কী কথা শুনতে চাও?
যা ইচ্ছা বল। তার আগে কাছে আস তো আমি তোমার চুল আঁচড়ে দিই। নাকি আমি চুল আঁচড়ে দিলে লজ্জা লাগবে?
না লজ্জা লাগবে না।
মবিন এগিয়ে এল। খুব কাছে এল না। মাথা এগিয়ে দিল। যেন গায়ের সঙ্গে গা লেগে গেলে মস্ত বড়ো অন্যায় হয়ে যাবে। মিতু চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল, তুমি কি ঝুমুরের জন্যে একটা ছেলে যোগাড় করে দেবে? আমি ওর বিয়ে দিয়ে দেব।
বাচ্চা মেয়ে বিয়ে দেবে কেন?
ওরা এখনই বিয়ে হওয়া ভালো। বিয়ে হলে মা মানসিক শান্তি পাবেন। মা ওকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করেন। মা’কে আমি অবশ্যি বলেছি আমানুল্লাহ নামের এক ছেলে ঝুমুরকে বিয়ে করতে চায়। এতেই মা খুশি।
আমানুল্লাহ কে?
মিতু হাসতে হাসতে বলল, আমানুল্লাহ কেউ না। আমার বানানো এক নাম। মা’কে খুশি করার জন্যে গল্পটা তৈরি করা।
তিনি খুশি হয়েছেন?
হ্যাঁ খুশি হয়েছেন। অভিনয় তো আমি ভালো পারি–যাই বলি এত সুন্দর করে বলি, সবাই বিশ্বাস করে।
আমার বেলাতেও তাই করা?
না।
কখনো না?
মাঝে মাঝে করি। যখন করি তখন খুব খারাপ লাগে।
মবিন হাসছে। মিতুও হাসছে। মিতু বলল, চুল আঁচড়ানোটা ভালো হয় নি। এস আবার আঁচড়ে দিই। এরকম শক্ত হয়ে থাকবে না–আমার শরীরে কুষ্ঠ হয় নি যে ছোঁয়া লাগলে তোমার ক্ষতি হবে।
মবিন হড়বড়িয়ে বলল, কী যে তুমি বল!
ঠিকই বলি–তুমি আমার সঙ্গে সব সময় এমন ভাব করা যেন আমি তোমার ছাত্রী। তুমি আমাকে পড়াচ্ছ এবং আমার মা একটু দূরে বসে পড়ানো কেমন হচ্ছে লক্ষ করছেন।
মবিন হাসল।
মিতু কঠিন গলায় বলল, আমি সামান্য এক্সট্রা মেয়ে হতে পারি। কিন্তু আমার হাত দু’টা সুন্দর। সুন্দর না? দেখা কী সুন্দর লম্বা লম্বা আঙুল!
সে তো সব সময়ই দেখছি।
হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখ। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলে তোমার মান যাবে?
মবিন বিস্মিত হয়ে বলল, আজ তোমার কী হয়েছে বল তো?
কিছু হয় নি। হবার মধ্যে যা হয়েছে তা হলো তোমার দেয়া শাড়িটা পরেছি। বেগুনি রং আমার অসহ্য কিন্তু শাড়িটা পরার পর নিজেকে এত সুন্দর লাগছে কেন কে জানে। আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠেছি। তোমার কাছে কি আমাকে সুন্দর লাগছে না?
লাগছে।
সত্যি লাগছে, না আমাকে খুশি করার জন্যে বলছ?
সত্যি লাগছে।
তাহলে তোমার আজ ভয়ঙ্কর বিপদ।
তার মানে?
আমি আজ কোথাও যাব না। সারারাত গল্প করব। যদি ঘুম পায় তোমার এই খাটে তোমার পাশে শুয়ে থাকব। তোমার কি একটাই বালিশ?
মবিন তাকিয়ে আছে। তার চোখে পলক পড়ছে না। মিতু বলল, এভাবে তাকিয়ে থাকবে না। আমি মন ঠিক করে এসেছি।
তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।
মিতু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তাই বোধহয়। ক’টা বাজে দেখ তো?
সাতটা।
তুমি ওঠ, স্যান্ডেল পরে নাও। আমাকে বাসে তুলে দেবে। রাতে আমার শুটিং আছে। এতক্ষণ ঠাট্টা করছিলাম। আমি কী সুন্দর অভিনয় পারি দেখলে তো? আমার কথা বিশ্বাস করে ভয়ে ঘেমে-টেমে একেবারে অস্থির। এত ভয় পাচ্ছিলে কেন?
না মানে, লোক জানাজানি হলে তোমার অসম্মান। আজ রাতে তোমার শুটিং?
হুঁ। কিছু প্যাঁচওয়ার্ক দরকার পড়ে গেল। নরমাল টাইমে শিডিউল পাচ্ছিল না। আজই শেষ।
শেষ হলেই ভালো। সারারাত জেগে কাজ করা কী বিশ্ৰী ব্যাপার!
সবাই সুশ্ৰী ব্যাপার করবে তা তো হয় না। কাউকে কাউকে বিশ্ৰী ব্যাপারও করতে হয়। আমরা কিন্তু রিকশা নেব না। হেঁটে হেঁটে বাসস্টেশন পর্যন্ত যাব। আমার হাঁটতে ইচ্ছা করছে।
অনেকখানি রাস্তা তো।
অনেকখানি রাস্তাই তোমার সঙ্গে হেঁটে পার হব। তুমি আমার হাত ধরে থাকবে। অন্ধকার রাস্তা–কেউ দেখবে না।
মনিব বলল, চল তোমাকে এফডিসি পর্যন্ত দিয়ে আসি।
কোনো দরকার নেই। আমি একাই যাব।
আমি সঙ্গে গেলে অসুবিধা আছে?
আছে। এক্সট্রাদের সঙ্গে যে সব পুরুষ মানুষ থাকে তাদের দালাল দালাল মনে হয়। আমি তোমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলে সবাই আড়চোখে তোমাকে দেখলে, আমার অসহ্য লাগবে। আমাদের বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে যাব। পরিচিত সবাইকে ক্যান্টিনে চা-টা খাইয়ে দেব। তুমি কী বল?
সেটা মন্দ না।
তারা বাসস্টেশনে চলে এসেছে। ঢাকা যাবার বাস আসছে দেখা যাচ্ছে। মিতু বিষন্ন ভঙ্গিতে বলল, এতটা রাস্তা আমরা পাশাপাশি হেঁটে এলাম, তুমি কিন্তু একবারও আমার হাত ধর নি।
ও সরি। দেখি তোমার হাত।
থাক দেখতে হবে না। বাস চলে এসেছে।
দিলদার খাঁ দরজা খুলেই বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল, এতক্ষণে। ক’টা বাজে জান?
রেশমা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, বাস পথে জ্যামের মধ্য পড়েছে। অ্যাকসিডেন্টের জন্যে এয়ারপোর্ট পুরা দুঘণ্টা বন্ধ। কী করব বলুন।
রাত বাজে এগারটা, পার্টি এতক্ষণ তোমার জন্যে বসে থাকবে? আমার নিজেরও একটা বদনাম হয়ে গেল। কথা রাখতে পারলাম না।
সরি দিলদার ভাই।
এখন সরি বলে লাভ কী? রাত ন’টা পৰ্যন্ত পার্টিকে ধরে রেখেছি। তারপর বাধ্য হয়ে অন্য ব্যবস্থা করেছি। হুট করে তো কাউকে পাওয়া যায় না। পার্টির পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার আছে।
রেশমা বলল, আমি এখন কী করব?
কী আর করবে? বাসায় চলে যাবে।
এত রাতে বাসায় যাব না। ভোরবেলা যাব। রাতটা আপনার বাসায় থেকে যাই।
দিলদার বিরক্ত গলায় বলল, আরো সর্বনাশ! বাসায় থাকতেই পারবে না। তোমার ভাবি এইসব ব্যাপারে অসম্ভব স্ট্রিক্ট।
বসার ঘরের সোফায় শুয়ে থাকব।