না।
সারাদিন সে করে কি?
কিছুই করে না। আজ সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টিতে ভিজেছে পুরো চারঘণ্টা।
খুবই সন্দেহজনক।
সন্দেহজনক কেন?
সে যে একটা অদ্ভুত কিছু এইটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে বিরাট ফ্রড। তোমাদের সাবধান থাকা উচিত।
আমার মনে হয় না সে ফুড। বরং আমার মনে হয় একটা ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার।
ইয়ং লেডি ফর ইওর ইনফরমেশন–পৃথিবীতে ফ্রড মাত্রই ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার হয়। বিরক্তিকর কোন মানুষ ফ্রড হতে পারে না। আমি লোকটার সঙ্গে আলাপ করে আসি। আশা করি জেগে আছে। তুমি কি যাবে আমার সঙ্গে? এষা নাসূচক মাথা নাড়ল। জুবায়ের একাই রওনা হল।
মিস্টার জুলাই জেগে ছিল। বিছানায় বসে গভীর মনোযোগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী পত্রিকার পাতার দিকে তাকিয়ে আছে।
জুবায়ের ঘরে ঢুকেই বলল, কেমন আছেন?
জি ভাল।
আমার নাম মোহম্মদ জুবায়ের। আপনার নাম কি জানতে পারি।
আমার নাম জুলাই। তিনদিন পর নাম বদল হবার সম্ভাবনা আছে। বসুন।
বসব না–দুএকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি।
জিজ্ঞেস করুন। তবে আমার মনে হয় আপনার বেশীর ভাগ প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারব না।
জবাব দিতে পারবেন না এমন কোন প্রশ্ন আমি আপনাকে করব না। তবে ইচ্ছা করে জবাব না দিলে তো কিছুই করার নেই।
আমি যা জানি আপনাকে বলব। অবশ্যই বলব।
পাগল সাজার চেষ্টা করছেন কেন?
কথা ঠিক বুঝতে পারছি না।
শুনলাম চারঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজেছেন। আপনার এই কাজের পেছনে পাগল সাজার সূক্ষ্ম চেষ্টা লক্ষ্য করছি। কারণটা জানতে চাচ্ছি।
মিস্টার জুলাই শান্ত গলায় বলল, আপনি বোধ হয় একটা জিনিস জানেন না–পাগলরা কখনো বৃষ্টিতে ভিজে না। পানি আর আগুন–এই দুটা জিনিসকে পাগলরা ভয় পায়। এই দুটা জিনিস থেকে এরা অনেক দূরে থাকে। কখনো শুনবেন না কোন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে বা আগুনে ঝাপিয়ে পড়েছে। জুবায়ের প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বলল, আপনি কি সিগারেট খান?
না।
একটা খান আমার সঙ্গে। খেয়ে দেখুন কেমন লাগে।
লোকটা সিগারেট নিল। আগুন ধরিয়ে টানতে লাগল।
জুবায়ের বলল, আপনার কয়েকটা জিনিস আমি মিলাতে পারছি না। দুয়ে দুয়ে চার হচ্ছে না। আপনি বলছেন আপনার আগের কথা কিছুই মনে নেই। স্মৃতি-বিলুপ্তি ঘটেছে। অথচ পাগল পানি এবং আগুন ভয় পায় এটা মনে আছে। একটা মনে থাকবে, একটা থাকবে না তা কেমন করে হয়।
লোকটা জবাব দিল না। নিজের মনে সিগারেট টানতে লাগল।
জুবায়ের চলে যাবার আগে এষাকে বলে গেল–সাবধান থাকবে। খুব সাবধান। খুবই সন্দেহজনক ক্যারেকটার। তোমার বাবাকে বলবে–অতি দ্রুত তিনি যেন লোকটাকে ডিসপোজ করার ব্যবস্থা করেন। লোকটার কোন একটা বদ মতলব আছে।
এষা হাসতে হাসতে বলল, তোমার কি ধারণা–কি করবে সে? গভীর রাতে আমাদের খুন করে পালিয়ে যাবে?
বিচিত্র কিছু না। করতেও তো পারে।
লোকটাকে দেখে খুনী খুনী মনে হয় না। ফর ইওর ইনফরমেশন ইয়াং লেডি–খুনীদের আলাদা কোন চেহারা হয়
ফর ইওর ইনফরমেশন ইয়াং ম্যান–রাত পৌনে বারটা বাজে–তোমার এখন চলে যাওয়া উচিত।
আমি যাচ্ছি–কিন্তু আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি–বি কেয়ারফুল, নেভার ট্রাস্ট এ স্ট্রেঞ্জার।
সুরমা খেতে বসেছেন। খাবার ঘরে শুধু তিনি এবং মতিন সাহেব। সুরমা খাবার সময় কথাবার্তা বিশেষ বলেন না। কেউ কথা বললে, এমনভাবে তাকান যেন বিরক্ত হচ্ছেন। মতিন সাহেব বললেন, মাথাব্যথা কমেছে?
সুরমা তাঁর দিকে না তাকিয়েই বললেন, না।
রোজ রোজ মাথা ধরে এটা তো ভাল কথা না। একজন ডাক্তার দেখাও। সাধারণত চোখের কোন প্রবলেম হলে মাথা ধরে। তোমার কি চোখের কোন সমস্যা আছে।
জানি না, থাকতে পারে।
কাল আমার সঙ্গে চল–আমার চেনা একজন চোখের ডাক্তার আছেন।
কাল আসুক তখন দেখা যাবে।
সুরমা উঠে পড়লেন। প্লেটে খাবার পড়ে আছে। অল্প কিছু মুখে দিয়েছেন। তাঁর বমি বমি আসছে। বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বললেন, তোমার ঐ লোকের কোন গতি করতে পারলে?
না।
সে কি স্থায়ীভাবে এই বাড়িতেই থাকবে?
না–তা কেন। কয়েকটা দিন দেখে–বিদেয় করে দেব।
মিতু ওর সঙ্গে মাখামখি করে, আমার এটা পছন্দ না।
মিতুকে নিষেধ করে দিও।
তোমার ছেলেমেয়েরা কেউ আমার কথা শুনে না–ওদের কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। হরিপ্রসন্ন বাবু এসেছেন, জান?
এষা বলেছে।
কি জন্যে এসেছেন তা জান?
না।
সুরমা কঠিন মুখে বললেন, কোথাও থাকার জায়গা নেই বলে এসেছেন। তাঁর ধারণা তিনি অল্প কিছুদিন বাঁচবেন। সেই অল্প কিছুদিন–এই বাড়িতে থাকতে চান।
তুমি না করে দিয়েছ তো?
আমি না করব কেন? অপ্রিয় কাজগুলি তুমি সব সময় আমাকে দিয়ে করাতে চাও। এটা ঠিক না। তোমার যদি কিছু বলার থাকে তুমি বলবে।
হরিপ্রসন্ন বাবুর সঙ্গে
হরিপ্রসন্ন বাবুর সঙ্গে মতিন সাহেবের যোগাযোগের একমাত্র সূত্র হচ্ছে–মতিন সাহেবের বড় মেয়ে নিশা। হরিবাবু নিশাকে কিছুদিন অংক শিখিয়েছেন। নিশার কোন শিক্ষকই বেশীদিন পছন্দ হয় না। তাঁকেও পছন্দ হয় নি। সে দুমাস অংক করেই বলল, বাবা উনাকে বদলে দাও।
মতিন সাহেব বলেছিলেন, কেন মা? এত ভাল টিচার…
নিশা ঘাড় বাঁকিয়ে বলল, উনি কেমন করে জানি তাকান আমার ভাল লাগে। মতিন সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, কেমন করে তাকান?
আমি তোমাকে বলতে পারব না।
মতিন সাহেবের বিস্ময়ের সীমা রইল না। তাঁর মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনি হরিবাবুকে ছাড়িয়ে দিলেন।