আমি জানি সে আমার জন্য অনেক কিছু ছেড়েছে। আমিও কি তার জন্যে অনেক কিছু ছাড়ি নি? আমি কি তার জন্যে আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সব ছাড়ি নি? আপনি কি জানেন যে আমার চাকরি চলে গেছে? বেসরকারি কলেজের চাকরি। আমার স্ত্রী কলেজ গভর্নিং বডিকে ভয়ঙ্কর সব কথাবার্তা বলেছে। শুধু তাই না, তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়া ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে, এক মেয়েকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাজি করিয়েছেঐ মেয়ে লিখিত একটা অভিযোগ করেছে আমার সম্পর্কে। সেই অভিযোগ কি শুনতে চান? অভিযোগ হচ্ছে—একদিন বিকেলে এই মেয়ে আমার কাছে পড়া বুঝতে এসেছিল তখন নাকি আমি তার শাড়ি খুলে ফেলার চেষ্টা করেছি।
শিক্ষকতা আমার পছন্দ। আমি পড়াতে পছন্দ করি। কিন্তু আজ আমার সব গেছে। ঘরে বসে থাকি। কেরুর জীন কিনে নিয়ে আসি আর চুকচুক করে খাই।
জহির বলল, আপনি তো একটু আগে বললেন খান না; এইসব রটনা।
না পুরোপুরি রটনা না। টুথ কিছু আছে। সব সত্যির সঙ্গে যেমন মিথ্যা মেশানো থাকে তেমনি সব মিথ্যার সঙ্গেও সত্যি মেশানো থাকে। আপনি বসুন। আপনাকে একটা মজার জিনিস দেখাব।
কি দেখাবেন?
বললাম তো একটা মজার জিনিস। ইন্টারেস্টিং।
জহির বসে আছে। তার বসে থাকতে ভালো লাগছে না, আবার উঠে চলে যেতেও ইচ্ছে। করছে না। আজহার নামেরই এই মানুষটির সবাইকে মুগ্ধ করে রাখার একটা ক্ষমতা আছে।
জহির সাহেব?
জ্বি।
দেখুন তাকিয়ে, এর নাম কি বলুন?
জহির তাকিয়ে দেখল, জিনিসটির বিশেষ কোনো নাম মনে পড়ল না। বাঁকানো ধরনের একটা ছোরা। ছোরার হাতলে নানান ধরনের কারুকার্য। নীল, হলুদ কিছু পাথর বসানো।
আজহার সাহেব শান্ত গলায় বললেন, রাজপুত রমণীদের কাছে এই জিনিস থাকে। ওরা কোমরে গুজে রাখে। অরুও এটি জোগাড় করল এবং ঘোষণা করল, এটা সে কিনেছে একটা খুন করবার জন্যে। আমাকে সে খুন করবে। এখন বলুন, আপনাকে আপনার স্ত্রী এই কথা বললে আপনার শুনতে কেমন লাগত?
জহির বলল, অরু খুব রসিকতা করে।
আপনার সঙ্গে সে কি কখনো রসিকতা করেছে?
না।
তাহলে আমার সঙ্গে তার কিসের রসিকতা? আমি কি তাকে পা ধরে সেধেছিলাম, এস তুমি আমাকে বিয়ে করে উদ্ধার কর? না কখনো না। সে সায়েন্সের মেয়ে, আমি পড়াই ইতিহাস। তার এক বান্ধবীর সঙ্গে কী মনে করে সে আমার একটা ক্লাস করতে এল-গল্পটা কি আপনি শুনতে চান?
বলুন।
আমি পড়াচ্ছিলাম সম্রাট অশোক এবং সম্রাট প্রিয়দর্শিনী। দুজন কি আসলে এক, না ভিন্ন? কে সম্রাট অশোেক, কে প্রিয়দর্শিনী? আমি ক্লাসে নানান ধরনের ড্রামা করতে পছন্দ করি। কিছু প্রাচীন ভারতীয় ভাষা জানি-গম্ভীর গলায় সেসব বলে একটা পুরানো আবহাওয়া তৈরি করি এইসব দেখে এই মেয়ে অন্য রকম হয়ে গেল। অল্পবয়েসী মেয়েদের মনে যখন প্ৰেম আসে তখন তা আসে টাইডাল ওয়েরে মতো। অরু নিজে তো ভেসে গেলই, আমাকেও ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এই আমি একজন বুড়োমানুষ। ওল্ড ম্যান। 13thNov 1940-তে আমার জন্ম। আমার বয়স হিসেব করে দেখুন। এই মেয়ে তার নিজের যতটুকু না সর্বনাশ করল, আমার করল তার চেয়ে বেশি। এখন সে বলে বেড়াচ্ছে অবিশ্বাস্য সব কথা।
আমার এক বন্ধু না-কি রান্নাঘরে গিয়ে তার নাভিতে হাত দিয়েছে। আমার ঐ বন্ধুটি চারিত্রিক দিক থেকে মহাপুরুষ ধরনের। সে মাঝে-সাঝে আমার এখানে এসে তাস খেলত। তার পক্ষে…..
আজহার সাহেব আপনি বলেছিলেন এখানে তাস খেলা হয় না।
বলেছিলাম? হা শুরুতে বলেছিলেন।
মাঝে-মাঝে তাস খেলা হয়। Once inafull-moon. এই বাড়ি তো আর মসজিদ বা মন্দির না যে এখানে তাস খেলা যাবে না। আপনি তাহলে পুরোপুরি সত্যি কথা বলছেন না।
আরে ভাই কী মুশকিল পুরোপুরি সত্য কথা কেউ বলে না। কেন বলবে? মানুষতো আর কম্পিউটার না যে পুরোপুরি সত্যি কথা বলবে। একমাত্র কম্পিউটার পুরোপুরি সত্যি কথা বলে। এই জন্যেই কম্পিউটারের প্রেমে পড়া যায় না। মানুষের প্রেমে পড়া যায়।
ভাই আমি উঠি।
উঠতে চান?
হ্যাঁ।
যেসব কথা আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম তার একটি কথাও আপনাকে এখনো বলা হয় নি।
বলুন।
নাম্বার ওয়ান, আমার ধারণা অরু জীবিত নেই। চমকে উঠবেন না। চমকে ওঠার মতো কিছু না। আমার আরো একজন স্ত্রী আছে যে অরুকে হত্যা করার জন্যে তোক লাগিয়েছে—এই গুজব বাজারে আছে। নাম্বার টু মেয়েটা অসুস্থ। সে নিজেও আত্মহত্যা করতে পারে। নাম্বার থ্রি, সে অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে, গুণ্ডা-পাণ্ডাদের হাতে পড়লেও একই জিনিস হবে। গ্যাং রেপ বলে একটি কথা আছে। আপনি শুনেছেন কিনা জানি না। আপনাকে যে রকম সুফি মানুষ বলে মনে হয়, আপনার না শোনারই কথা। গ্যাং রেপ বিষয়টি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। ধরুন পাঁচজন যুবক এবং একজন তরুণী আছে। যুবকরা সবাই লাইন ধরে অপেক্ষা করছে……
জহির বলল, দয়া করে চুপ করুন, আপনি ক্রমাগত আজেবাজে কথা বলছেন। কেন বলছেন?
বলছি কারণ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মেয়েটা মারা গেলে আমি বিরাট বিপদে পড়ে যাব। পুলিশ কোনো না কোনো সূত্র বের করে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। বিজ্ঞ জজ সাহেব দড়িতে ঝুলিয়ে দেবেন। জজ সাহেবরা নিজেরা যেহেতু কখনো দড়িতে ঝোলেন না, তারা জানেন না ব্যাপারটা কি। কাজেই I am going to die.
আজহার সাহেব।
জ্বি।
আপনি কি মদ্যপান করেছেন?
বেশি করতে পারি নি, অল্প করেছি। এত পয়সা আমার কোথায় ভাই? আপনাকে আমি এখন একটা রিকোয়েস্ট করব। যদি চান আপনার পায়ে ধরেই রিকোয়েস্ট করব। সেটা হচ্ছে আমি জানি অরু যদি বেঁচে থাকে তাহলে সে আপনার সঙ্গে দেখা করবেই। আপনি তখন দয়া করে আমাকে সেটা জানাবেন।