ছিঃ ছিঃ ভাই। আমি যদি কোনো কারণে আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি আমাকে মাফ করে দিন।
আমাকে দেখলেই আপনি এমন একটা ভাব করেন যেন আমি আপনাকে রেপ করতে এসেছি।
পুষ্প কেঁদে ফেলল। সে কী বলবে বা কী করবে বুঝতে পারছে না। সিঁড়িতে শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিশাত আপা বাবুকে নিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। সে কি চিৎকার করে নিশাত আপাকে ডাকবে? এটা কি ঠিক হবে? এই লোকটি হয়তো ঠাট্টা করছে। এর
অভ্যাস হচ্ছে ঠাট্টা করা। সবার সঙ্গেই ইনি ঠাট্টা করেন। রকিব কত বার বলেছে। পুষ্প।
পুষ্প চমকে উঠল। কী আশ্চর্য, নাম ধরে ডাকছে কেন? পুষ্প থরথর করে কাঁপতে লাগল। সে কি ছুটে বেরিয়ে যাবে?
নাম ধরে ডাকলাম বলে চমকে উঠলেন নাকি? চমকে ওঠার কিছু নেই। মানুষের নাম দেওয়া হয় ডাকার জন্যে। তা ছাড়া কেউ তো তা জানতে পারছে না। আমি যদি এখন আপনাকে আরো মধুর কোনো নামে ডাকি তা হলেও কিছু যায়-আসে না।
আপনার কী হয়েছে। আপনি এরকম কথা বলছেন কেন?
আমার কিছুই হয় নি। আমি ভালো আছি। আপনি কাঁদছেন কেন?
মিজান ভাই, আজ আপনি চলে যান। অন্য আরেক দিন আসবেন।
এসেছি যখন একটু বসি। রোজ-রোজ আসা তো মুশকিল। কই, আপনার বান্ধবী তো এখনো বাচ্চা নিয়ে এল না?
মিজান উঠে দাঁড়াল। হয়তো এবার চলে যাবে। শুধু-শুধুই সে ভয় পাচ্ছিল। পুষ্প শাড়ির আঁচলে চোখ মুছল। মিজান দরজার সামনে কয়েক মুহুর্তের জন্যে দাঁড়িয়ে রইল। এক বার তাকাল পুষ্পের দিকে এবং খুব সহজ ভঙ্গিতে দরজার হুক তুলে দিল।
পুষ্প কাঁপা গলায় বলল, দরজা বন্ধ করছেন কেন?
কেন বন্ধ করছি বুঝতে পারছ না?
মিজান ভাই, আমি আপনার পায়ে পড়ছি।
তুমি শুধু-শুধু ভয় পাম্। কেউ কিছু জানবে না। আমি তো কাউকে কিছু বলবই না, তুমিও মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারবে না। লোকলজ্জা বড় কঠিন জিনিস।
পুষ্প চিৎকার করে উঠতে চাইল, মুখ দিয়ে স্বর বেরুল না। রান্নাঘরের দিকে ছুটে যেতে চাইল, ছুটে যেতে পারল না। সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই দুঃস্বপ্ন। এই লোকটি তার গায়ে হাত দিচ্ছে কেন? এ কে? আমি চিৎকার করতে চাই। আমাকে চিৎকার করতে দাও। এই লোক আমাকে চিৎকার করতে দিচ্ছে না। মুখ চেপে ধরে আছে। আমা, আম্মা আমাকে বাঁচান আমা। আমি মরে যাচ্ছি।
পুষ্প জ্ঞান হারাল। মিজান তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে সিগারেট ধরাল। আয়নায় মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না। সিগারেটটা ধীরেসুস্থে শেষ করা যেতে পারে।
আয়নায় পুষ্পকে দেখা যাচ্ছে। অচেতন অর্ধনগ্ন একটি রূপবতী তরুণী হাত-পা এলিয়ে পড়ে আছে। শঙ্খের মতো সাদা বুক নিঃশ্বাসের সঙ্গে ওঠানামা করছে। অপূর্ব দৃশ্য! মিজান মুগ্ধ হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃশ্যটি সরাসরি দেখার চেয়ে আয়নায় দেখতে বেশি ভালো লাগছে।
মিজান সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে শোবার ঘরের দরজা ভিড়িয়ে দিল, যদিও তার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
পুষ্প অচেতন অবস্থাতেই বিড়বিড় করে তার মাকে ডাকছে।
নিশাত বলল, ছটফট করছ কেন
নিশাত বলল, ছটফট করছ কেন? চুপ করে বসে থাক। আমি যা বলছি মন দিয়ে শোন।
কটা বাজে।
পাঁচটা পঁচিশ।
ও আসছে না কেন?
আসবে। অফিস ছুটি হয় পাঁচটায়, আসতে সময় লাগবে না?
আপনি চলে যাবেন না তো?
না, আমি আছি। আমি এক সেকেণ্ডের জন্যেও এই ঘর থেকে যাব না।
আপা আমি কাঁদতে পারছি না।
তোমার কাঁদার কোনো দরকার নেই।
আর কেউ জানে না তো?
কেউ জানে না।
আপনি কাউকে বলবেন না। আপনি কাউকে বললে আমি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ব।
আমি কাউকে কিছু বলব না।
নিশাত উঠে এসে পুষ্পের গায়ে চাদর ভালো করে জড়িয়ে দিল। পল্টু চোখ বড়বড় করে মাকে দেখছে।
আপা!
বল।
পল্টু কি কিছু বুঝতে পারছে?
কিছু বুঝতে পারছে না। তুমি একটু শুয়ে থাক।
না। আপনি কিন্তু যাবেন না।
বললাম তো আমি যাব না।
কটা বাজে আপি?
পাঁচটা পঁয়ত্রিশ।
আমার কেমন যেন গা ঘিনঘন করছে। আপা আমার বমি আসছে।
বাথরুমে যাও, বমি করে আস। এস আমি নিয়ে যাচ্ছি।
পুষ্প বাথরুম পর্যন্ত যেতে পারল না, হড়হড় করে বমি করল। সেই বমির অনেকখানি এসে লাগল নিশাতের শাড়িতে।
আপা, আপনাকে নোংরা করে ফেলেছি।
কোনো অসুবিধা নেই। আমি পরিষ্কার করে নেব। তুমি যাও, হাতমুখ ধুয়ে এস।
আমি আরেক বার গোসল করব আপা।
তুমি একটু পরপর গোসল করছ। বড় একটা অসুখ বাধাবে।
আমি এখন গোসল করতে না পারলে মরে যা আপা।
পুষ্প বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। শাওয়ার খুলে দিয়েছে। প্রচণ্ড তোড়ে পানি নেমে এসেছে। পানির নিচে মাথা দিয়ে পুষ্প বসে আছে। যেন সে মানুষ নয়। পাথরের কোনন মূর্তি।
নিশাত দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে পল্টুকে কোলে করে তার নিজের ঘরে গেল। পুষ্প বাথরুম থেকে বেরুবার আগেই দ্রুত কয়েকটা টেলিফোন করা দরকার। প্রথমেই কথা বলা দরকার বাবার সঙ্গে। বাবা খুব ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধি দিতে পারবেন।
হ্যালো বাবা।
কে, নিশু বেটি? কি হয়েছে রে মা?
একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়েছে বাবা।
বল শুনি।
তুমি কি এক্ষুণি আসতে পারবে?
না, পারব না। কোমরের ব্যথা শুরু হয়েছে। কী হয়েছে বল?
আমার পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটির কথা তোমাকে বলেছি না? সেই মেয়েটি রেপড় হয়েছে। পল্টুর মা। বাবা আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?
ফরহাদ সাহেব মেয়ের কথার জবাব দিলেন না। ভ্রূ কুঞ্চিত করলেন।
বাবা!