মনসুর : তোমরা তাকে মেরে ফেল?
উত্তর : প্রাণ কি তা তোমরা জান না বলেই এই কথা বললে। প্রাণ কি জানা থাকলে বুঝতে যে প্রাণের বিনাশ নেই–রূপান্তর আছে।
মনসুর : মানুষ থেকে আমি পোকা হব?
উত্তর : ক্ষতি কি?
.
মনসুর সাহেব লক্ষ্য করলেন, তাঁর ঘরভর্তি পোকা। একটি-দুটি নয়, হাজারে হাজারে পোকা। লক্ষ কোটি পোকা কিলবিল করছে।
.
তিনি দরজা খুলে বের হতে চাইলেন। দরজা খুঁজে পেলেন না। তেলাপোকা সমস্ত দরজা ঢেকে ফেলেছে। তিনি চিৎকার করে উঠতে চাইলেন–মুখ হা করতেই অসংখ্য পোকা মুখের ভেতর ঢুকে পড়ল।
তাঁর চেতনা পুরোপুরি বিলুপ্ত হবার আগে আলতাফের কথা ভাবলেন। আলতাফকে সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলেন। তাঁর মত আলতাফকেও পোকা ঢেকে ফেলেছে। মাংস ছিঁড়ে খেতে শুরু করেছে। কত দ্রুতই না তারা খাচ্ছে। মনসুর সাহেব চেঁচিয়ে উঠতে গেলেন–এ কি করছ? তোমরা এটা কি করছ? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর হল–ভয় পেও না। ভয়ের কিছু নেই–প্রাণ এক ও অবিনাশী। তোমার প্রাণ এবং এক একটি পাকার প্রাণ আলাদা কিছু না। আমরা এক ও অভিন্ন।
তিনি বারবার নিজেকে বলছেন, এটা ভুল! এটা মায়া! এটা ভ্রান্তি! আসলে কিছুই ঘটছে না। কিছুই ঘটছে না। কিছু না।
তিনি ভয় পেলেন না। কারণ তিনি বুঝতে পারছেন, আসলে কিছুই ঘটছে না। সবই ভ্রান্তি এবং এক ধরনের হেলুসিনেশন। নিজেকে সামলাতে পারলেই হেলুসিনেশনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিজেকে সামলাতে হবে। মনসুর সাহেব চোখ বন্ধ করে বললেন, আমি কিছু দেখছি না। আমি কিছু দেখছি না। তিনি মায়ার ভেতর খিক খিক হাসি শুনলেন। পোকার কি হাসে? এ কেমন হাসি? মাথার ভেতর তাঁকে পোকারা ডাকছে–মনসুর! মনসুর!
বল।
আমরা আছি। আমাদের অগ্রাহ্য করো না।
তোমরা আছ ঠিকই, কিন্তু এখন আমি যা দেখছি সবই ভুল।
না, ভুল নয়। আমাদের ক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করো না। তুমি কেন রোদের দিকে তাকাতে পার না? কেন সব সময় চোখে কালো চশমা দিয়ে রাখি তা কি বলব? তাহলে বিশ্বাস করবে?
না, বিশ্বাস করব না।
লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি পোকা মনসুর সাহেবের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মনসুর জানেন এটা সত্যি নয়। এক ধরনের মায়া, কুহক, ভ্রান্তি। কিন্তু আসলেই কি তাই?