মিস্টার আগস্ট এখন তোমাকে ডাক্তারী শেখাচ্ছেন?
তা না, শিখতে সাহায্য করছেন। সাহায্যটা আমার খুব কাজে আসছে।
সাহায্য করার এই তো নমুনা–সবগুলি অসুখ নিজের হতে হবে।
তা ঠিক।
ক্যান্সার সম্পর্কে জানার জন্যে তাহলে তো ক্যান্সার হওয়া দরকার।
অবশ্যই দরকার।
তোমার শিক্ষাগুরু মিস্টার আগস্ট কি বিনা পয়সায় তোমাকে শিখাচ্ছেন না। যৎকিঞ্চিৎ ফি নিচ্ছেন?
ফি-টি কিছু না। ইন-রিটার্ন আমি উনাকে ইংরেজী শেখাচ্ছি। তাঁর স্মৃতিশক্তি খুব ভাল। দ্রুত শিখে ফেলেছেন। এখন উনাকে বলেছি শব্দভাণ্ডার বাড়াতে। ডিকশনারী মুখস্থ করতে বলেছি।
ডিকশনারী মুখস্থ করতে বলেছ?
হ্যাঁ। আমার যেমন স্মৃতিশক্তি বলে কিছু নেই উনার আবার উল্টো ব্যাপার। অসম্ভব ভাল স্মৃতিশক্তি। এর কারণও খুঁজে বের করেছি।
কি কারণ?
কারণ হল উনার আগের কোন স্মৃতি নেই। ব্রেইনের মেমোরী সেল সব খালি। সেই খালি জায়গাগুলিতে উনি ইনফরমেশন ঢুকিয়ে রেখে দিচ্ছেন।
এষা উঠে দাঁড়াল। সাবের বলল, তুই একটা কাজ করবি এষা, উনাকে এখানে পাঠাবি?
এষা অবাক হয়ে বলল, এখানে? বাইরের একজন মানুষকে তুমি দোতলার শোবার ঘরে নিয়ে আসবে?
উনি তো আসেন প্রায়ই।
এষা বিস্মিত হয়ে বলল, প্রায়ই আসেন মানে?
গভীর রাতে আসেন। তোরা সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকিস তখন আসেন। গল্প-গুজব করি। কাল রাতে তিনটার দিকে এসেছিলেন।
দাদা শোন, আর কখনো তুমি তাঁকে এখানে আসতে বলবে না। কখনো না।
তুই রাগ করছিস কেন? চমৎকার একজন মানুষ …
চমৎকার মানুষ হোক আর না হোক। তুমি তাকে আসতে বলবে না।
আমি আসতে বলি না তো। উনি নিজে নিজেই চলে আসেন।
নিজে নিজেই চলে আসেন? কি বলছ তুমি এসব?
আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুই নিজেই উনাকে জিজ্ঞেস করে আয়।
এষা নীচে নেমে গেল। মনে মনে ঠিক করে রাখল কঠিন কিছু কথা বলবে। বাড়ি থেকে চলে যেতেও বলবে। মনে হচ্ছে এই লোকটা সমস্যা সৃষ্টি করবে। হয়তো ইতিমধ্যে করেও ফেলেছে। মিতু বলছে তার নাম, তিন হাজার ছয়শ চুয়ান্ন। এই নামে না ডাকলে সে কথা বলছে না। এসবের কোন মানে হয়?
এষাকে দেখে লোকটা উঠে দাঁড়াল। তার হাতে সত্যি সত্যি একটা ডিকশনারী–সংসদ, ইংলিশ টু বেঙ্গলী অভিধান। লোকটা বলল, কেমন আছেন?
এষা কঠিন মুখে বলল, ভাল।
আপনি মনে হচ্ছে আমার উপর রাগ করেছেন।
রাগের ব্যাপার না। আপনার সঙ্গে আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই।
রাগ নিয়ে কথা বললে কথাগুলি গুছিয়ে বলতে পারবেন না। রাগ দূর করে কথাগুলি বলুন। কথা বলা শেষ হবার পর আবার রাগ করুন।
তাকি সম্ভব?
অবশ্য সম্ভব। আচ্ছা আমি বরং আপনার রাগ কমানোর ব্যাপারে সাহায্য করি। আমি এমন কিছু বলি যাতে আপনার রাগ কমে যায়।
বলুন।
আমি এই ডিকশনারীটা মুখস্থ করে ফেলেছি।
এষা বিরক্ত গলায় বলল, আপনি ডিকশনারী মুখস্থ করেছেন খুবই ভাল কথা। এতে আমার রাগ কমবে কেন?
ডিকশনারী মুখস্থ করেছি আপনার জন্য।
আমার জন্য মানে?
আমি ইংরেজী জানি না শুনে আপনার মন খারাপ হয়েছিল। তখনি আমি ঠিক করলাম–ইংরেজী শিখব। আপনাকে খুশী করব। আমি আপনার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আপনি খুশী হয়েছেন। এখন বলুন কি বলতে চান। এখানে। বসুন, তারপর বলুন।
আপনি মিতুর নাম বদলে দিয়েছেন?
আমি বদলাইনি। সে নিজের আগ্রহেই বদলেছে।
আপনার ধারণা সংখ্যা দিয়ে নামের এই আইডিয়া একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া?
হ্যাঁ।
সমস্যাগুলি ভেবে দেখেছেন? সবার হবে এক রকম নাম …।
এটাই কি ভাল না? সব মানুষ তো আসলে এক। আমরা নানানভাবে একজন মানুষকে অন্যের থেকে আলাদা করি। তার ভিন্ন ভিন্ন নাম দেই। সংখ্যাবাচক নাম হলে আমরা বুঝব মানুষ আসলে একই রকম। শুধু সংখ্যার বেশ কম।
এষা খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ কোন যুক্তি তার মনে এল না। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, নাম মনে রাখাও একটা সমস্যা হবে। ধরুন, মিতুর সঙ্গে দশদিন আপনার দেখা হল না। তার নাম এই দশদিনে পাল্টে গিয়ে হল তিন হাজার ছয়শ চৌষট্টি। আপনার মনে থাকবে?
থাকা উচিত। যে মনে রাখতে পারবে না বুঝতে হবে তার মনে রাখার প্রয়োজন নেই।
আপনি খুবই অদ্ভুত কথা বলছেন। এইসব কথাবার্তার একটিই উদ্দেশ্য। আপনি আমাদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করছেন। ঠিক করে বলুন তো আপনি কে?
আমি মিস্টার আগস্ট।
প্লীজ দয়া করে বলুন আপনি কে?
লোকটা মুখ টিপে হাসতে লাগল।
এষা শান্ত গলায় বলল, গভীর রাতে আপনি দাদার ঘরে যান। কেন যান?
ও আমাকে ডাকে–তাই যাই।
যে আপনাকে ডাকবে আপনি তার কাছেই যাবেন?
হ্যাঁ?
আপনি কে বলুন তো? সত্যি করে বলুন তো আপনি কে?
আমি জানি না। বিশ্বাস করুন আমি জানি না।
আপনি নিশ্চয়ই দাবী করেন না যে আপনি একজন দেবদূত। আকাশ থেকে পড়েছেন।
কি যে বলেন। দেবদূত হতে যাব কেন?
এষা গলার স্বর নামিয়ে বলল, সায়েন্স ফিকশানের কোন ক্যারেক্টার না তো?
আপনার কথাটা বুঝতে পারছি না।
সায়েন্স ফিকশানে এরকম প্রায়ই পাওয়া যায়–ভবিষ্যতের একজন মানুষ টাইম মেশিনে করে অতীতে চলে এসেছেন–আপনি তেমন কেউ না তো? ম্যান ফ্রম দ্যা ফিউচার?
না–তা না। তবে …।
তবে কি?
হলে মন্দ হত না।
লোকটি মুখ টিপে হাসল। সে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তার চোখ কালো। তবু কালো চোখেও কোথায় যেন নীলচে ভাব আছে।
এষার কেন জানি ভয় ভয় করতে লাগল। যদিও সে জানে ভয়ের কোনই কারণ নেই। কাঁঠাল গাছের নীচে বসে থাকা লোকটি আধা পাগল ধরনের মানুষ। এই ধরনের মানুষ নিজস্ব ভঙ্গিতে কিছু কথাবার্তা বলে। যেসব কথাবার্তা সাধারণ মানুষের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়।