আহসান বলল, তুমি মনে হয় ridicule করছ। সবার সামনে কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া শূন্যে ভেসে থাকী কঠিন কাজ। যে দেখে তার মধ্যে এক ধরনের অলৌকিক অনুভূতি হয়। তুমি দেখবে?
লীলা বলল, আমি কীভাবে দেখব? ব্লেইন সাহেবকে আমি কোথায় পাব?
আহসান বলল, আমি দেখাব।
লীলা বলল, আপনি দেখবেন মানে? আপনি ম্যাজিক জানেন না-কি?
ম্যাজিক জানি না, তবে দেশের বাইরে যখন যাই দুই একটা ইজি আইটেম ম্যাজিক শপ থেকে কিনে নিয়ে আসি।
শূন্যে ভাসা ইজি আইটেম?
কৌশলটা খুবই সহজ। Optical illusion তৈরি করা। শূন্যে ভাসার ডেভিড ব্লেইনের এই ভার্সানটার কৌশল জানতে তিনশ ডুলার খরচ করতে হয়েছে। তোমাকে দেখাব?
দেখান।
আহসান উঠে দাঁড়াল। ঘরের শেষমাথায় চলে গেল। বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে একটু নিচু হলো, তারপর লীলাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যি শূন্যে ছয় ইঞ্চি ওপরে উঠে গেল। লীলা বলল, Oh God!
আহসান শূন্য থেকে নামতে নামতে বলল, আনন্দ পেয়েছ?
লীলা বলল, অবশ্যই আনন্দ পেয়েছি।
কৌশলটা শিখিয়ে দেব?
লীলা বলল, না। কৌশল কেন শেখাবেন? কৌশল শিখলে তো রহস্যই নষ্ট। তবে আপনি মুহিবকে দেখাতে পারেন। মাঝে মাঝে সে শূন্যে ভেসে আমাকে দেখাবে। আমি মজা পাব।
আহসান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আচ্ছা তাকে শিখিয়ে দেব।
লীলা বলল, এখন একটা কাজ করুন, আপনার শূন্যে ভাসার খেলা বাবাকে দেখিয়ে আসুন। বেচারা একা একা ঘরে বসে আছে।
আহসান বললেন, তুমি চল। তিনজন মিলে গল্প করি।
লীলা বলল, আমার জ্বর আসছে। জ্বর আসার সময় বাবার বক্তৃতী অসহ্য লাগে। আমি কিছুক্ষণ শুয়ে থাকব। ডিনারের সময় আমাকে ডেকে পাঠাবেন। আপনার সঙ্গে ডিনার করব।
লীলা উঠে দাঁড়াল। তাকে দ্রুত বিছানায় শুয়ে পড়তে হবে। কবিতার দ্বিতীয় লাইনটা মনে হয় চলে এসেছে।
আহসানকে পেয়ে শওকত সাহেব আনন্দিত।
তিনি নতুন একটা বই পড়ছেন। বইয়ে বিবর্তনবাদের জনক Darwin সাহেবকে ধরাশায়ী করা হয়েছে। বিষয়টায় তিনি বিপুল আনন্দ পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষ বানর এটা তিনি নিতেই পারতেন না। এখন সমস্যার সমাধান হয়েছে। তিনি আহসানের দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, তুমি ডারউইনবাদে বিশ্বাস কর?
আহসান বলল, জি চাচা করি।
তোমার বিশ্বাস তুমি এখন যে-কোনো একটা ভালো ডাস্টবিন দেখে ফেলে দিয়ে আসতে পার?
আহসান বলল, জি আচ্ছা।
পুরো বিষয়টা না শুনেই জি আচ্ছা বলবে না। আগে পুরো বিষয়টা শোন।
আহসান হতাশভঙ্গিতে পুরো বিষয়টা শোনার জন্যে প্রস্তুত হলো। সহজে এই বিরক্তিকর মনুষটার কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
শওকত সাহেব বললেন, তোমাদের ডারউইনের থিওরি বলে পাখি এসেছে সরীসৃপ থেকে। তুমি এখন একটা সাপ এবং ময়ূর পাশাপাশি রাখ। চিন্তা কর যে ময়ুরের পূর্বপুরুষ সাপ। যে সাপ এখন ময়ূরের প্রিয় খাদ্য। বলো তোমার কিছু বলার আছে?
এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই চাচা।
মনে মনে দশের ওপরে ৯৫০টা শূন্য বসাও। এই বিশাল প্রায় অসীম সংখ্যা দিয়ে এককে ভাগ কর। কী পাবে জানো? শূন্য। এটা হলো অ্যাটমে অ্যাটমে ধাক্কাধাক্কি করে DNA অনু তৈরির সম্ভাবনা। মিলার নামে কোনো সাইন্টিস্টের নাম
শুনেছ? ছাগলটাইপ সাইনটিস্ট।
চাচা, শুনি নি।
ঐ ছাগলটা ১৯৫০ সনে একটা এক্সপেরিমেন্ট করে অন্য ছাগল সাইন্টিস্টদের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। ছাগলটা করেছে কী, ল্যাবরেটরিতে আদি পৃথিবীর আবহাওয়া তৈরি করে ঘনঘন ইলেকট্রিক কারেন্ট পাস করেছে। কিছু প্রোটিন অনু তৈরি করে বলেছে— এইভাবেই পৃথিবীতে প্রাণের শুরু। প্রাণ সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার কোনো ভূমিকা নেই। এখন সেই ছাগল মিলারকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে হাসাহাসি। Life ম্যাগাজিনে কী লেখা হয়েছিল পড়ে শোনাই।
চাচা, আরেকদিন শুনি। জটিল কিছু শোনার জন্যে আমি এই মুহূর্তে মানসিকভাবে তৈরি না।
শওকত সাহেব বললেন, জটিল কিছু বলছি না। জলবৎ তরলং। মন দিয়ে শোন। আল্ডারলাইন করে রেখেছি।
শওকত সাহেব পড়তে শুরু করলেন। আহসান হতাশ চোখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল।
Geologist now think that the premordial atmosphere consisted mainly of carbon dioxide and Nitrogen gases that are less reactive than those used in the 1953 Mitler experiment…
পদ্মর জন্মদিন অনুষ্ঠানে মুহিব উপস্থিত হয়েছে। তার হাতে গিফট র্যাপ দিয়ে মোড়ানো বিশাল বাক্স দেখে দারোয়োন কিছু জিজ্ঞেস করল না। দারোয়ান বলল, ছাদে চলে যান। ছাদে প্যান্ডেল খাটিয়ে উৎসব।
ছাদে উঠে মুহিব পুরোপুরি হকচকিয়ে গেল। বিশাল প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের এক মাথায় স্টেজ করা হয়েছে। বিচিত্র পোশাক পরা একজন ডিসকো জকি ভয়ঙ্কর ধরনের বাজনা বাজাচ্ছেন। সেই বাজনার সঙ্গে ছেলেমেয়েরা যার যেমন ইচ্ছা নেচে যাচ্ছে। পাশেই বার তৈরি করা হয়েছে। নানান সাইজ এবং নানান ধরনের বোতল টেবিলে ঝলমল করছে। দুজন বারটেন্ডার ড্রিংক্স দিচ্ছে। বারের ওপর বড় বড় করে লেখা–
Dont over do it. মুহিব উপহারের বাক্স নিয়ে কী করবে বুঝতে পারছে না। এখানে কারো হাতেই উপহারের কোনো প্যাকেট দেখা যাচ্ছে না। হলুদ ব্লেজার পরা অতি সুদর্শন এক ভদ্রলোক এসে মুহিবের সামনে দাঁড়ালেন। বিনয়ী গলায় বললেন, আপনার পরিচয় জানতে পারি?
মুহিব বলল, আমি পদ্মর জন্যে একটা উপহার নিয়ে এসেছি। পদ্মর মা পাঠিয়েছেন।