মালিশা এমন ভাব করল, যেন সে শুনতে পায় নি! বুড়ি দ্বিতীয় বার কিছু না বলে নিজে নিজেই নামল। এই বয়সেও রাতদুপুরে একা-একা বাসে চড়া চাই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে পাসবই-ভর্তি ডলার। তবু পাঁচ ডলার খরচ করে ক্যাব ডাকবে না। দেশে একটা ফেডারেল আইন থাকা দরকার, যে-আইনে সত্তুরের উপর বয়স হলে সব টাকা-পয়সা সরকারের কাছে সারেণ্ডার করে নির্বাসনে যেতে হয়।
বাস ডাউনটাউনে আসতেই মালিশা নেমে গেল। এখানে বাস বদল করতে হবে। বাস থেকেই মালিশ লক্ষ করল তার হাত-পা শিরশির করছে। নিৰ্ঘাত আবার জ্বর আসছে। এ রকম হচ্ছে কেন? বারবার শরীর খারাপ হচ্ছে। মালিশ মাথা নিচু করে দ্রুত হাঁটতে লাগল। শরীর বেশি খারাপ হবার আগেই এ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাওয়া দরকার।
বাস-স্ট্যাগুটি ফার্স্ট এ্যাভিন্যুতে। মালিশার ইচ্ছে হল, বাসের জন্যে না হেঁটে একটি ক্যাব ডাকে। সে খোলা একটি ট্যাভাৰ্ণে ঢুকে পড়ল। ক্যাব কোম্পানিকে টেলিফোন করতে হবে।
জন টিভিলটার রেকর্ড বাজছে উচ্চ স্বরে। কোমর জড়াজড়ি করে ডায়াসের কাছে দু-তিনটে ছেলেমেয়ে নাচছে। সেদিকে তাকিয়ে মালিশার কেমন যেন মাথা ঘুরতে লাগল।
হ্যালো মালিশা, গা গরম করবে নাকি? নাচবে এক পাক?
মালিশ তাকাল, কিন্তু ছেলেটিকে চিনতে পারল না।
মালিশা, এস।
নাহ।
না কেন?
আমার শরীর ভালো লাগছে না।
মলিশ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল। চিনতে পারছে না কেন? ছেলেটি এসে পরিচিত ভঙ্গিতে হাত ধরল। গলার স্বর নামিয়ে বলল, যাবে না কি আমার সঙ্গে?
কোথায়?
আমার এ্যাপার্টমেন্ট। দু জনের ছোটখাটো একটা পার্টি হয়ে যাবে, কী বল?
না।
না কেন? আসি। আমি তো অপরিচিত কেউ নই। আগেও তো আমাক সঙ্গে ডেটে গিয়েছ। এস এস, খুব ফান হবে।
ছ ফুট লম্বা টম
রাহেলা দরজা খুলে দেখতে পেলেন ছ ফুট লম্বা টম দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার সারা মুখে দাঁড়িগোঁফের জঙ্গল। খালি গা। পরনে জিনিসের একটি হাফপ্যান্ট!
পায়ে জুতোটুতো কিছুই নেই।
আমি রুনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
কার সঙ্গে?
রুন, রুনকি।
রাহেলা এক বার ভাবলেন বলেন রুনকি বাড়ি নেই। কোথায় গেছে জানি না। কিন্তু বলতে পারলেন না। টম ভারি গলায় বলল, তুমি বোধ হয় আমাকে চিনতে পারছ না। আমার নাম টমাস গ্রে। আমি রুনের বন্ধু।
ভেতরে এসে বস, আমি ডেকে দিচ্ছি।
না, আমি ভেতরে এসে তোমার কার্পেট নোংরা করব না। পায়ে আমার প্রচুর ময়লা।
রাহেলা রুনকির ঘরে উঁকি দিলেন। রুনকি চুল ছেড়ে চুপচাপ বসে আছে। হালকা সুরে পোলকা মিউজিক বাজছে। রুনকির সামনে গাদাখানিক বইপত্র ছড়ান। রাহেলা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে ডাকলেন, রুনকি?
ভেতরে এস, মা।
রুনকি, তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।
রুনকি হাসিমুখে বলল, কথা বলতে চাইলে বল। এত গম্ভীর হয়ে আছ কেন?
রাহেলা থেমে থেমে বললেন, আমরা তোমাকে ভালোবাসি এবং তোমার মঙ্গল চাই–এই সম্পর্কে তোমার কোনো সন্দেহ আছে?
আছে।
রাহেলা মুখ কালো করে বললেন, আমি তা জানতাম না।
ঠাট্টা করছিলাম মা। তুমি ঠাট্টা বুঝতে পার না, এ তো বড়ো মুশকিল।
রাহেলা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমি চাই না, তুমি টমের সঙ্গে মেলামেশা কর।
রুনকি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, টম কি এসেছে?
রাহেলা উত্তর দিলেন না। রুনকি ঝড়ের বেগে নিচে নেমে গেল। রাহেলারও ইচ্ছা হল নিচে নামেন। কিন্তু নামলেন না। নামলেই হয়তো দেখবেন দু জন জড়াজাড় করে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন আমেরিকায় বাস করার পরও এই দৃশ্য তাঁর ভালো লাগে না। রাহেলা মন্থর পায়ে নিজ ঘরের দিকে এগোলেন। তার কিছুক্ষণ পর রুনকি আবার উপরে উঠে এল। নিজের ঘরে বসেই রাহেলা বুঝতে পারলেন রুনকি সাজগোজ করছে। হালকা সুরে শিস দিচ্ছে। মেয়েদের শিস দেয়া একটা কুৎসিত ব্যাপার।
সেই রাত্রে রুনকি আর বাড়ি ফিরল না।
ক্লাস থেকে বেরুনমাত্র
ক্লাস থেকে বেরুনমাত্র এণ্ডারসনের সঙ্গে দেখা। এণ্ডারসন লোকটি ফুর্তিবাজ। দেখা হলেই একটা মজাদার কথা বলবে কিংবা জিভ বের করে ভেংচে দেবে। কে বলবে সে হেটারোসাইক্লিক কম্পাউণ্ডের এক জন বিশেষজ্ঞ–এক জন ফুল প্রফেসর।
আনিস বলল, হ্যালো এ্যাণ্ডারসন।
এ্যাণ্ডারসন একটি চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ পিটপিট করতে লাগল। আনিস হেসে ফেলতেই সে বলল, তোমার সঙ্গে কথা আছে আনিস। এস, কফি খেতেখেতে বলব।
কফি হাউসে তিলধারণের জায়গা নেই। ফাইন্যাল এগিয়ে আসছে। ছেলেমেয়েরা বইখাতা নিয়ে ভিড় জমাচ্ছে হাউসে, কেউ টেবিল ছাড়ছে না। খুপরি ঘরগুলির একটিতে জায়গা পাওয়া গেল মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে থাকার পর। আনিস বলল, কী বলবে বল।
ইদানীং কি তুমি অল্পবয়সী একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছ?
আনিস অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কি জন্যে জিজ্ঞেস করছ?
কারণ আছে। আমেরিকা একটি ফ্ৰী কান্ট্রি। তুমি কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালে কিছুই যায় আসে না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটি প্রবলেম হয়েছে।
কী প্রবলেম?
এ্যাণ্ডারসন গম্ভীর মুখে বলল, মেয়েটি একটি প্রসটিটিউট।
আনিস চুপ করে রইল। এ্যাণ্ডারসন আবার বলল, তুমি প্রসটিটিউটের সঙ্গে ঘুরলেও কিছু যায় আসে না। কিন্তু মাঝেমাঝে বড়ো রকমের ঝামেলা হয়। হঠাৎ এক দিন হয়তো মেয়েটি তোমাকে এসে বলবে, আমার পেটে তোমার বাচ্ছা! এবরশনের জন্যে হাজার দশেক ডলার দরকার।
আনিস গম্ভীর মুখে বলল, জানলে কী করে, মেয়েটি একটি প্রসটিটিউট?