মুহিব বলল, নামটা সুন্দর। ডিরেক্টর কে?
আমিই ডিরেক্টর।
মুহিব বলল, স্যার সরি।
সরি কেন?
মুহিব বলল, আপনাকে সাধারণ কেউ ভেবেছিলাম, এইজন্যে সরি বলেছি।
আমি সাধারণ। অসাধারণ কিছু না। একটা শট দেবেন?
মুহিব বলল, বুঝতে পারলাম না কী বললেন?
আমাদের একজন আর্টিস্ট আসে নি। তার মুখে একটা সংলাপ আছে। আপনি দিতে পারবেন?
মুহিব তাকিয়ে রইল। কী বলবে বুঝতে পারছে না। ডিরেক্টর সাহেব বললেন, নাটকের নায়িকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে। আপনি একজন পথচারী। মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে যাবেন। এবং বলবেন, ম্যাডাম, কী হয়েছে?
মুহিব বলল, রাস্তায় কোনো অপরিচিত মেয়েকে কাঁদতে দেখলে আমরা ম্যাডাম বলি না। আমরা শুধু বলি— কী হয়েছে?
ঠিক আছে আপনি কী হয়েছে বলবেন। তখন মেয়েটি বলবে— Get lost. তারপরেও আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। তখন মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলবে— Get lost-এর মানে বোঝেন না? যান ফুটেন। আপনি চলে আসবেন। পারবেন?
জি স্যার পারব।
গুড। ক্যামেরার দিকে ভুলেও তাকাবেন না। ক্যামেরার দিকে তাকালে শট NG হয়ে যাবে।
NG টা কী?
NG হচ্ছে Not Good, অর্থাৎ শট নষ্ট। আবার নতুন করে নিতে হবে। পারবেন তো?
স্যার চেষ্টা করব।
তাহলে আসুন। বৃষ্টি থেমে গেছে। এখনি শট হবে।
মুহিব ঠিকঠাক মতো করল। নায়িকার মুখে Get lost শুনে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। নায়িকা যখন বলল, ফুটেন তখন আরো লজ্জা পেল। চলে যাবার সময় এক পলকের জন্যে দাঁড়িয়ে আরেকবার তাকালো নায়িকার দিকে।
ডিরেক্টর সাহেব বললেন, আপনার টেলিফোন নাম্বার দিয়ে যান। ছোটখাটো কোনো রোল খাকলে আপনাকে ডাকব। আপনি ক্যামেরা ফ্রি। চা খান।
শুধু চা না, তাকে চায়ের সঙ্গে দুটা সিঙ্গাড়া দেয়া হলো। সিঙ্গাড়া খাবার সময় নায়িকা এসে সামনে দাড়ালেন। হাসিমুখে বললেন, আপনার অভিনয় ভালো হয়েছে। এটা প্রথম কাজ?
জি।
নাম কী?
মুহিব।
আপনার টেলিফোন নাম্বার এবং নাম একটা কাগজে লিখে আমাকে দিন। আমি চেষ্টা করব আপনাকে ভালো একটা সুযোগ দিতে।
ম্যডাম থ্যাংক য়্যু।
আপনি কি আমার নাটক বা সিনেমা দেখেছেন?
জি ম্যাডাম, অনেক দেখেছি। (পুরোপুরি মিথ্যা কথা। তাদের বাসার টিভি থাকে বাবার শোবার ঘরে। মুহিবের টিভি দেখা হয় না। নায়িকাকে সে চিনতে পারে নি। তবে আজ যেহেতু বুধবার, মিথ্যা কথা বলা যায়।)
মিথ্যাদিবস শেষ হবার একঘণ্টা আগে রাত এগারোটায় মুহিবের জীবনে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল। দুপুরের দেখা নায়িকা তাকে টেলিফোন করলেন।
আপনি মুহিব!
জি।
আমাকে চিনেছেন তো? দুপুরে আমার সঙ্গে কাজ করলেন।
জি ম্যাডাম। স্নামালিকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম।
আপনার জন্যে ভালো একটা খবর আছে। একটা নাটকে আপনাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র দেবার ব্যবস্থা করেছি।
থ্যাংক য়্যু ম্যাডাম।
ভালোমতো কাজ করবেন, আমার যেন বদনাম না হয়। আমি ডিরেক্টরকে বলেছি–আপনি একজন Born actor.
ম্যাডাম, আপনার দয়ার কথা সারাজীবন মনে থাকবে।
কান্নার শব্দ পাচ্ছি। কে কাঁদছে?
আমার ছোটবোন কাঁদছে। ভূত দেখে ভয় পেয়ে কাঁদছে। তার নাম অশ্রু। সে প্রায়ই ভূত দেখে।
আজও দেখেছে?
জি। মাথার চুল আঁচড়াচ্ছিল। হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেল। সে চিরুনি তুলতে নিচু হয়েই দেখে, তার খাটের নিচে ভুতটা বসে আছে। ভূতটা তার মাথার চুল খপ করে ধরে ফেলল। অশ্রু অনেক চেষ্টা করল চুল ছাড়াতে পারল না। তার মাথার একগোছা চুল ভূতটা টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে।
এই ঘটনা কি সত্যি ঘটেছে, না আপনি বানাচ্ছেন?
সত্যি ঘটেছে ম্যাডাম।
আপনার বোন কত বড়?
এগজাক্ট বয়স বলতে পারব না। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। কোচিং সেন্টারে কোচিং করছে।
আপনার বোনের নাম কী বললেন?
অশ্রু।
আমার ধারণী অশ্রু সিজিয়োফ্রেনিক। ওর চিকিৎসা করাতে হবে। আমি একজন ডাক্তারের ঠিকানা দেব। তার কাছে নিয়ে যাবেন। আমি ব্যবস্থা করে দেব যেন ভিজিট না নেয়।
ম্যাডাম, থ্যাংক য়্যু।
যে নাটক করতে যাচ্ছেন তার নাম জানতে চাইলেন না?
নাম কী?
নামটা পয়েটিক–দিঘির জলে কার ছায়া গো।
টেলিফোনে লীলা কাউকে হ্যালো বলে না
টেলিফোনে লীলা কাউকে হ্যালো বলে না। বান্ধবীদের বলে, আমি সমুচাঁ। মুহিবকে বলে, আমি লী। অপরিচিতদের বলে, লীলা কথা বলছি।
লীলা টেলিফোন করেছে মুহিবকে। যথারীতি বলল, আমি লী। ওপাশ থেকে হেড়ে গলায় কে একজন বলল, কারে চান?
লীলা বলল, এটা মুহিবের ফোন না?
ওপাশ থেকে বলল, হইতে পারে। আমি স্যারের নাম জানি না।
আপনার স্যার কে?
হিরু।
হিরু মানে? তার নাম হিরু?
নাটকের হিরু। স্যার এহন পার্ট গায়। পরে করেন।
আপনি কে?
আমার নাম ছামছু। প্রডাকশনে কাম করি। আফা, অহন রাখি। হিরুইন আমারে বুলায়!
আধঘণ্টা পর লীলা আবার টেলিফোন করল। সেই হেঁড়ে গলা। লীলা বলল, আপনি ছামছু?
জে।
আপনার স্যার কী করে?
হিরুইনের সাথে নাশতা খায়।
কী নাশতা?
এক পিস কেইক, সিঙাড়া আর কলা।
আপনার স্যারকে কি এখন টেলিফোন দেয়া যাবে?
ধরেন দিতাছি।
টেলিফোনে মুহিবের গলা পাওয়া গেল। লীলা বলল, কী করছ তুমি?
মুহিব বলল, নাটক করছি। চ্যানেল আই-এ ভ্যালেনটাইন ডে-তে দেখাবে।
তুমি অভিনয় কর জানতাম না তো!
মুহিব হাসতে হাসতে বলল, আমি নিজেও জানতাম না। পাকেচক্রে হয়ে গেল। কীভাবে হয়ে গেল পরে বলব।
কিসের অভিনয় করছ?
আমি একজন পেইন্টার। আমার সঙ্গে হঠাৎ একটা মেয়ের পরিচয় হয়েছে। এই নিয়ে গল্প। মেয়েটি অন্ধ।