কে দেবে চড়?
কেউ দিতে রাজি না থাকে আমি দেব।
আচ্ছা চলে এস। এসে চড় দিয়ে যাও।
এষা টেলিফোন রেখে জানালার পাশে চলে গেল–লোকটা এখনো বৃষ্টিতে ভিজছে। এই কাণ্ড সে কি ইচ্ছা করে করছে? দেখাতে চাচ্ছে–তার মাথা ঠিক নেই?
সাবের বারান্দায় হাঁটছিল।
হাঁটতে হাঁটতে সারা দুপুর যা পড়েছে তা মনে করার চেষ্টা চলছে। বেশীর ভাগই মনে পড়ছে না। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তার ধারণা, ব্রেইন পুরোপুরি গেছে। আধঘন্টা আগের পড়া জিনিসও কিছুই মনে নেই।
কিছুক্ষণ আগে সে ডায়েট সম্পর্কে পড়ছিল। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের কি কি মিনারেল লাগে, কতটুকু লাগে। সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। মনে করার চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না।
ক্যালসিয়াম ও দৈনিক ১ গ্রাম। WHO বলছে তারচে কম হলেও চলে ০.৪ থেকে ০.৭।
আয়রণ : ১৫ মিলিগ্রাম আয়োডিন : ০১ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ও ১ গ্রাম।
আসল জিনিসটাই মনে আসছে না সোডিয়াম কতটুকু দরকার। অনেকখানি। দৈনিক খাবার লবণ শরীরে যাচ্ছে–দরকার কতটুকু? এই লবণের সঙ্গে আবার ব্লাড প্রেসার জড়িত। ফ্লোরিনও তো দরকার। কতটুকু? একটু আগে পড়া অথচ কিছুই মনে পড়ছে না। সাবেরের প্রায় কান্না পাচ্ছে।
মিতু একতলা থেকে দোতলায় উঠে এল। বারান্দায় সাবেরকে হাঁটাহাঁটি করার দৃশ্য সে খানিকক্ষণ দেখে–সহজ স্বরে বলল, ভাইয়া তুমি বৃষ্টিতে ভিজছ
সাবের তার দিকে তাকাল। কিছু বলল না। তার চোখে-মুখে সুস্পষ্ট বিরক্তি। সোডিয়াম ইনটেকের পরিমাণ মনে করতে হবে। যেভাবেই হোক মনে করতে হবে। মিতু আবার বলল, ভাইয়া, তুমি বৃষ্টিতে ভিজে ন্যাতা ন্যাতা হয়ে গেছে।
বিরক্ত করিস নাতো।
তোমাকে কি রকম যেন পাগলের মত লাগছে।
তাই নাকি?
হুঁ।
সাবের এই প্রথম লক্ষ্য করল বৃষ্টির ছাটে সে সত্যি সত্যি অনেকখানি ভিজেছে। ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। ঠাণ্ডা লাগলে অনেক রকম কমপ্লিকেশন। শরীরের ডিফেন্স সিসটেম দুর্বল হয়ে যাবে। ভাইরাস জেঁকে ধরবে। ইনফ্লুয়েনজা,
আচ্ছা ইনফ্লুয়েনজা ভাইরাসের নাম কি যেন।
মিতু।
কি?
আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?
হ্যাঁ। অল্প একটু বাকি। পুরোপুরি পাগল হলে তুমি কি করবে?
জানি না।
মিস্টার জুলাই-র মত বৃষ্টিতে বসে বসে ভিজবে?
মিস্টার জুলাইটা কে?
ঐ দেখ কাঁঠাল গাছের নীচে বসে ভিজছে।
লোকটা কে?
কেউ জানে না কে। আমরা যখন ময়মনসিংহ থেকে আসছিলাম তখন গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে ফেলে দেই। প্রথম ভাবলাম মরে গেছে। কিন্তু মরে নাই। বাসায় নিয়ে এসেছি। এই লোকটাও তোমার মত কিছু মনে রাখতে পারে লো।
কতদিন হল আছে?
চারদিন হয়ে গেল।
আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি।
তোমাকে বলে কি হবে?
সাবের দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তাও ঠিক। আমি নিজের যন্ত্রণাতেই অস্থির। অন্যের যন্ত্রণা নিয়ে চিন্তার সময় আমার কোথায়। সাবের বলল, মিতু তুই আমাকে চা খাওয়াতে পারবি?
না।
কাজের মেয়েটাকে বলে আসতে পারবি তো? নাকি তা-ও পারবি না।
তা-ও পারব না। আমি দোতলা থেকে মিস্টার জুলাইকে দেখব।
একটা মানুষ বৃষ্টিতে ভিজছে তার মধ্যে দেখার কি আছে?
লোকটা পাথরের মত বসে আছে। একটুও নড়ছে না। কখন নড়ে সেটা দেখব। বারান্দার লাইটটা জ্বালিয়ে দাও তো ভাইয়া লোকটার গায়ে আলো পড়ুক।
সাবের বাতি জ্বালিয়ে দিতেই লোকটার উপর আলো পড়ল। সাবের বিরক্ত হয়ে বলল, তুই না বললি লোকটা পাথরের মত বসে আছে, নড়ছে না। ঐ তো নড়ছে। সত্যিই তাই। লোকটা মাথার পানি ডান হাতে মুছছে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে সাবেরের দিকে তাকাল।
মিতু, ভদ্রলোকের নাম কি বললি?
মিস্টার জুলাই। আর তিনদিন পর উনার নাম হবে মিস্টার আগস্ট।
আমি বোধহয় পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছি, তোর কথাবার্তা কিছুই বুঝছি না। আর তিনদিন পর তার নাম মিস্টার আগস্ট হবে কেন?
ভাইয়া, তোমার সঙ্গে আমি এত কথা বলতে পারব না। তুমি কোন কিছু বুঝিয়ে বললেও বোঝ না।
মিতু বারান্দার এক কোণায় চলে গেল। এখান থেকে লোকটাকে ভাল দেখা যায়। সাবের নীচে গেল। সে নীচে নামল কাজের মেয়েটিকে চায়ের কথা বলার উদ্দেশ্যে। নীচে নেমে তা মনে রইল না। বাগানে নেমে গেল। মিস্টার জুলাই-এর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছা করছে। তিনদিন পর তার নাম মিঃ আগস্ট কেন হচ্ছে তা জানা দরকার। জেনে ফেলার একটা বিপদও আছে–মস্তিষ্কের মেমোরী সেলে ইনফরমেশনটা থেকে যাবে। অপ্রয়োজনীয় ইনফরমেশন। প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন রাখার জায়গা টান পড়ে যাবে।
বৃষ্টি এখন আর আগের মত পড়ছে না। গুঁড়ি গুঁড়ি পড়ছে। লোকটা বসেই। আছে। সাবের তার কাছাকাছি এগিয়ে গেল। বিস্ময়মাখা গলায় বলল, ভাই আপনি কে?
লোকটি ঘাড় ঘুরিয়ে পরিচিত ভঙ্গিতে তাকাল। যেন এই হাসির মধ্যেই তার পরিচয় লুকানো। সাবের বলল, আপনার নাম কি মিস্টার জুলাই?
জ্বি।
আপনাকে একটা জরুরী কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম এখন মনে করতে পারছি না–।
লোকটি হাসি মুখে বলল, আপনি জিজ্ঞেস করতে এসেছিলেন তিনদিন পর আমার নাম মিস্টার আগস্ট কেন হবে।
হ্যাঁ তাই–তাই। আপনি বুঝলেন কি করে? আপনি কি থট রিডিং জানেন? :
না। আপনি দোতলার বারান্দায় মিতুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমি শুনতে পেলাম। উপর থেকে কথা বললে অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়।
আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন কি জন্যে?
ভিজতে ভাল লাগছে এই জন্যে ভিজছি।
ঠাণ্ডা লাগবে তো। একবার ঠাণ্ডা লেগে গেলে বিরাট সমস্যায় পড়বেন। কোড ভাইরাস আক্রমণ করবে। ইনফ্লুয়েনজা। সেখান থেকে রেসপিরেটরী ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। আমি একজন ডাক্তার।