মেয়ের স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা কি রেপ করে না?
করবে না কেন, করে। তবে অধিকাংশ সময়েই ব্যাপারটা হয় আপোসে।
আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?
কোর্টে গেলেই আপনি বুঝবেন আমি কী বলছি। এই মামলা তৃতীয় দিনের হিয়ারিং-এর পরই ডিসমিস হয়ে যাবে। একজন সার্জন যখন জানেন অপারেশন টেবিলেই রুগী মারা যাবে, তখন তাঁরা অপারেশন করেন না।
এমন সার্জনও আছেন যাঁরা রুগী মারা যাবে জেনেও অপারেশন করেন। সাধ্যমত চেষ্টা করেন রুগীকে বাঁচাতে।
আমি সেরকম কেউ না। আমার মধ্যে বড়-বড় আদর্শ নেই। তা ছাড়া আমি রেপ ব্যাপারটাকে খুব বড় করে দেখি না।
তার মানে।
এটা বেশ ক্ষুদ্র ব্যাপার মনে করি। একটা লোককে মারধর করে আপনি তার একটা হাত ভেঙে ফেললেন, এতে আপনার শাস্তি হবে ছয় মাসের কারাবাস, অথচ রেপ-এর ক্ষেত্রে একটি মহিলা তার চেয়েও কম শারীরিক যন্ত্রণা বোধ করবে, কিন্তু সেখানে শাস্তি হবে যাবজ্জীবন। এটা আনফেয়ার।
শারীরিক যন্ত্রণাটাই দেখবেন, মানসিক যন্ত্রণা দেখবেন না?
না। মন ধরা-ছোঁয়ার বাইরের একটা বস্তু। ঐ বস্তুকে আইনের ভেতরে আনা ঠিক নয়।
আপনার কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে।
আচ্ছা, এক মিনিট। এক মিনিটের জন্য আপনি বসুন।
নিশাত বসল। তার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। সে খুব সাবধানে রুমালে সেই পানি মুছল, যাতে দৃশ্যটি সামনে বসা এই নিম্নমানের মানুষটি না দেখে ফেলে। দেখে ফেললে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে। এই রোগা, কুদর্শন নিম্ন মানসিকতার একটা মানুষ ক্রিমিনাল কেইসের প্রবাদতুল্য পুরুষ, বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। মন খারাপ হয়ে যায়।
নিশাত আপনার নাম, তাই না?
হ্যাঁ।
আপনার বান্ধবীকে নিয়ে আসুন। আই উইল ফাইট ফর হার।
মত বদলালেন কেন?
আমি কেইস নেব না বলায় চোখে পানি এসে গেল, তাই দেখেই মত বদলালাম।
আপনি কেইস নেবেন না এটা শুনে আমার চোখে পানি আসে নি। রেপ সম্পর্কে আপনার ধারণা জেনে চোখে পানি এসেছে।
এটা নিতান্তই একটা ব্যক্তিগত মতামত। আমি তো এই মতামত প্রচার করছি না। যৌনতা ব্যাপারটাকে অন্য সবাই যেভাবে দেখেছে, সেভাবে আমি দেখছি না। এটা নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার। আর দশটা শারীরিক ব্যাপারের চেয়ে আলাদা কিছু না। এর সঙ্গে আপনারা মন যুক্ত করে একে মহিমান্বিত করছেন। আমার কাছে তা আনফেয়ার মনে হয়েছে। আজ এটাকে বিরাট অপরাধ মনে করা হচ্ছে। একদিন হয়তো হবে না। মূল্যবোধ বদলায়। এর সঙ্গে-সঙ্গে বদলায় আইন। একসময় শিশুকন্যা জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেরে ফেলা হত। এটাকে কেউ অপরাধ মনে করত না। তারপর অপরাধ মনে করতে শুরু করলাম। এখন আবার করছি না।
এখন করছি না মানে।
ভ্রূণহত্যা করছি। ঢাকা শহরে অসংখ্য ক্লিনিক আছে যারা এম. আর.-এর নামে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। যেহেতু পপুলেশন আমাদের বড় সমস্যা, সেহেতু আমরা দেখেও না-দেখার ভান করছি। কোনো কোনো দেশে ভ্রুণহত্যাকে আইনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সব দেশ নিজের সুবিধামতো আইন প্রণয়ন করে। আমেরিকার কথা ধরুন। আমেরিকায় ফোর্জারি বা জালিয়াতির শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অথচ পৃথিবীর অন্য সব দেশে এটাকে চতুর্থ শ্রেণীর অপরাধের পর্যায়ে ফেলা হয়। শাস্তি বড় জোর পাঁচ বছর।
আপনার বক্তৃতা শুনতে ভালো লাগছে না।
চা খান। চা দিতে বলি। চা খেয়ে আপনার বান্ধবীকে নিয়ে আসুন। মহিলা কীরকম শক্ত দেখতে চাই। ক্রস একজামিনেশন সহ্য করতে পারবেন কি না কে জানে। কেউ পারে না।
ও পারবে।
না, উনিও পারবেন না। পারার কথা নয়। যাক, সেটা কোনো ব্যাপার না। ট্রায়াল সহ্য করতে না পারাটাই ভালো। জেরার মুখে যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় তা হলে বেশ ভালো হয়।
আপনার কথা বুঝলাম না।
ব্যাপারটা সবাইকে এফেক্ট করে। সহানুভূতির অনেকটাই মেয়েটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আসলে কোর্টগুলি চালানো উচিত রোবটদের দিয়ে, যাদের কোনো ইমোশন নেই। পুরোপুরি ন্যায়বিচার মানুষের পক্ষে করা মুশকিল। আচ্ছা, আপনি এখন উঠুন। আমি অন্য কাজ করব।
পুষ্প হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে
পুষ্প হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ব্যাপারটা কি সত্যি-সত্যি ঘটছে না এটা তার অন্যান্য দুঃস্বপ্নের মতো দুঃস্বপ্ন? মিজান বসার ঘরে বসে আছে। চোখে সানগ্লাস। পরনে। চকলেট রঙের একটা শার্ট। মাথার চুলগুলি ছোট্ট-ছোট্ট করে কাটা। মুখ হাসি-হাসি।
ভাবি চিনতে পারছেন? অধমের নাম মিজান। দরজা খোলা ছিল, বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়েছি। নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। রকিব বাসায় নেই? ওর সঙ্গে দরকার ছিল।
পুষ্প কী বলবে ভেবে পেল না। তার বুক ধকধক করছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আবার ঐ দিনকার মতো হবে নাকি? সে প্ৰাণপণে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করছে। পারছে না। সে খুব ঘামতে শুরু করেছে।
আপনি কী চান?
কিছুই চাই না ভাবি। নাথিং। পুলিশ যা যন্ত্ৰণা করেছে বলার না! কোর্টে হাজির করেই আবার পুলিশ রিমান্ডে। ঐ ইন্সপেক্টার বিরাট হারামজাদা। এখন অবশ্যি ঠাণ্ডা।
পুষ্প মনে-মনে লোকটির সাহসের তারিফ করল। কী সহজ-স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি। অনেক দিন পর বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। চা-টা খেয়ে বিদায় নেবে।
রকিবকে খুঁজছিলাম যন্ত্রণা মিটিয়ে ফেলবার জন্যে। এই জিনিস কোর্টে গেলে তারই অসুবিধা, আমার কিছু না। আমি আজও যেমন ফ্রী ম্যান, দশ দিন পরেও ফ্রী ম্যান।