আহসান বললেন, স্যারের মা আমাকে অনুরোধ করে পাঠিয়েছেন যেন আমি আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাই। খুবই জরুরি। শুভ্র স্যার নিখোঁজ হয়েছেন। ম্যাডামের মাথা খারাপের মতো অবস্থা।
যুথী বলল, আমারও মাথা খারাপের মতো অবস্থা। আমার নিজের ভাই নিখোঁজ। এটা বড় কথা না; কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আমাকে তার কাছে ছুটে যেতে হবে এটা কেমন কথা? যিনি দেখা করতে চাইবেন, তিনি ছুটে আসবেন। আমার কথা শেষ। এখন বিদায়। বাসায় নানান ঝামেলা চলছে, আমি আর ঝামেলা বাড়াতে চাচ্ছি না।
আহসান বিনীত গলায় বললেন, প্লিজ। চলুন। আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি। পাঁচটা মিনিট শুধু কথা বলবেন। গাড়ি আপনাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
যুথী উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, Get lost.
কী বললেন?
ইংরেজিতে বললাম, Get lost. সহজ বাংলায়—বহিষ্কার হও। সম্ভবত আপনি ভুলে গেছেন। আপনি আপনার অফিস থেকে আমাকে বহিষ্কার করেছিলেন। কোনো কারণ দেখান নি। সেই তুলনায় আমি আপনার সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করেছি। আপনি যদি কানে ধরে বলেন, ক্ষমা চাই—তাহলে প্রতিবন্ধীর মার সঙ্গে কথা বলার বিষয়টা বিবেচনা করব। কনে ধরতে রাজি আছেন? রাজি হওয়ার কথা না। কাজেই বহিষ্কার। বহিষ্কার।
আহসান চোখমুখ লাল করে ঘর থেকে বের হলেন। দ্রুত বের হতে গিয়ে চৌকাঠে ধাক্কা লাগিয়ে কপাল ফুলিয়ে ফেললেন।
যুথী ডাক্তার আমিরুল ইসলামকে বাসায় নিয়ে এসেছে। আজহার ডাক্তারের সঙ্গে সহজ-স্বাভাবিকভাবেই কথা বললেন। লজ্জিত গলায় বললেন, গামছা পরে আছি ডাক্তার সাহেব, কিছু মনে করবেন না। লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। কয়েকদিন আগে ইলিশ মাছের পাতুরি খেয়েছিলাম, তারপর থেকে শরীর গরম। এই গরম আর নামছেই না। ইলিশ মাছ অত্যন্ত ডেনজারাস ফিস। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, মহাবীর আলেকজান্ডার ইলিশ মাছ খেয়ে মারা গেছেন? তার মতো মহাবীরের কপালে যদি এই থাকে তাহলে আমার অবস্থা বুঝতেই পারেন। আমি হচ্ছি—
বাল্যস্য বাল
হরিদাস পাল।
আমিরুল ইসলাম বলল, আপনি কত রাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না?
বড়ভাইজানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। বারান্দায় শুয়ে থাকতে হতো। মশার কামড়। ইয়া বড় বড় Export quality মশা। তখন থেকে ঘুমের ডিসটার্ব শুরু হলো। এখন অবশ্য ভাইজান সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। তিনি রাতে আরামে মশারির ভিতর ঘুমাচ্ছেন। আমি পড়েছি ফ্যাসাদে।
আমিরুল ইসলাম পেথিড্রিন ইনজেকশন দিয়ে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। কড়া কিছু ঘুমের ওষুধ লিখে দিল। একজন সাইকিয়াট্রিষ্টের নাম-ঠিকানা লিখে বলল, যুথী খালা, আমি যেসব ওষুধ দিয়েছি আমার ধারণা ব্রেইনের সাময়িক ডিসঅর্ডার এতেই দূর হবে। যদি দূর না হয় তাহলে সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
যুথী বলল, আপনার ভিজিট না নেওয়ার তিন মাস কি শেষ হয়েছে?
এখনো শেষ হয় নি।
এক কাপ চা বানিয়ে দিলে কি খাবেন? ভিজিট না দেওয়া গেলে রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনরা একধরনের অস্বস্তিতে ভোগে। আপনাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারলে আমার অস্বস্তি সামান্য কমতি।
যুথী খালা, চা খাব।
থ্যাংক ইউ। আপনাকে একটা অনুরোধ, রসিকতার রাবারের মতো ইলাসটিসিটি নেই। রসিকতা টানতে হয় না। প্রথমবার রসিকতা করে খালা ডেকেছেন ফুরিয়ে গেছে, আর না।
Ok.
বাবার পাগলামি সারবে তো?
অবশ্যই সরবে। ব্রেইনের রেষ্ট দরকার। রেষ্ট পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
যুথী বলল, খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার, এলাকায় আপনার ভালো পশার হয়েছে।
আমিরুল বলল, আশ্চর্য ব্যাপার হবে কেন?
যুথী বলল, আপনি ভিজিট নিচ্ছেন না, তারপরেও আপনার পশার—এটাই আশ্চর্য। যেসব ডাক্তার বেশি ভিজিট নেয়। তাদের প্রতি রোগীদের আস্থা থাকে বেশি। রোগীরা মনে করে তিনি বড় ডাক্তার। অনেকটা আমের মতো।
আমের মতো মানে?
যুথী বলল, একই আমি আপনি দুটা আলাদা ঝুড়িতে রাখবেন। একটা ঝুড়ির আমের কেজি বলবেন সত্তুর টাকা। আরেকটার কেজি বলবেন একশ টাকা। ক্ৰেতারা একশ টাকার কেজিটাই কিনবে। দরদাম করে কিছু কমানোর চেষ্টা করবে।
আমের বিষয়ে এত কিছু জানলেন কীভাবে?
যুথী বলল, আমার বড়ভাই কিছুদিন ফলের ব্যবসা করার চেষ্টা করেছে। তার কাছে শুনেছি। চা কেমন হয়েছে?
আমিরুল বলল, চা ভালো হয় নি। চায়ের সঙ্গে গল্পগুলি সুন্দর বলে চা-টা খারাপ লাগছে না। নীপা খালার কাছে শুনেছি আপনি অদ্ভুত অদ্ভূত হিউমার করেন। আশেপাশে যারা থাকে, হাসতে হাসতে তাদের পেটে ব্যথা হয়ে যায়।
আপনি চাচ্ছেন যেন আমি আপনার পেটে ব্যথা করে দেওয়ার মতো কিছু বলি?
জি।
একটা পিপড়া এবং হাতি পাশাপাশি যাচ্ছিল। হঠাৎ তাদের বামদিকে পড়ল এক পুকুর। সঙ্গে সঙ্গে পিপড়া কষে হাতির পায়ে একটা লাথি দিল।
হাতি বলল, ঘটনা কী?
পিঁপড়া বলল, ঘটনা কী তুই বুঝস না? আমার স্ত্রী পুকুরে স্নান করছে, তুই আড়চোখে তাকাচ্ছিস। তোর লজ্জা নাই?
আমিরুল বলল, গল্পে হাসির ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারলাম না। গল্পে কোনো লজিক নেই।
যুথী বলল, গল্পে লজিক অবশ্যই আছে। আপনার রসিকতা বোঝার ক্ষমতা নেই। আপনি হচ্ছেন শুভ্রর মতো।
শুভ্রটা কে?
সে একজন শিক্ষিত মানসিক প্রতিবন্ধী। আমার ধারণ আপনিও মানসিক প্রতিবন্ধী। মানসিক প্রতিবন্ধীরা রসিকতা বুঝতে পারে না। আর যারা পাগল, তারা রসিকতা বেশি বুঝে। সবকিছুতেই তারা হা হা করে হাসে।