তুমি কি ভেবেছ পায়ে ধরে পড়ে থাকলেই সে মামলা তুলে নিবে?
মামলা তুলতে তো চাচা বলছি না। মামলায় বাবার যা হয় হবে। আমরা উকিলও দেই নাই।
দাও নাই কেন?
উকিল যত টাকা চায় অত টাকা নাই। আমি ধরেই নিয়েছি বাবার সাত বছরের জেল হবে।
হিশাম বললেন, তুমি সালমার সঙ্গে কথা বলতে চাও দেখি কী করা যায়। কয়েকটা দিন যেতে দাও। পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক। মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। জামাই জনতা ইনস্যুরেন্সের ক্যাশিয়ার। বিয়ে ভেঙে গেছে। এই নিয়েও বাড়িতে কান্নাকাটি। এই মেয়ের আর বিয়ে হবে বলে মনে হয় না।
সন্ধ্যাবেলা মুহিব গেল লীলার কাছে। লীলা চমকে উঠে বলল, কী হয়েছে? তোমাকে এরকম লাগছে কেন?
মুহিব বলল, আজকের কাগজ পড়েছ? কাগজের ফ্রন্ট পেজে বাবার ছবি ছাপা হয়েছে। কয়জনের বাবার ছবি ফ্রন্ট পেজে ছাপা হয়? এই আনন্দেই আমার
চেহারা অন্যরকম হয়ে গেছে।
লীলা বলল, উনার নাম কি আলাউদ্দিন?
হ্যাঁ।
লীলা বেশ কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, তুমি দুপুরে কিছু খেয়েছ?
না।
বাথরুমে যাও, হাত-মুখ ধোও। তারপর টেবিলে আস। মাংস রান্না করা আছে। পরোটা ভেজে দেবে। নতুন একটা মেয়ে পেয়েছি। আসমা নাম। ভালো পরোটা বানায়। বসে আছ কেন? হাত-মুখ ধুতে যাও।
মুহিব খেতে বসেছে। লীলা বসেছে তার সামনে। এত আগ্রহ করে খাচ্ছে, লীলার চোখ ভিজে ওঠার উপক্রম হলো। লীলা বলল, ডেভিড ব্রেইনের নাম শুনেছ?
না।
উনি একজন ম্যাজিশিয়ান। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পথে পথে তিনি ম্যাজিক দেখান। স্ট্রীট ম্যাজিশিয়ান। কী ম্যাজিক দেখান জানো?
কী ম্যাজিক?
শূন্যে ভাসার ম্যাজিক। তুমি শিখবে?
মুহিব বলল, না। আমি তো শূন্যে ভেসেই আছি।
তুমি যখন শূন্যে ভেসেই আছ, তোমার জন্যে সুবিধা হবে। আমি তোমাকে আহসান সাহেবের কাছে পাঠাব। তিনি তোমাকে শিখিয়ে দেবেন। আজ যেতে পারবে? রাত আটটার পর।
শূন্যে ভেসে থাকার ম্যাজিক শিখে কী করব?
মাঝে মাঝে আমার সামনে শূন্যে ভেসে থাকবে। আমি দেখে মজা পাব। যেতে পারবে? বলব উনাকে টেলিফোন করে?
বলো।
পরোটা কেমন হয়েছে?
খুব ভালো। দুটা পরোটা আর মাংস কি প্যাকেট করে দিতে পারবে?
কেন?
বাবার জন্যে নিয়ে যাব।
দিয়ে দেব। পরোটা মাংস ছাড়া আর কিছু কি লাগবে?
না। তারপরই মুহিব বলল, তোমাকে একটা কথা বলার জন্য এসেছি। বাবা এই নোংরা কাজটা করেন নি।
লীলা বলল, তুমি যখন বলছ করেন নি, তাহলে অবশ্যই করেন নি। তুমি কি এখন তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাবে?
হ্যাঁ।
রাত আটটায় আহসান সাহেবের কাছে যাবে, মনে আছে?
মনে আছে।
কাগজে ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। এক কাজ করি, তোমাকে গাড়ি দিয়ে দেই। ড্রাইভার তুমি যেখানে যাবে নিয়ে যাবে। দেই?
না।
লীলা বলল, তোমার হাত-পা কাঁপছে? কেন? জানি না কেন?
তোমার সঙ্গে গাড়িটা থাকুক প্লিজ। আরেকটা কথা শোন, মনে কর তোমার বাবা এই কাজটা করেছেন, তার জন্যে আমি কখনো, কোনোদিনও তোমাকে দায়ী করব না। Never ever.
মুহিব বলল, আমি সেটা জানি।
সত্যি জানো?
হ্যাঁ। আমি আমার জীবনে নিজের অজান্তেই কোনো একটা মহাপুণ্য করেছিলাম বলে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।
মহাপুণ্যটা কী তুমি জানো না?
না।
লীলা হাসতে হাসতে বলল, আমি কিন্তু জানি। তুমি আমাকে নর্দমা থেকে টেনে তুলেছ। এইটাই মহাপুণ্য।
আলাউদ্দিন মাংস-পরোটা খাচ্ছেন। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, কোন রেস্টুরেন্ট থেকে এনেছিস?
মুহিব বলল, লীলা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট।
ওয়ান্ডারফুল রান্না। পরোটা হয়েছে মাখনের মতো মোলায়েম। ঘি দিয়ে ভেজেছে মনে হয়, ঘিয়ের গন্ধ পাচ্ছি।
বাবা, আরাম করে খাও।
ওসি সাহেবের টাকাটা এনেছিস?
এনেছি।
পায়ে ধরার কথা মনে আছে তো?
মনে আছে।
বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্যে পায়ে ধরা যায়। দোষ হয় না।
তুমি কখনো কারো পায়ে ধরে বাবা?
না। হামিদুজ্জামান সাহেবকে টাকা দিয়েছিস? ঘাগু লইয়ার। কেইস পানি করে ছেড়ে দিবে।
মুহিব বলল, উনি শুরুতেই এক লাখ টাকা চান।
বলিস কী? সস্তা কাউকে খুঁজে বের করা দরকার। বদ মেয়েটার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিস?
না।
গাধার মতো কাজ করলে হবে মাথায় এত বড় বিপদ।
মুহিব বলল, তার বাবার সূত্রে টেলিফোনে কথা বলেছি। কোচিং সেন্টার থেকে উনার নাম্বার জোগাড় করেছিলাম।
আলাউদ্দিন বিরক্ত গলায় বললেন, টেলিফোনে কথা চালাচালি কী জন্যে? সামনাসামনি কথা বলবি। না-কি আমার কারণে মুখ দেখাতে লজ্জা হয়? ঐ লোক কী বলেছে?
উনি টাকা দিতে রাজি হয়ছেন।
রাজি হয়েছে?
হুঁ। উনি পাঁচ লাখ টাকা চান। পাঁচ লাখ দিলে মামলা তুলে নিবেন বলেছেন। তার বিজনেস খারাপ যাচ্ছে, এইজন্যে টাকাটা দরকার।
আলাউদ্দিন হতাশ গলায় বললেন, পাঁচ লাখ কই পাব?
মুহিব বলল, উনি টাকা নিলেন, তারপর মামলা তুললেন না?
আলাউদ্দিন বিরক্ত গলায় বললেন, আগেই কু ডাক ডাকা শুরু করলি? জায়গাটা বেচে দে। চার কাঠা জায়গা। পাঁচ ছয় লাখ পাওয়ার কথা।
আমরা থাকব কোথায় বাবা?
আমি জেল থেকে বের হই। একটা কিছু ব্যবস্থা করবই। জায়গা বেচে দে। দ্রুত ব্যবস্থা করা মামলা কোর্টে ওঠার আগেই ব্যবস্থা করা দরকার। তোর মা আছে কেমন?
ভালো?
আমার বিষয়ে কিছু বলে? বোকা মেয়েমানুষ। যা শুনবে সবই বিশ্বাসী করবে। ধরেই নিয়েছে আমি এই কাজ করেছি। ধরে থাপড়ানো দরকার।
মুহিব বলল, মা তো কিছুই বলছে না। শুধু শুধু তাঁকে থাপড়ানোর কথা কেন