না।
যে সংখ্যাকে ১ বা সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ দেওয়া যায় না। তাকে বলে প্ৰাইম নাম্বার।
মর্জিনা হাই তুলতে তুলতে বলল, ও আচ্ছা। এখন বুঝলাম।
শুভ্র বলল, ৩৭ বিস্ময়কর সংখ্যা। কারণ ৩৭ দিয়ে ১১১, ২২২, ৩৩৩, ৪88, ৫৫৫, ৬৬৬, ৭৭৭, ১৮৮৮, ৯৯৯ এদের ভাগ দেয়া যায়।
মর্জিনা বলল, ভাগ দিলে লাভ কী?
শুভ্ৰ বলল, তুমি কি সবকিছু লাভ লোকসান দিয়ে বিচার করো?
মর্জিনা বলল, দুনিয়াই চলে লাভ লোকসানে, আমি চলব না? যান সিনান কইরা আসেন। আপনের গফ শুনা আর চোরের পাদ শুনা একই রকম।
শুভ্ৰ বলল, তুমি এই নোংরা কথাগুলি বলা কবে বন্ধ করবে?
মর্জিনা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, যেদিন থাইকা আপনে পীরিতের গাফ বলা শুরু করবেন। সেইদিন ছাড়ব। এখন যান সাঁতার দিয়া আসেন। আইজ কি ছাইনছের বক্তৃতা আছে?
শুভ্র বলল, আছে। আজকের বিষয়বস্তু হলো সূর্য। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, এটা কি জানো?
মর্জিনা বলল, লোকে আপনেরে পাগল ডাকে, এইটা কি জানেন?
জানি। ডাকুক যার যা ইচ্ছা।
শুভ্র ড়ুব সাঁতারের চেষ্টা করছে। চরের পাড়ে বসে মুগ্ধচোখে দেখছে মর্জিনা। তার কাছে মনে হচ্ছে, এত সুন্দর দৃশ্য সে তাঁর জীবনে আর দেখে নাই। কোনোদিন যে দেখবে এমন সম্ভাবনাও নাই।
ভোর সাতটা।
মেরাজউদ্দিন দিনের প্রথম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। তখনই ভালো খবরটা পেলেন। চিকেন ফেদার কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার আহসান খবর নিয়ে ভোর ছাঁটায় এসে স্যারের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় ছিলেন।
মেরাজউদ্দিন বললেন, শুভ্রর খবর পেয়েছ?
জি।
অথেনটিক খবর?
জি। আপনি বললেই আমি এক্ষুনি রওনা হয়ে যাব। স্যারকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।
মেরাজউদ্দিন বললেন, তোমাকে দেখেই তোমার স্যার হুড়মুড় করে ঢাকার পথে রওনা হবে, এরকম ভাবার কি কোনো কারণ আছে?
আহসান বলল, স্যার, আপনি কি যাবেন? হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করি। চরে। নামিয়ে দেবে।
মেরাজউদ্দিন বললেন, তুমি সে কোথায় আছে বের করেছ, তোমার দায়িত্ত্ব শেষ! তুমি শুধু বড় একটা মাছ কেনার ব্যবস্থা করো।
বড় মাছ?
হ্যাঁ। আমাদের কালচারে শুভ সংবাদের সঙ্গে বড় মাছ যুক্ত।
আহসান বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন, আপনি কি যুথী মেয়েটাকে পাঠাবার কথা ভাবছেন?
মেরাজউদ্দিন বললেন, হ্যাঁ। মেয়েদের কাছে দুষ্ট শিশু শান্ত করার অনেক কৌশল আছে। যুথী তাকে দুষ্ট শিশু হিসেবেই দেখবে। শান্ত করে নিয়ে আসবে। মেয়েটার এই ক্ষমতা আছে বলে আমার ধারণা। বড় মাছটা যুথীর জন্যে।
অনেকক্ষণ ধরেই থেমে থেমে কলিংবেল বাজছে।
যুথীর শরীর খারাপ। সে বিছানায় শুয়ে আছে। তার হাতে খবরের কাগজ। হকারকে সে এই মাস থেকে কাগজ দিতে নিষেধ করেছে। খরচে পোষাচ্ছে না, তারপরেও সে কাগজ দিয়েই যাচ্ছে।
খবরের কাগজে বাংলাদেশের এক শিল্পপতির কাঠমুণ্ডুতে আত্মহত্যার খবরটা ভেতরের পাতায় এসেছে। যুথী ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল-করিম আঙ্কেল আত্মহত্যা টাইপ না। তার কাছে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কখন মানুষের মনে কী উঠে আসে কে জানে!
কলিংবেল আবারও বাজছে। যুথী কাগজ হাতেই দরজা খুলল। দরজার বাইরে মেরাজউদ্দিন দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর ড্রাইভারের হাতে বিশাল এক কাতল মাছ।
মেরাজউদ্দিন বললেন, এত বড় কাতল মাছ দেখেছ?
যুথী বলল, না।
মেরাজউদ্দিন বললেন, মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, ভাবলাম একটা মাছ নিয়ে যাই। মাছটা তোমার বাবা-মাকে দেখাও। তারা আনন্দ পাবেন বলে আমার ধারণা। তারপর ড্রাইভারকে দিয়ে কাটিয়ে আনবে। এত বড় মাছ ঘরে কাটা সম্ভব না!
সাজসজ্জা দেখতে লাগলেন। পেনসিালে আঁকা রবীন্দ্রনাথের একটা বঁধানো ছবি ছাড়া চোখে পড়ার মতো কিছু নেই। ছবিটা সুন্দর। ছবির চোখে স্বপ্ন। হাতে এঁকে চোখে স্বপ্ন আনা সহজ ব্যাপার না। মেরাজউদ্দিন বললেন, কার আঁকা ছবি?
যুথী বলল, আমার বড়ভাইয়ের। তার আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার শখ ছিল। গোপনে ভর্তি হয়েও ছিল। খবর পেয়ে বাবা তাকে জুতাপেটা করে ছড়িয়ে এনেছিলেন।
মেরাজউদ্দিন নিজের মনেই বললেন, Full many a flower is born to blush unseen.
যুথী বাবা-মাকে মাছ দেখাতে নিয়ে গেল। আজহার মাছ দেখে বললেন, এই মাছে কেউ হাত দিবি না। খবরদার। কেউ হাত দিলে হাত কেটে ফেলব। মাছ আমি নিজের হাতে জামাইকে দিয়ে আসব।
যুথী বলল, জামাইটা কে?
আজহার বললেন, আমার সঙ্গে ফাজলামি করিস? ডাক্তারকে তুই চিনিস না? তুই কি ভেবেছিস তোদের গোপন বিয়ের কথা জানি না?
যুথী বলল, জামাই জামাই খেলাটা বন্ধ করো তো বাবা। তোমার এই খেলা অন্য কেউ ধরতে পারুক বা না-পারুক আমি পারি। মাছটা একজন আমার জন্যে আগ্রহ করে এনেছেন। এখানেই রান্না হবে। তুমি চাইলে ডাক্তার সাহেবকে খেতে বলতে পার।
এত বড় মাছ তোকে কে দিল? নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার আছে। আমি বার্লি জল খাই না যে ব্যাপার বুঝব না।
সালমা বললেন, তোর বাবার কথায় যুক্তি আছে। এই এক মানুষ, যুক্তি ছাড়া কোনো কথা বলে না।
আজহার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
যুথী মার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার মতো স্বামীপ্রেমে অন্ধ মানুষও আমি আমার জীবনে দেখি নি। এখন আমি কী করব? মাছ ফেরত দিয়ে দিব?
সালমা বললেন, তোর বাপ যেটা বলে সেটা করবি। এই সংসারের প্রধান তোর বাপ, তুই না।
আজহার বললেন, একজন শখ করে একটা মাছ এনেছে। ফেরত দিলে মনে কষ্ট পাবে। মানুষকে কষ্ট দেওয়া আর কাবাঘরের পাথর খুলে নেওয়া একই জিনিস।