আছিস কেমন?
জি বাবা ভালো আছি।
চাকরি খুঁজছিস?
জি।
থার্ডক্লাস বিএ-কে কে চাকরি দেবে? ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভার হয়ে যা। বড়লোকের গাড়ি চালাবি। তেল চুরি করবি। গ্যারাজের সাথে বন্দোবস্ত করে রাখবি। ওরা তোকে কমিশন দেবে। পারবি না?
পারব।
মাঝে মধ্যে বখশিসও পাবি। বাপের ঘাড়ে বসে জীবন পার করে দেয়া তো কাজের কথা না। শরীরও হচ্ছে মহিষের মতো। কাল রাতে জানালা দিয়ে দেখলাম, তোর মাকে কোলে নিয়ে ঘরে যাচ্ছিস। তোর কোনো কাজেই আমি সন্তুষ্ট হই না। এই কাজে সন্তুষ্ট হয়েছি।
এই বলেই বাবা দুটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। বাবার মতো হাড়কৃপণ মানুষ এক হাজার টাকা কাউকে দিবে তার প্রশ্নই ওঠে না। আমি নোট দুটা নিলাম।
লীলা, তোমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধরি নিয়েছিলাম, সেটা শোধ দিয়ে দিলাম। খামের ভেতর এক হাজার টাকা নিশ্চয়ই পেয়েছ?
আজ এই পর্যন্ত।
মুহিব পুনশ্চ : তোমার সঙ্গে কিছু জরুরি কথা ছিল। আমার মোবাইলে কোনো টাকাপয়সা নেই।
লীলাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে বড় রাস্তায় পড়তেই মুহিবের মোবাইল টেলিফোন বেজে উঠল।
হ্যালো, তুমি কি সারভেন্টশ্রেণীর কেউ? কে তোমাকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছে? বাসন মজিতে বলেছে?
সরি।
তুমি ধীরে ধীরে সারভেন্ট সম্প্রদায়ের একজনে পরিণত হচ্ছ।
তা মনে হয় হচ্ছি।
আর আমি কি বলেছি এক হাজার টাকা ফেরত দাও? বলেছি?
না, বলো নি।
কবিতাটা মুখস্থ করেছ?
কোন কবিতা?
রবীন্দ্রনাথের বর্ষাযাপন কবিতাটা মুখস্থ করতে বলেছিলাম।
ভুলে গেছি। [এটা মিথ্যা কথা। অর্ধেক মুখস্থ হয়েছে। আজ বুধবার মিথ্যাদিবস। এই দিবসে মিথ্যা বলা যায়।]
Home-এর ডেফিনেশন মনে আছে?
আছে। Home is the place where if you want to go there they have to take you in.
কার কথা বলো?
রবার্ট সাহেবের।
রবার্ট সাহেবের না। রবার্ট ফ্রস্টের। কবি রবার্ট ফ্রস্ট। বলো রবার্ট ফ্রস্ট।
রবার্ট ফ্রস্ট।
লীলা বলল, তোমাকে আমি মানুষের সামনে Presentable করতে চাচ্ছি।
মুহিব বলল, কোনো লাভ হবে না। আমি যা তাই থাকব।
তুমি যা তা থাকছ না। তুমি ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছ।
মুহিব বলল, তোমাদের ড্রাইভারের নাম জলিল না?
হ্যাঁ। ড্রাইভারের নাম দিয়ে কী হবে?
মুহিব বলল, তাঁকে বলো তো আমার জন্যে একটা চাকরি দেখতে।
লীলা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, সে কী চাকরি দেখবে?
মুহিব বলল, ড্রাইভারের চাকরি। আমি ঠিক করেছি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হব।
লীলা টেলিফোন কেটে দিল।
মহিবের নিজেকে হিমর মতো লাগছে। পকেট খালি। সে ঘটছে। তার গাঁয়ের শার্টটাও হলদ। কোনো একদিন হিমুর সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেলে ভালো হতো। তাকে নিয়ে জঙ্গলে জোছনা দেখতে যেত। তবে কাব্যভাব তার মধ্যে একেবারেই নেই। লীলার মধ্যে আছে। হঠাৎ তার টেলিফোন আসবে, আজ যে পূর্ণিমা জানো?
না, জানি না।
সন্ধ্যার পর বাসায় চলে এসো, চাঁদ দেখব/Jছাদেশতরঞ্চি পেতেছি।
হা করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই।
একজন আবৃত্তিকারকেখৱর দিয়েছি। তিনি কবিতা আবৃত্তি করবেন।
গান শোনা যায় কবিতা শোনার কিছু নেই।
প্লিজ এসো। প্লিজ।
আচ্ছা আসছি।
রাতে খেয়ে যাবে।
কী রান্না?
বাইরে থেকে খাবার আসরে। প্লেন পোলাও আর খাসির রেজালা তুমি সন্ধ্যা ছটার মধ্যে আসবে
আচ্ছা।
মুহিব যায় না লীলা তাকে যেন টেলিফোনে ধরতে না পারে তার জন্যে মোবাইল অফ করে রাখে। এই কাজটা সে করে হিমুর কুখী মনে করে। হিমু রূপার সঙ্গে এইরকম কাণ্ড করে মুখে বলে যাবে। কিন্তু যায়াল।
বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মুহিব একটা চায়ের দোকানে অশ্রিয় নিয়েছে। পকেটে। টাকা থাকলে এককাপ চা খাওয়া যেত। হিমরা এমন অবস্থায় চা খেতে ইচ্ছা হলে। বলত—আছেন কোনো সহৃদয়ভাই যে একজন তৃষ্ণার্তকে চা খাওয়াবেন?
এধরনের কথা বলা সম্ভব হচ্ছেনা। মুহিববৃষ্টি থামার জন্যে অপেক্ষা করছে।
মুহিবের মোবাইলআবার বেজোউঠেছোলীলার টেলিফোন মুহিব সেট বন্ধ করল চারপাশে একগাদা লোক নিয়ে লীলার সঙ্গে কথা বলা যায় না।
লীলার সঙ্গে মুহিবের পরিচয়ের গল্পটা এখন। বলা যেতে পারে। তাদের পরিচয় নর্দমায় ঘিটনাটাএেরকম—মুহির হেঁটেবাসায় ফিরছে।ধানমণ্ডি ২নম্বর রোডে মানুষজনের জটলা। মনে হচ্ছে দুবাই কিছু একটা দেখে মজা পাচ্ছে। বিনা পয়সায় মজা পাবার লোভ কেউ ছাড়েন। মুহিব এগিয়ে গেল।
মজা পাবার মতোই ঘটনা অতিরূপবতীএক তরুণী নর্দমায় পড়ে গেছে। তার সারা শরীর নর্দমার নোংরা বিষাক্ত ঘন কৃষ্ণবর্ণের তরলে মাখামাখি। মেয়েটার উচিত নর্দমা থেকে ওঠার চেষ্টা করা। তা না করে নর্দমার নোংরীয় কী যেন খুঁজছে। সে ফিতাবিহীন ম্পঞ্জের একটা স্যান্ডেল তুলল। জনতার ভেতর একজন চেঁচিয়ে উঠল, পাইছে পাইছে। জিনিস পাইছে। সবাই হেসে উঠল।
মুহিব নর্দমার পাশে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে কঠিন গলায় বলল, উঠে আসুন।
জনতার একজন বলল, ভাই, থাকুক না। খেলতেছে।
আবারো সম্মিলিত হাসি।
মুহিব বলল, হাত ধরুন, উঠে আসুন। মেয়েটা উঠে এসে বলল, আমার একটা বই নর্দমায় পড়ে গেছে। খুব জরুরি বই। বইটা খুঁজছিলাম।
মুহিব নর্দমায় নেমে পড়ল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বই নিয়ে উঠে এল। বইটার নাম– New Enlarged Anthology of Robert Frosts Poems.
মেয়েটা বলল, আমার পা কেটে গেছে, আমাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। তার আগে একটা সাবান কিনে নিয়ে আসুন, আমি লেকের পানিতে গোসল করব। গা থেকে বিকট দুর্গন্ধ আসছে। আর কিছুক্ষণ এই দুর্গন্ধ থাকলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাব।