প্লীজ!
তুমি বুঝতে পারছ না, দারুণ রিস্কি ব্যাপার। অফিসার, প্লীজ! এই মেয়েটিকে আমি যে-করেই হোক তার বাবার কাছে নিয়ে যেতে চাই।
গাড়ি চলছে খুব ধীর গতিতে। টম সমস্ত ইন্দ্ৰিয় সজাগ করে। স্টিয়ারিং-হুইলের উপর ঝুঁকে আছে। সে এক সময় শান্ত স্বরে বলল, ভালোমতো কম্বল জড়িয়ে নাও রুন। হিটিং কাজ করছে না।
রুনকি পায়ের উপর কম্বল টেনে দিল, কোনো কথা বলল না। টম নিচু ভল্যুমে একটি ক্যাসেট চালু করেছে। রাতের বেলা গাড়ি চালাতে হলে ঘুম তাড়াবার জন্যে এটা করতে হয়। মিষ্টি সুরে পোলকা বাজছে। রুনকি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে। মাইলের পর মাইল ফাঁকা মাঠ। বরফের চাদরে ঢাকা পড়েছে সব। কী ভয়ংকর সুন্দর!
সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক
আনিস এসেছে একা একা!
তুষারপাত হচ্ছে। রাস্তা জনমানবশূন্য! থার্মোমিটারের পারদ নিচে নামতে শুরু করেছে। স্ট্রীট লাইটের আলো অস্পষ্ট হয়ে আসছে। কে জানে তুষারঝড় হবে কিনা। উত্তর দিক থেকে বাতাস দিচ্ছে। লক্ষণ মোটেই ভালো নয়। আনিস এমিলি জোহানের ঘরের কড়া নাড়ল।
এমিলি জোহান, তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? মেমোরিয়াল ইউনিয়নে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।
হ্যাঁ, চিনতে পারছি। খুব কম মানুষের সঙ্গে আজকাল আমার দেখা হয়। আমি সবাইকে মনে রাখি।
আমি একটা মেয়ের খোঁজ করছিলাম, মালিশা গিলবার্ট। ওকে আমার বিশেষ প্রয়োজন।
এমিলি জোহান শান্ত স্বরে বললেন, তুমি কি ওর জন্যে গোলাপ ফুল এনেছিলে? ল্যাণ্ডলেডি আমাকে বলেছিল।
আনিস জবাব দিল না। এমিলি জোহান থেমে থেমে বললেন, আমরা আমেরিকানরা খুব অদ্ভুত জাত। যখন কোনো কিছু চাই, মন প্ৰাণ দিয়ে চাই। যখন সেই জিনিসটি পাওয়া যায় তখন জীবন অর্থহীন হয়ে যায়।
আনিস কিছু বুঝতে পারল না। এমিলি জোহান থেমে থেমে বললেন, মালিশা গিলবার্ট ঘুমের অষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। দীর্ঘ বিরতিহীন ঘুম আনিস, তুমি কি আমার ঘরে এসে বসবে? নক্ষত্র নিয়ে আমি একটি চমৎকার কবিতা লিখেছি।
আনিস বেরিয়ে এল। বরফে-বরফে চারদিক ঢাকা পড়ে গেছে। একটি পরাজিত শহর।
তুষারঝড় হবে। নিশ্চয়ই তুষারঝড় হবে।
আনিস পায়ে হেঁটে বাড়ির পথ ধরল। ভূতে-পাওয়া শহরের জনশূন্য পথঘাট। কী অদ্ভুত লাগে হাঁটতে! ব্রডওয়ের কাছে ছাতা মাথায় একটি রোগা মেয়েকে দেখা গেল। সিগারেটের আলোয় তার ক্লান্ত মুখ চোখে ভাসল ক্ষণিকের জন্যে। মেয়েটি ক্ষীণ স্বরে বললে, হ্যালো মিস্টার, কী ন্যাস্টি ওয়েদার।
আনিস জবাব দিল না। মেয়েটি থেমে থেমে বলল, আজ রাতের জন্যে তোমার কোনো ডেটা লাগবে?
নাহ, ধন্যবাদ।
মেয়েটি এগিয়ে এল। তবু মুখের সিগারেট দূরে ছুঁড়ে ফেলে সরু গলায় বলল, তুমি কি আমার জন্যে এক মগ বিয়ার কিনবে? কী দুঃসহ শীত!
এক দিন এই দুঃসহ শীত শেষ হবে। আসবে রোদ-উজ্জ্বল সামার। ছুটি কাটানর জন্য আমেরিকানরা গাড়ি নিয়ে আসবে হাইওয়েতে। মন্টানা, সল্ট লেক, ইয়েলো স্টোন পার্ক। কত কিছু আছে দেখবার। সামারের রাতগুলি এরা বনের ধারে তাঁবু খাটিয়ে কাটাবে। প্রচণ্ড জ্যোৎস্না হবে রাতে। যুবকযুবতীদের বড্ড বনে যেতে ইচ্ছা করবে। *
————–
সবাই গেছে বনের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। পাত্র-পাত্রীদের কাউকেই আমি কোনো দিন দেখি নি।