এগারোটা দশ।
চা খাবি?
না।
নীপা বিছানায় উঠে বসতে বসতে বলল, অনেকদিন একা ঘুমাই না। কাল একা ঘুমিয়েছি বলে ঘুমাও ভালো হয় নি।
নীপার গা থেকে চাঁদর সরে গেছে। তাতে সে মোটেই বিব্রত বোধ করছে না। এতদিন পর যুথীর সঙ্গে দেখা–এই নিয়েও তার কোনো মাথাব্যথা নেই। যুথী বলল, একা ঘুমাচ্ছিস না মানে কী? কে তোর সঙ্গে ঘুমুচ্ছে?
নীপা হাই তুলতে তুলতে বলল, লাইলি। তোর ভাইয়ের বৌ। অসাধারণ একটা মেয়ে। অসাধারণ টু দা পাওয়ার ফাইভ।
যুথী বলল, সে কোথায়?
নেপালে। কাঠমুণ্ডুতে। করিম আঙ্কেলের সঙ্গে গেছে। করিম আঙ্কেলের ছবির স্ক্রিপ্ট পড়া হবে। সেই উপলক্ষে যাওয়া। আমারও যাওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে যেতে ইচ্ছা করল না। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর, আমি হাতমুখ ধুয়ে আসি। বাথরুমের দরজা খোলা। কথাবার্তা চালাতে সমস্যা নেই।
যুথী বলল, তুই কি বস্ত্ৰ পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছিস?
নীপা বাথরুম থেকে বলল, মোটামুটি সেরকমই। মনে হয় কাপড়ে এলাৰ্জি হচ্ছে। কাপড় গায়ে লাগলেই হালকা র্যাশের মতো হয়।
লাইলিরও কি এই অবস্থা?
নীপা হাসতে হাসতে বলল, হুঁ।
আমার ভাইয়ের স্ত্রীর তাহলে অনেক উন্নতি হয়েছে!
নীপা বলল, পুরো বিষয়টা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের দৃষ্টিতে চরম অবনতি। আবার করিম আঙ্কেলের দৃষ্টিতে উন্নতি।
যুথী বলল, সে কি মদটদও খাচ্ছে?
শুধু টাকিলা খাচ্ছে। অন্যকিছু না। দুপুরে নিয়ম করে বিয়ার খাচ্ছে। বিয়ারকে মদ বলা ঠিক না।
ড্রাগস?
ড্রাগসের মধ্যে ইয়াবা। সবসময় না। যখন পার্টি থাকে তখন।
যুথী বলল, আমি এখন উঠব। লাইলিকে একটা বিশেষ খবর দিতে এসেছিলাম। সে যখন নেই, তোকে দিয়ে যাচ্ছি। আমার ভাই মারা গেছে।
Oh God! কবে?
জানি না। লাইলি এখন যা ইচ্ছা করতে পারে। আমাদের দিক থেকে কোনো বাধা নেই।
নীপা বাথরুম থেকে বের হলো। এখন তার গায়ে টাওয়েল জড়ানো। সে যুথীর সামনে বসতে বসতে বলল, Every cloud has a silver lining. আমার ধারণা, লাইলি তার হাসবেন্ডের মৃত্যুর খবর শুনে তেমন দুঃখিত হবে না। তবে সামাজিক নৰ্ম বজায় রাখার জন্যে দুঃখিত হবার ভান করবে।
যুথী বলল, উঠি?
নীপা বলল, উঠি মানে! দুপুরে আমার সঙ্গে লাঞ্চ করবি, তারপর যাবি। আরেকটা কাজ করবি—নেপাল যাবি? সন্ধ্যায় ড্রক এয়ারের একটা ফ্লাইট আছে। চল কাঠমুণ্ডু চলে যাই। ভিসার ঝামেলা নাই। নেপালের ভিসা অন এরাইভেল। তোর পাসপোর্ট আছে না?
না।
নীপা বলল, কোনো বিষয়ই না। তিন ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট করিয়ে দিচ্ছি। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হবে। আমি ভিডিও ক্যামেরা সেট করে রাখব, তুই লাইলিকে তার স্বামীর মৃত্যুসংবাদ দিবি। তার রিঅ্যাকশান অন রেকর্ড থেকে যাবে। রাজি?
না।
যুথী বলল, না। আমি এখন উঠব।
লাঞ্চও করবি না?
না।
আমার সঙ্গে লাঞ্চ করলে মজার একটা গল্প বলতাম। গল্পটা আগে মজার ছিল না। তোর ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর গল্পটা মজার হয়েছে।
যুথী বলল, মজার গল্প শুনব না।
নীপা বলল, শুনতেই হবে। লাঞ্চ খেতে রাজি না হলেও শুনতে হবে। এই গল্প না শুনে তুই যেতে পারবি না। করিম আঙ্কেল লাইলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। পুরোটাই ফান। তবে এখন তো আর ফান হবে না। করিম আঙ্কেল বলেছেন, লাইলি, তুমি যে দিন যে সময়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে, আমি বিয়ে করব। পুরুষ হিসেবে এটা আমার Promise. এই বলে তিনি একটা নোংরা। কাজ করলেন। তখন আমরা নেশার ঘোরে ছিলাম বলে নোংরামি ধরা পড়ে নি। নোংরা কাজটা কী শুনবি?
না।
তারপরেও শুনতে হবে। নোংরা কাজটা হচ্ছে তিনি বললেন, প্রাচীন গ্ৰীসে পুরুষরা কঠিন প্ৰতিজ্ঞা করত তাদের Testicles চেপে ধরে। সেখান থেকে ইংরেজি শব্দ Testimony এসেছে। এখন আমিও নিজের Testicles চেপে ধরে করব।
যুথী উঠে পড়ল। নগ্ন নীপার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। গায়ে জড়ানো টওয়েল নীপা বিছানায় ছুড়ে ফেলেছে। এর মধ্যে কাজের মেয়ে এসে চায়ের কাপ নিয়ে গেছে। নীপার মধ্যে কোনো অস্বস্তি নেই। নীপা আগে এরকম ছিল না। মানুষ যখন বদলাতে শুরু করে তখন দ্রুত বদলায়।
করিম আঙ্কেল ছয়জনের একটা দল নিয়ে নেপালের এভারেস্ট হোটেলে আছেন। এই দলে ক্যামেরাম্যান আছে, মিউজিক ডাইরেক্টর আছে, শিল্পনির্দেশক আছে। তিনজন মেয়ের টিকিট কাটা হয়েছিল, শেষ মুহূর্তে নীপা না আসায় এখন আছে লাইলি এবং যমুনা।
স্ক্রিপ্ট পড়া এখনো শুরু হয় নি। করিম আঙ্কেল নীপকে sms করে জানিয়েছেন, সে না আসা পর্যন্ত স্ক্রিপ্ট পড়া হবে না। নীপা জানিয়েছে সে আসছে। এখন দল বেঁধে কাঠমুণ্ডু দর্শন চলছে। নগরকেটে সূর্যস্ত দেখা, হনুমানজির মন্দির দেখা—এইসব। সন্ধ্যার পর ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা। করিম আঙ্কেল লাইলিকে পাঁচ হাজার ইন্ডিয়ান টাকা দিয়েছেন জুয়া খেলার জন্যে। তিনি মিনি-ফ্ল্যাস নামের একটা খেলা লাইলিকে শিখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম যারা জুয়া খেলে তাদের বিগিনার্স লাক বলে একধরনের লাক থাকে। আজ তুমি অবশ্যই জিতবে। গুড লাক। আমি যাচ্ছি ফ্ল্যাস খেলতে। আসল জুয়া হচ্ছে ফ্ল্যাস। রবীন্দ্ৰনাথ ছাড়া এই গ্রহে যত ক্রিয়েটিভ লোক জন্মেছেন, সবাই ছিলেন ফ্ল্যাস জুয়ায় আসক্ত। উদাহরণ—
দস্তয়োভসকি
দা ভিঞ্চি
আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে
পাবলো পিকাসো