লাল রঙের টয়োটা সিভানের শখ?
আরে ভাই ছিঃ ছিঃ আমার এই পাগলি মেয়ের কথার কোনো গুরুত্ব দেবেন না। যদি কিছু দিতে হয় একটা কোরান শরিফ দেবেন। মোবারক সাহেব।
জ্বি।
মেয়ের লাল গাড়ির শখের কথা আপনাকে বলা উচিত হয় নি। আপনি তো আবার ছেলেমেয়ের শখের অত্যধিক গুরুত্ব দেন–ভাই শুনুন আমার নিজের ব্যক্তিগত ধারণা–আল্লাহপাকের পাক কালামের চেয়ে ভালো গিফট কিছুই হয় না। এখন এর কারণে আপনারা আমাকে প্রাচীনপন্থী মনে করেন বা না করেন–কিছু যায় আসে না…
আফসারউদ্দিন খাঁ সাহেবও রেহানার মতো দীর্ঘ সময় কথা বললেন। মোবারক সাহেব ছাড়া পেলেন আধঘণ্টা পর। পিএকে বললেন–নোট করে রাখুন মন্ত্রী আফসারউদিনের মেয়ের বিয়ে ২৫ তারিখ। সেনাকুঞ্জে। বিয়ের টাইমটা জেনে নেবেন। গিফট আইটেম–একটা কোরান শরিফ সুন্দর করে র্যাপিং পেপারে মোড়া।
কোরআন শরিফ?
হ্যাঁ।
মোবারক সাহেব মনে মনে হাসলেন। মন্ত্রী আফসারউদিনের সঙ্গে এই রসিকতা করা যায়। সে নিশ্চিত ধরে নিয়েছে লাল রঙের টয়োটা সিভান আসছে। সে জানে না। এই জগতের কোনো কিছুই নিশ্চিতভাবে নেয়া ঠিক না। জগতের কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়।
ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে চিঠি
ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে চিঠি এসেছে। রফিক লিখছে–সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার শরীর খারাপ। মা যেন একবার তাকে দেখতে যায়।
শাহেদাকে সেই চিঠি দেখানো হয়েছে। তিনি কিছু বলেন নি। ঝুমুর বলল, তুমি কি দেখতে যাবে? শাহেদা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়েছেন। সেই প্রশ্নেরও জবাব দেন নি। ঝুমুর বলল, তুমি যদি যেতে চাও, আপাকে বলতে হবে। দেখা করতে চাইলেই তো দেখা হয় না। ঘুস-টুস খাওয়াতে হয়। আগে থেকে না জানালে আপা ব্যবস্থা করবে কীভাবে? শাহেদা তারপরেও জবাব দিলেন না। ঝুমুর বলল, তুমি কি আপার সঙ্গে কথা বলবে? আপা ঘরেই আছে। আজ সে কোথাও যাবে না।
তুই স্কুলে যা। তোকে এত কথা বলতে হবে না।
আমি আজ স্কুলে যাব না। আপার সঙ্গে সারাদিন গল্প করব।
কর যা ইচ্ছা।
মিতু দরজা ভিজিয়ে শুয়ে আছে। ছোট বোনের সঙ্গে গল্প করার ব্যাপারে তার তেমন আগ্ৰহ দেখা যাচ্ছে না। ঝুমুর কয়েকবার কাছে গেল, বিছানার পাশে বসল। মিতু তাকিয়ে দেখল–কিছু বলল না
আপা মাথা বিলি দিয়ে দেব?
মিতু না-সূচক মাথা নাড়ল।
শুয়ে আছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
শরীর খারাপ লাগছে না। শরীর ভালোই, আরাম করছি। বিকেল পর্যন্ত শুয়ে থাকব।
তারপর?
বিকেলে বেরুব।
ঝুমুর আপার চোখের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, রাতে শুটিং আছে?
হুঁ।
সারারাত শুটিং চলবে?
মিতু হাঁ-সূচক মাথা নেড়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে পাশ ফিরল। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, ঝুমুর তুই কি আমার একটা কাজ করে দিবি?
অবশ্যই দেব।
একটা চিরুনি কিনে আনবি। সুন্দর একটা চিরুনি।
চিরুনি দিয়ে কী করবে?
চিরুনি দিয়ে মানুষ কী করে।
তোমার তো চিরুনি আছে এই জন্যেই জিজ্ঞেস করছি।
মবিন ভাইকে দেব। ঐ দিন দেখলাম ওর চিরুনি নেই।
আমিও তাই আন্দাজ করছিলাম।
জানালার পর্দা টেনে দে তো।
ঝুমুর উঠে পড়ল। জানালার পর্দা টেনে দিতে বলার অর্থ–আমি এখন ঘুমুব। আপা তাকে খুব ভদ্রভাবে বলছে, তুই উঠে চলে যা।
আপা তুমি চা খাবে? চা বানিয়ে আনব?
না।
ঝুমুর ইতস্তত করে বলল, তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আপা, জরুরি কথা।
বল।
আমি এই বছর পরীক্ষা দেব না। সামনের বছর দেব।
মিতু কিছু বলছে না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে সে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আপা আমি একদম পড়াশোনা করতে পারছি না। বই নিয়ে বসি অন্য কথা ভাবি। সামনের বছর আমি খুব মন দিয়ে পড়ব। পরীক্ষায় দেখবে খুব ভালো করব। ঠিক আছে আপা?
মিতু চোখ না মেলেই বলল, আমার হ্যান্ডব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে একটা চিরুনি কিনে না।
এখনি যাব?
এক সময় গেলেই হবে।
পরীক্ষার ব্যাপারে তো তুমি কিছু বললে না।
মিতু চাপা গলায় বলল, পরীক্ষা দেয়া না-দেয়া তোর ব্যাপার। আমার আর বলার কী আছে?
রাগ করছ না তো?
না। তুই এখন ঘর থেকে যা।
ঝুমুর চিরুনি কিনতে বের হয়ে গেল। তখন ঘরে ঢুকলেন শাহেদা। তাঁর হাতে চায়ের কাপ। পিরিচে দু’টা বিসকিট। মিতু বিছানায় উঠে বসতে বসতে বলল, চা খাব না। মা। তুমি খেয়ে ফেল। বিসকিটও খাব না।
সকালে নাশতাও খাস নি। খিদে জমাচ্ছি। দুপুরে এক গামলা ভাত খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমুব।
শাহেদা মেয়ের পাশে বসে চা খাচ্ছেন। মিতু বলল, বিসকিট খাও মা। তোমার খাওয়া দেখি।
খাওয়া দেখার কী আছে?
অনেক কিছুই আছে। পৃথিবীর সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো খাওয়া। সেই খাওয়া দেখাটা তুচ্ছ করার মতো কিছু না।
বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছে, শুনেছিস?
হুঁ। ঝুমুরের কাছে শুনলাম।
বাড়ি দেখেছিস?
না।
এক তারিখের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে তো।
বললেই তো বাড়ি ছেড়ে দেয়া যায় না।
আমি বলেছি ছেড়ে দেব।
বলেছ, ভালো করেছ। আমি বুঝিয়ে বলব।
আমি এখানে থাকতে চাই না। লোকজন আজেবাজে কথা তোর নামে ছড়াচ্ছে।
যেখানে যাবে সেখানেও তো ছড়াবে।
শাহেদা চুপ করে গেলেন। চায়ে বিসকিট ভিজিয়ে তিনি বিসকিট খাচ্ছেন। মিতু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
আজ রান্না কী মা?
নলা মাছ নিয়ে এসেছিল। রাতে খাবি। দুপুরে ডাল ভাত।
দুপুরেই রাঁধ মা। আরাম করে খাই। রাতে আমি থাকব না। রাতে শুটিং আছে।