লীলা বলল, তার পাশে থাকা মানে তাকে লজ্জা দেয়া। এই লজ্জাটা তাকে দিতে চাচ্ছি না।
আহসান বলল, শুধু লজ্জা দেয়া না। লজ্জা পাওয়াও। তুমি লজ্জাটাও পেতে চাচ্ছ না। আচ্ছা লীলা, তুমি কখনো তার বাসায় গিয়েছ? তার মা, বোন, এদের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছে?
না।
কোনো মেয়ে যদি সত্যি সত্যি কোনো ছেলের প্রেমে পড়ে, সে তখন এই ছেলের আশেপাশের সবকিছুর প্রেমে পড়ে।
লীলা তাকিয়ে আছে। সে এইভাবে কখনো চিন্তা করে নি। আহসান বলল, তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তুমি সামান্য মন খারাপ করেছ। দাড়াও, মন ভালো করে দেই। মুহিব ছেলেটা কিন্তু তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে! আমি কাল রাতে বিষয়টা টের পেয়েছি।
কীভাবে টের পেয়েছেন?
শূন্যে ভাসা ম্যাজিক শিখে আমার ঘর থেকে সে যখন বের হলো আমি তার পেছনে একজন লোক লাগিয়ে দিলাম। তার দায়িত্ব হচ্ছে মুহিবকে ফলো করা।
এটা কেন করলেন?
তোমার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে করলাম। তুমি মুহিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশছ। মুহিব ছেলেটা কেমন জানা দরকার। মুহিব কী করল জানো?
কী করল?
অনেক কিছুই করল। হাঁটাহাঁটি। চায়ের দোকানে চা খাওয়ী। একটা পর্যায়ে সে এসে তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়াল। তখন রাত বারোটা দশ। তোমার ঘরে বাতি জুলছিল। সে তাকিয়ে ছিল বাতির দিকে। যখন ৰাতি নিভল সে চলে গেল। প্রায় দুঘণ্টা ছিল।
লীলা বলল, যে স্পাই লাগিয়ে ছিলেন সে এত Detail মনে রেখেছে?
আহসান বলল, স্পাইটা আমি নিজে। একটা কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে বের হয়েছিলাম। মুহিব লক্ষ করে নি। তার অবশ্য চারদিক লক্ষ করার মতো মানসিক অবস্থাও ছিল না।
লীলা বলল, খেতে আস। আমার ক্ষিধে লেগেছে। আজ সকাল সকাল খেয়ে নেব।
আহসান বলল, তুমি বলা শুরু করেছ?
লীলা বলল, হ্যাঁ।
সর্বনাশ! সামনের মাসে পনেরো দিনের জন্যে জাপান যাবার কথা। ফিরে এলে আবার আপনি?
জাপান যেও না।
আহসান বলল, আমাকে যেতেই হবে, উপায় নেই। একটা কাজ অবশ্য করা যায়। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়। যাবে?
লীলা চুপ করে আছে। পরী মূর্তি ছাদে বসানো হচ্ছে। তার দৃষ্টি সেদিকে। কী সুন্দর দেখাচ্ছে মূর্তিটা! এত জীবন্ত!
আহসান বলল, আজ আমার জন্মদিন। লীলা, শুভ জন্মদিন বলবে না?
শুভ জন্মদিন।
থ্যাংক য়্যু। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, ছাদটা পুরোপুরি গোছানো হলে তোমাকে ছাদে এনে আমার জন্মদিনের কথা তোমাকে বলব। সরি, আগেভাগে বলে ফেলেছি।
চল খেতে যাই।
আহসান বলল, খাওয়ার পর ভ্রমণে বের হলে কেমন হয়? দুজন কিছুক্ষণ হাঁটলাম। একসময় ধাক্কা দিয়ে তোমাকে বড় কোনো নর্দমায় ফেলে দিলাম, তারপর টেনে তুললাম। তখন আর আমি পিছিয়ে থাকব না। মুহিবের কাছাকাছি চলে আসব।
লীলা হাসল।
মুহিব বলল, তোমার মেয়েটা আজ কী বেঁধেছে?
জানি না। অনেক আইটেম নিশ্চয়ই করেছে। সে অল্প আইটেম রাঁধতে পারে। না।
তুমি কি জানো আসমা কুয়েতের ঐ শেখের কাছে ফিরে যাচ্ছে?
তাই না-কি?
হ্যাঁ, কুয়েতের বদ শেখটা আসমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সে জানিয়েছে আসমার কথা তার খুব মনে পড়ে। প্রায়ই তাকে স্বপ্নে দেখে। আসমা এতেই খুশি। সে এখন ফিরে যাবার জন্যে তৈরি। মেয়েরা কত অল্পতে খুশি হয় দেখেছ?
ক্রিমিনাল লইয়ার হামিদুজ্জামানের চেম্বারে
ক্রিমিনাল লইয়ার হামিদুজ্জামানের চেম্বারে মুহিব বসে আছে। তার কাছে আসার কোনো ইচ্ছা মুহিবের ছিল না। নিলি ম্যাডাম তাকে পাঠিয়েছেন। যদি কেউ কিছু করতে পারে হামিদুজ্জামানই পারবে। হামিদুজ্জামানকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আপাতত দেয়া হয়েছে। হামিদুজ্জামান বললেন, উকিল আর ডাক্তার এদের কাছে কিছু গোপন করবে না। গোপন করলে নিজেদেরই সমস্যা। বলো দেখি তোমার
কাছে এখন ক্যাশ টাকা কত আছে? মুহিব বলল, পাঁচ লাখের সামান্য বেশি। উত্তরখানের জমি বিক্রি করেছি। টাকা দিয়ে মামলা মিটমাট করব এইজন্যে। মেয়ের বাবা আশরাফ সাহেব পাচ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিবেন বলেছেন।
হামিদুজ্জামান বললেন, মুখে মামলা তুলে নিলাম বললে তো হবে না। মেয়েকে এবং মেয়ের বাবাকে কোর্টে এসে বলতে হবে মামলা মিথ্যা। তারপর তারা ফেঁসে যাবে। মিথ্যা মামলা করার জন্যে জেলে ঢুকতে হবে। বুঝেছু ঘটনা?
বুঝার চেষ্টা করছি।
জমি কার কাছে বিক্রি করেছ?
হিশাম চাচার কাছে। উনি বাবার বিজনেস পার্টনার। বাবার বিজনেস নিয়ে নেয়ার জন্যে মামলা উনি করিয়েছেন। সালমা মেয়েটা তার ভাগ্নি। দূরসম্পর্কের ভাগ্নি।
জমির দখল ছেড়ে দিয়েছ?
জি-না। আমার মা এবং অশ্রু এখনো উত্তরখানের বাড়িতে আছেন। হিশাম চাচা সাতদিন সময় দিয়েছেন। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই।
দখল ছাড়বা না। কোনোভাবেই না। আমরা উল্টা মামলা করব— জোর জবরদস্তি করে জমির দলিল করে নিয়েছে। বাঘ তখন ধান খাবে। দবিরকে পাঠাব। দবির এক ফাঁকে হিশাম আর মেয়ের বাপ— এই দুইটাকে ডলা দিয়ে আসবে।
দবির কে?
আছে একজন। তার সঙ্গে তোমার পরিচয় মা হওয়াই ভালো। আমি ক্রিমিনাল লইয়ার। কিছু ক্রিমিনাল আমার পোষা থাকবে না। এখন আমাদের একটা কাজ করতে হবে। জমির বায়না যে তারিখে হয়েছে, তার আগের কোনো তারিখে থানায় জিডি এর ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে থাকবে হিশাম তোমাকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।
মুহিব বলল, ব্যাক ডেটে জিডি এন্ট্রি কীভারে হবে।
হামিদুজ্জামান বিরক্ত মুখে বললেন, সেটা তো তোমার দেখার বিষয় না। আমার দেখার বিষয়। বুঝেছ কিছু?