মিস্টার আগস্ট মিটি মিটি হাসছে। মিতু বলল, আপনি হাসছেন কেন?
তুমি তোমার নাম বদলে ফেলতে চাচ্ছ এই জন্যে হাসছি।
কে বলল আপনাকে নাম বদলাতে চাচ্ছি?
কে কি ভাবছে তা আমি অনুমান করতে পারি। তুমি তোমার জন্ম তারিখ বল, আমি ঠিক করে দেব তোমার নাম কি হবে।
আমার জন্ম ১১ মার্চ।
কোন সনে জন্ম সেটা বল।
মিতু বলল। লোকটা সঙ্গে সঙ্গেই বলল, তোমার নাম হল তিন হাজার ছয়শ চুয়ান্ন।
আগামীকাল আমার নাম হবে তিন হাজার ছয়শ পঞ্চান্ন।
হ্যাঁ।
মিতু নতুন নামের আনন্দ চোখে মুখে নিয়ে ঘর থেকে বেরুল। সবাইকে ব্যাপারটা জানানো দরকার। বাসার সবাইকে তো জানাবেই, স্কুলের বন্ধুদেরও জানাতে হবে। আজ ছুটির দিন হয়ে মুশকিল হয়ে গেছে। ছুটির দিন না হলে সব বন্ধুদের এক সঙ্গে বলা যেত। এখন বলতে হবে টেলিফোনে। ভাগ্যিস তার একটা টেলিফোন বই আছে। সেই বই-এ সে সবার টেলিফোন নাম্বার লিখে রেখেছে। অবশ্যি যাদের সঙ্গে ঝগড়া হয় তাদের নাম এবং টেলিফোন নাম্বার কেটে দেয়। ঝগড়া মিটমাট হলে আবার লেখে।
মিতু তার টেলিফোনের বই নিয়ে বেশ কিছু টেলিফোন করল হ্যালো শমি–আমি মিতু। কেমন আছিস ভাই?
ভাল।
আজ থেকে আমি আমার নাম বদলে ফেলেছি–এখন আমার নাম তিন হাজার ছয়শ চুয়ান্ন।
ধ্যাৎ
ধ্যাৎ না। সত্যি। আগামীকাল আমার বয়স হবে তিন হাজার ছয়শ পঞ্চান্ন। আমার যতদিন বয়স–সেটাই আমার নাম। এতে সুবিধা কি জানিস? এতে সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাবে এ জীবনে আমি কটা সূর্যাস্ত দেখেছি।
মিতু তুই পাগলের মত কথা বলছিস কেন? তোর কি জ্বর হয়েছে?
মিতু বলে তুই আমাকে আর ডাকবি না ভাই। আমার যা নাম তাই ডাকবি–তিন হাজার ছয়শ চুয়ান্ন। আচ্ছা ভাই রাখলাম।
মিতু সব মিলিয়ে চারটা টেলিফোন করল। পঞ্চমটা করতে যাচ্ছে, তখন মতিন সাহেব তাকে কাছে ডাকলেন। হাসিমুখে বললেন, হচ্ছে কি মিতু? মিতু লজ্জিত গলায় বলল, কিছু না বাবা।
টেলিফোনে কি বলছিস? আমি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে শুনলাম। যদিও অন্যের টেলিফোন কনভারসেশন শোনা খুবই অনুচিত। মনের ভুলে শুনে ফেলেছি। তুমি কি বলছ বন্ধুদের?
এখন থেকে আমার নতুন নাম বাবা। একেকটা দিন আসবে আমার নাম বদলে যাবে।
এই বুদ্ধি কার?
মিস্টার আগস্ট আমাকে বলেছেন।
মতিন সাহেবের মুখ একটু যেন গম্ভীর হল। মুখের গাম্ভীর্য ঝেড়ে ফেলে বললেন–আচ্ছা ঠিক আছে। এষাকে বল আমাকে চা বানিয়ে দিতে। মিতু চায়ের কথা বলতে গেল। মতিন সাহেব খবরের কাগজ হাতে লোকটার খোজে গেলেন। সে ঘরে নেই। কাঁঠাল গাছের নীচে বসে আছে। মতিন সাহেব মন্টুর ঘরে উঁকি দিলেন। সকাল এগারোটা বাজে। মন্টুর ঘুম ভেঙ্গেছে। সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে দাঁত ব্রাশ করছে। কেউ বিছানায় শুয়ে ব্রাশ করতে পারে তা তার ধারণার বাইরে ছিল। মন্টু দুলাভাইকে দেখে উঠে দাঁড়াল।
দুলাভাই কিছু বলবেন?
হ্যাঁ। তুমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে দাঁত মাজ এটা জানতাম না।
এটা নতুন শুরু করেছি দুলা ভাই। রাতে শোবার আগে টুথপেস্ট লাগিয়ে মাথার কাছে রেখে দেই। দাঁত-টাত মেজে একেবারে ফ্রেশ হয়ে বিছানা থেকে। নামি।
ভাল।
কি বলতে এসেছেন দুলাভাই??
তুমি ঐ লোকটাকে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসতে পারবে? কোন খোঁজ তো পাওয়া যাচ্ছে না–আর কতদিন রাখব। সে যে নিজ থেকে চলে যাবে তারও লক্ষণ দেখছি না।
আমি বরং এক কাজ করি। লোকটাকে কড়া করে বলি, গেট আউট। মামদোবাজি শুরু করেছ? পরের বাড়িতে খাচ্ছ-দাচ্ছ ঘুমুচ্ছ। স্টপ ইট, বিদায় হও।
এসব বলার কোন দরকার নেই। লোকটাকে যেখান থেকে তুলে এনেছিলাম। সেখানে রেখে এসো। গাড়ি নিয়ে যাও। আরেকটা কথা–লোকটাকে না জানানো ভাল যে, তুমি তাকে রেখে আসতে যাচ্ছ।
জানলে অসুবিধা কি?
লোকটার আজ যে এই অবস্থা তার জন্যে আমি নিজেকে দায়ী মনে করছি। আমার মধ্যে অপরাধবোধ আছে।
আপনি যা বলবেন তাই করব দুলাভাই। বিড়ালের বাচ্চা যেমন ছেড়ে দিয়ে আসে–ঠিক তেমনি ছেড়ে দিয়ে আসব। ব্যাটা আবার গন্ধ শুকে চলে না আসে।
মতিন সাহেব ইতস্ততঃ করে বললেন, যা করবে চুপচাপ করবে। বাসার কাউকে কিছু জানানোর দরকার নেই। বিশেষ করে মিতু যেন কিছু না জানে।
কেউ কিছু জানবে না দুলাভাই। আমার উপর বিশ্বাস রাখেন। রাতের অন্ধকারে মাল পাচার করে দেব।
এষা দোতলার বারান্দা থেকে দেখল লোকটা কাঁঠাল গাছের নীচে মোটা একটা বই নিয়ে বসে আছে। কি বই এত মন দিয়ে পড়ছে? একবার ভাবল নীচে নেমে জিজ্ঞেস করবে, পর মুহূর্তেই মনে হল–কি দরকার। এষা সাবেরের ঘরে ঢুকল। তিনদিন ধরে সে জ্বরে ভুগছে। লোকটার সঙ্গে সে ঘন্টাখানিক বৃষ্টিতে ভিজেছিল। লোকটার কিছু হয়নি। তার ঠাণ্ডা লেগে গেল। সেখান থেকে হল টনসিলাইটিস। এখন বুকে ব্যথা করছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এষা বলল, শরীর কেমন দাদা? সাবের বিরস মুখে বলল, সুবিধার মনে হচ্ছে না। গায়ে টেম্পারেচার আছে। ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে নিউমোনিয়ায় টার্ন নেবে।
ডাক্তার ডাকাও। ডাক্তার ডাকিয়ে চিকিৎসা করাও।
ডাক্তার কি ডাকব। আমি নিজেই ডাক্তার না?
বেশ তুমি নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে অষুধ আনাও। অষুধ এনে খাও।
খাব। একটু টাইম নিচ্ছি। দেখছি।
কি দেখছ?
অসুখটা কোন দিকে টার্ন নিচ্ছে তাই দেখছি। মিস্টার আগস্ট আমাকে বলেছেন, কোন অসুখ সম্পর্কে পুরোপুরি জানার একটাই উপায়–অসুখটা নিজের হওয়া। এখন চট করে অষুধ খেয়ে রোগ সারিয়ে ফেললে আমি জানব। কি?