দাওয়াত করলেই পার।
এই সপ্তাহেই করি। কী বলো?
আজহার ফলের চারটা ছবি তুললেন। একটা তুললেন নিজের ছবি। সালমাকে দিয়ে তোলালেন। এই ছবিতে তিনি একটা স্ট্রবেরি নিয়ে মুখের সামনে ধরে আছেন।
রেহানা শুভ্রর কিছু কর্মকাণ্ড মোটেই বুঝতে পারছেন না। শুভ্রর ঘরে ঝকঝকে নতুন একটা হারমোনিয়াম। একটা বয়সে যুবকদের গানবাজনার শখ হয়। তারা হারমোনিয়াম কেনে না। গিটার কিংবা কি-বোর্ড পর্যন্ত যায়। অতি দ্রুত গানবাজনার শখের মৃত্যু ঘটে।
তিনি শুভ্ৰকে ডেকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করতে পারেন, তোমার ঘরে হারমোনিয়াম কেন?
জিজ্ঞেস করতে মন সায় দিচ্ছে না। শুভ্ৰ নিজ থেকে কেন বলবে না? কেন তার মধ্যে লুকাছাপা চলে এসেছে? হারমোনিয়াম সে।চাঁদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে, এর অর্থ সে আড়াল করতে চাইছে।
বিকেলে চা খেতে শুভ্র ছাদে যায়। চায়ের কাপটা থাকে ছাদের মাঝামাঝি জায়গায় রাখা শ্বেতপাথরের বেদিতে; শুভ্ৰ ছাদের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় দ্রুত হাঁটাইটি করে। মাঝে মাঝে বেদির কাছে এসে চায়ে চুমুক দেয়। শুভ্ৰ এই হাঁটাহাঁটির নাম দিয়েছে চিন্তাচিন্তি। হাঁটতে হাঁটতে সে নাকি চিন্তা করে।
রেহানা ছেলের খোঁজে ছাদে এলেন। শুভ্ৰ হাঁটাহাঁটি করছে না। বেদিতে বসে। আছে। হাতে চায়ের কাপ। রেহানা বললেন, হাঁটাহঁটির পর্ব শেষ না-কি?
শুভ্ৰ জবাব দিল না। মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসল।
রেহানা বললেন, দেখি তোমার কাপ থেকে এক চুমুক চা খাই।
শুভ্ৰ মার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিল। রেহানার সুচিবায়ুর মতো আছে। কিন্তু ছেলের চায়ের কাপে এক চুমুক দিতে কিংবা তার পেপসির গ্লাসে এক চুমুক দিতে তাঁর ভালো লাগে। এটা তার পুরনো অভ্যাস।
তোমার ঘরে একটা হরমোনিয়াম দেখলাম। কিনেছ?
হুঁ।
হারমোনিয়াম দিয়ে কী করবে?
একজনকে গিফট করব মা।
রেহানা পরের প্রশ্নটা করবেন কী করবেন না বুঝতে পারছেন না। পরের প্রশ্নটা হলো, সেই একজনটা কে? শুভ্ৰ মনে হয় সেই একজনের পরিচয় দিতে চাচ্ছে না। পরিচয় দিতে চাইলে শুরুতেই তার নাম বলত।
রেহানা হাত থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন, যাকে হারমেনিয়াম গিফট করবে তাকে কি আমি চিনি?
না। তবে তার নাম শুনেছ।
নাম জানতে পারি?
হারমোনিয়ামটা আমি যুথীর জন্যে কিনেছি মা।
রেহানা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। গলার স্বর স্বাভাবিক রাখতে। শুভ্রর হাস্যকর কাণ্ডকারখানায় গলার স্বর স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। রেহানা বললেন, যুথী মেয়েটা কি তোমাকে হারমোনিয়াম কিনে দিতে বলেছে?
না।
তাহলে তাকৈ হারমোনিয়াম গিফট করছ কেন?
মা। যুথীর গলার স্বর অস্বাভাবিক মিষ্টি। আমি চাই ও গান শিখুক।
তুমি কি তার অভিভাবক?
শুভ্র বলল, না মা, আমি ওর কিছুই না। কিন্তু আমি চাই ও গান শিখুক। আমি খুব সুন্দর একটা চিঠি তাকে লিখেছি। হারমোনিয়াম এবং চিঠিটা তাকে পাঠাব। আমার ধারণা চিঠিটা পড়লেই সে গান শিখবে।
সেই চিঠিটা কি আমি পড়ে দেখতে পারি?
অবশ্যই পার। কেন পারবে না? চিঠিটা আমার বুকসেলফের তিন নম্বর তাকে, বইয়ের ওপর রাখা আছে। ড্রাইভারকে দিয়ে চিঠি এবং হারমোনিয়াম পাঠাবার ব্যবস্থা কোরো তো মা। আমার নিজের যেতে লজা লাগবে।
তুমি কি ছাদে আরও কিছুক্ষণ থাকবে?
সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত থাকব।
তোমাকে কি আরেক কাপ চা পাঠাব?
পাঠাও।
রেহানা ছাদ থেকে নেমে গেলেন। শুভ্রর জন্যে চায়ের ব্যবস্থা করে তিনি চিঠি পড়তে বসলেন।
যুথী
এই হারমোনিয়ামটা আমি আপনার জন্যে কিনেছি। আগেই রেগে যাবেন না। কেন কিনেছি তা শুনুন। আপনার গলার স্বর অস্বাভাবিক মিষ্টি। আমি নিশ্চিত, অনেকেই এই কথা আপনাকে বলেছে। তবে আপনি নিজে বিষয়টা জানেন
প্রকৃতি যখন কাউকে বড় ধরনের গিফট দিয়ে পাঠায় তখন তার উচিত বহুজনকে সেই গিফটের ভাগ দেওয়া। আপনি যদি গান শেখেন এবং গান করেন। তবেই আপনার কিন্নরকণ্ঠের আনন্দ অন্যরা নিতে পারবে।
প্লিজ, আমার ওপর রাগ করবেন না।
শুভ্র।
শুভ্রর ড্রাইভার যখন হারমোনিয়াম এবং চিঠি নিয়ে যুথীদের বাসায় পৌঁছ তখন যুথী নেই। সে নীপার কাছে গেছে।
আজহার টুনুকে ডেকে বললেন, টুনু, ঘটনা কী?
টুনু বলল, বাবা, আমি তো জানি না ঘটনা কী।
ঘরে হারমোনিয়াম চলে এসেছে, ব্যাপার কী? এখন থেকে কি বাড়িতে বাদ্যবাজনা হবে? আমার বাসাটা হবে বাইজি বাড়ি? হারমোনিয়ামের সঙ্গে নাকি চিঠিও এসেছে?
হ্যাঁ।
চিঠি খুলে পড়ে দেখ।
টুনু বলল, যুথীর কাছে লেখা চিঠি আমি কেন পড়ব?
তোকে পড়তে বলছি। এইজন্যে পড়বি। এটা আমার অর্ডার।
টুনু হতাশ গলায় বলল, বাবা, এটা আমি করব না।
আজহার বললেন, তুমি ষাড়ের গোবর ছাড়া কিছু না। প্লেইন এন্ড সিম্পল cowdung. তিনবার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করে এখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াও। ঢাকা শহরে তুমি ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জীবন কাটাবে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এখন আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হও। স্টুপিড কোথাকার!
টুনু মাথা নিচু করে বের হয়ে গেল। আজহার খাম খোলার প্রস্তুতি নিলেন। তবে এবার ভুল করলেন না, সাবান দিয়ে বেশ কয়েকবার হাত ধুয়ে নিলেন; যেন চিঠিতে বিড়ির গন্ধ লেগে না থাকে।
করিম আংকেল যুথীর চাকরি পাওয়া সেলিব্রেট করার জন্যে শ্যাম্পেনের বোতল খুলতে খুলতে বললেন, বিশেষ কোনো ঘটনা সেলিব্ৰেট করার জন্য আছড়ে নারিকেল ভাঙার প্রথা ছিল। পশ্চিমা দেশে নারিকেলের পরিবর্তে শ্যাম্পেনের বোতল খোলা হয়। যুথী, তুমি যদি গ্লাসে একটা চুমুক না দাও। তাহলে সেলিব্রেশন সম্পন্ন হবে না।