জহির বিস্মিত হয়ে বলল, তোমার কি শরীর খারাপ অরু?
না গা একটু ভারি হয়েছে। এ ছাড়াও দুএকটা লক্ষণ দেখে মনে হয় কনসিভ করেছি। এখনো টেস্ট করি নি। আচ্ছা জহির ভাই!
হুঁ।
আমি আপনার সঙ্গে তুমি তুমি করে বলতাম, না আপনি আপনি করে বলতাম? আমি পুরোপুরি কনফিউজড বোধ করছি মনে পড়ছে না।
তোমার সঙ্গে আমার তেমন কথাই হত না।
দ্যাটস্ ট্রু।
তবে আপনি করেই বলতে, তুমি বলতে না।
তাও ঠিক। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে তুমি করে বলব। আপনার কি কোনো। অসুবিধা আছে?
জহির কী বলবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটার কি কোনো সমস্যা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা? মাথা ঠিক আছে তো?
অরু হাসতে-হাসতে বলল, তুমি ডাকের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের ব্যাপার আছে, এই জন্যেই তুমি। এখন তুমি বললে কারো কিছু বলার নেই। কারণ আপনার তো বিয়ে হয়েই যাচ্ছে। আমার এখন কোন বন্ধু নেই জহির ভাই, একজন বন্ধুর দরকার।
জহির শংকিত গলায় বলল, আজহার সাহেবের সঙ্গে তোমার কি ঝগড়া চলছে?
মোটই না। সে তার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এখানে আসে, মাঝে-মাঝে হাইড্রোজেন খেলে। আমিও খেলি। ওরা হুইস্কি-টুইস্কি খায়। আমি দেখি, ভালোই লাগে।
কী বলছ ওসব?
আহা সবদিন তো খায় না। এসব খেতে পয়সা লাগে। এত পয়সা পাবে কোথায়? একেকটা বোতলের অনেক দাম। সাত শ মিলিলিটারের একটা বোতলের দাম আট শ নশ পড়ে যায়। ব্ল্যাক লেভেল হলে তো কথাই নেই।
জহির ভয়ে-ভয়ে বলল, অরু তুমি নিজেও কি হুইস্কি-টুইস্কি খাও?
অরু ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, মাঝে-মাঝে খাই। এমন কোনো মজাদার কিছু না। তবে খানিকটা খেলে কী হয় জানেন, খালি কথা বলতে ইচ্ছা করে। তখন বেশ মজাই লাগে। এই যে আপনার সঙ্গে এত কথা বলছি এর কারণ কি জানেন? আপনি আসার আগে-আগে আধ গ্রাস হুইস্কি খেয়েছি। আধ গ্রাস মানে কত পেগ জানেন? এবাউট ফোর। আপনি তো নিতান্তই বোকা তাই গন্ধ থেকে কিছু টের পান নি।
জহির পুরোপুরি হকচকিয়ে গেল। অরুর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। শেষ। দেখা তিন মাস আগে। এই তিন মাসে এই অবস্থা? আজহার সাহেবের সঙ্গে তার কি বনিবনা হচ্ছে না? এই অবস্থায় অরুর কি উচিত না…
জহির ভাই?
হুঁ। আচ্ছা, আজহার সাহেব সাধারণত কটার দিকে আসেন?
ঠিক নেই। মাঝে-মাঝে অনেক দেরি করে। আবার মাঝে-মাঝে আসেও না। আজ মনে হচ্ছে আসবে না। আজ এই বাড়িতে একা-একা থাকব।
একা-একা থাকতে ভয় লাগে না?
ভয় লাগলেইবা কী করব? আপনি কি থাকবেন আমার সঙ্গে? আছে আপনার এই সাহস? না নেই। রাত আর একটু বাড়লেই আপনি বিদেয় হবেন।
আপনি কি মনে করেন আমি বুঝতে পারি না। কেন আপনি ঐ চেয়ারটি পাল্টে এই চেয়ারে বসেছেন? যাতে আমাকে এলোমেলো অবস্থায় দেখতে না হয়। আপনি কি ভাবছেন আপনার এই আচরণের কারণে আপনাকে আমি অতি ভদ্ৰ, অতি ভালো একজন মানুষ বলে ভাবছি? মোটেই না। আমি আপনাকে ভাবছি সাহস নেই একজন মানুষ হিসাবে। আপনার মতো সাহস নেই মানুষ যেমন আছে আবার খুব সাহসী মানুষও আছে। জহির ভাই, আপনি কি একজন সাহসী মানুষের গল্প শুনবেন?
আজ বরং উঠি। আজ মনে হচ্ছে তোমার শরীরটা ভালো না।
আজ আমার শরীর খুবই ভালো আছে। সাহসী মানুষের গল্পটা আপনাকে বলি, আপনি শুনুন। একদিন হল কি, ওরা কয়েকজন মিলে তাস খেলছে। আমি রান্নাঘরে ওদের জন্যে চা বানাতে গিয়েছি। তখন ওর এক বন্ধু এসে বলল, দিয়াশলাই দিন তো ভাবী।
দিয়াশলাই দিলাম। সে সিগারেট ধরালো। তারপর বলল, ভাবী আপনার পেটে ঐটা কি কাটা দাগ? মাই গড! কী করে কাটল? বলেই নাভীর উপর হাত দিল।
জহির স্তম্ভিত হয়ে বলল, তুমি কী করলে?
আমি বললাম, আমার হার্টের কাছাকাছি এর চেয়েও গভীর একটি ক্ষতচিহ্ন আছে। একদিন আসবেন আপনাকে দেখাব।
জহির হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। আর প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই আজহার সাহেব ঢুকলেন। হাতে বাজারের ব্যাগ। বাজারের ব্যাগের ভেতর একটি ইলিশ মাছ উঁকি দিচ্ছে বেশ কিছু আনাজপাতিও দেখা যাচ্ছে। ভদ্রলোক হাসিমুখে বললেন, আরে জহির সাহেব আপনি! কখন এসেছেন?
অনেকক্ষণ।
বিয়ের খবর দিতে এসেছেন, তাই না?
হ্যাঁ।
অরুকে কি আপনার স্ত্রীর ছবি দেখিয়েছেন?
অরু বিরক্ত গলায় বলল, জহির ভাই বুঝি স্ত্রীর ছবি নিয়ে ঘুরছেন।
অফকোর্স, সমস্ত পুরুষ যখন বিয়ের দাওয়াত দিতে যায় তখন তাদের বুক। পকেটে থাকে স্ত্রীর ছবি। জহির সাহেব ছবি বের করুন। ওয়ান-টু-থ্রি।
জহিরের মানুষটাকে পছন্দ হচ্ছে।
এতক্ষণ অরুর সঙ্গে কথা বলে বুকের মধ্যে কেমন আতংক ধরে গিয়েছিল। এখন আর সেই আতংক সে বোধ করছে না। মনে হচ্ছে অরুত্র অনেক কথাই বানানো। মেয়েরা অনেক কিছু বানায়। অরুর মুখও কেমন হাসি-হাসি দেখাচ্ছে।
আজহার বলল, কী ভাই ছবি দেখান।
জহির ছবি বের করল।
অরু অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, মেয়েটা কি সত্যি এত সুন্দর?
আজহারের দিকে ছবিটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল, দেখ দেখ একটা পারফেক্ট ছবি। এ পারফেক্ট ফেস।
আজহার দেখল।
হাসতে-হাসতে বলল, হ্যাঁ পারফেক্ট ফেস তো বটেই তবে চিবুকের তিলটা আমার মনে হয় বানানো। যে ফটোগ্রাফারের দোকানে তোলা হয়েছে সেই ফটোগ্রাফার নিজেই এটা বসিয়ে দিয়েছে। যেখানে তিলটা প্রয়োজন প্রকৃতি বেছে-বেছে ঠিক সেইখানেই তিল দিয়েছে এটা বিশ্বাস করা শক্ত।
যুক্তি শুনে জহির মুগ্ধ হয়ে গেল। আজহার সাহেব মানুষটাতো অসম্ভব বুদ্ধিমান।