আমি কিছু করি না। আমিও একজন উটকো লোক।
তাহলে দেখা হবে না। লেখালেখি করে লাভ নাই। চলে যান।
এসেছি যখন চেষ্টা করে দেখি।
বসেন ঐ চেয়ারে। দশটা বাজুক। দশটার পর ভেতরে খবর দেব। দশটার আগে ম্যাডামের কাছে খবর পাঠানো নিষেধ।
মুহিব বলল, তিনতলা বাড়ির পুরোটাতেই কি ম্যাডাম থাকেন?
জি।
মুহিব বলল, এমন কেউ কি আছে যাকে আপনারা গেটে আটকান না? সে সরাসরি চলে যেতে পারে। ফ্রি পাশ।
এমন কেউ নাই। ম্যাডামের হাসবেন্ড যদি আসেন তাকেও খবর পাঠাতে হয়।
ম্যাডাম বিবাহিত? জানতাম না তো।
কেয়ারটেকার বলল, সম্পর্ক নাই। দুজন আলাদা থাকে। পুলা একটা আছে। স্যার তরে মাঝে মইদ্যে দেখতে আসে।
মুহিব বলল, ছেলের নাম কী?
পদ্ম।
পদ্ম তো মেয়েদের নাম।
কথা ঠিক বলেছেন, তয় বড়লোকদের কারবার। মেয়ের নাম দেয় ছেলেরে। ছেলের নাম দেয় মেয়েরে।
মুহিব বলল, ভাই, সিগারেট খাওয়া যাবে? না রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেয়ে আসতে হবে?
খান সিগারেট।
মুহিব একটা সিগারেট ধরালো। কেয়ারটেকারের দিকে প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনিও একটা খান। আসুন দুই ভাই মিলে ধোয়া ছাড়ি। আপনার নাম কী?
মকবুল।
মকবুল ভাই, সিগারেট ধরান।
মকবুল সিগারেট নিল। গম্ভীর গলায় বলল, আমার সাথে খাতির কইরা লাভ নাই। ম্যাডাম পারমিশন না দিলে No see.
মুহিব বলল, আশেপাশে চায়ের দোকান আছে? চা খেয়ে সময় কাটাই, দশটার পরে একবার এসে খোঁজ নিব পারমিট পাওয়া গেল কি-না।
বড় রাস্তার উল্টাদিকে একটা চায়ের দোকান আছে। চা ভালো বানায়।
পারমিশন পাওয়া গেছে। পারমিশন পাওয়ায় মকবুলকে অসন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে। সে বিরক্ত মুখে বলল, চলে যান। ফিরত যাবার সময় যে টাইমে ফিব্রত যাচ্ছেন সেই টাইম লিখে যাবেন।
কলিংবেলে হাত রাখার আগেই নিলি দরজা খুলল। কোনো একটা ম্যাগাজিনে (খুব সম্ভব তারকা সংবাদ) মুহিব পড়েছিল, মেকাপ ছাড়া নায়িকাদের চেহারা প্রায় পেতনির কাছাকাছি। নিলি মনে হয় তার মধ্যে পড়েন না। তাকে মেকাপ ছাড়া অনেক বেশি মিষ্টি লাগছে।
নিলি বলল, মুহিব বসুন। আমার মন বলছিল আজকালের মধ্যে আপনি নাটকের বিষয়ে সুপারিশ করতে আসবেন। সুপারিশ করতে আসা দোষের কিছু না। জীবনের প্রথম নাটক প্রচারিত হোক সবাই চায়। আমি কিন্তু ঐ নাটকটা করব না।
মুহিব বলল, ম্যাডাম, আমি সুপারিশ করতে আসি নাই। আমার কপালে আছে সবকিছুতে আমি ফাইনাল পর্যন্ত যাব, তারপর ভজঘট হয়ে যাবে।
তাই না-কি?
জি। টুথপেস্টের একটা অ্যাড করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সব ফাইনাল। যেদিন শুটিং হবে সেদিন ডিরেক্টর বললেন আমাকে দিয়ে হবে না। আমার চোখে না-কি মায়া নাই।
ডিরেক্টর সাহেবের নাম কী?
নাম মনে নাই।
চোখে মায়া নেই বলে বিজ্ঞাপন বাতিল?
জি।
নিলি বলল, চোখের মায়াটা আসলে কী?
মুহিব বলল, জানি না।
নিলি বলল, ভালো করে তাকিয়ে দেখুন তো। আমার চোখে কি মায়া আছে?
মুহিব কী বলবে বুঝতে পারছে না। লীলার মতো সহজ সম্পর্ক থাকলে বলতো, ম্যাডাম আপনার চোখে তেমন মায়া দেখছি না। কাঠিন্য দেখছি। বিজ্ঞাপনের ছবিতে কাজ করতে গেলে ডিরেক্টর সাহেব আপনাকেও বাদ দিয়ে দিতেন।
নিলি বলল, আমার চোখে মায়া নেই এই কথাটাই তো বলতে চাচ্ছেন। চক্ষুলজ্জায় বলতে পারছেন না। ঠিকই ধরেছেন। আমার দৃষ্টি কঠিন। যখন আমি আমার ছেলের দিকে তাকাই, তখন দৃষ্টি কোমল হয়। চোখে মায়া চলে আসে। চোখের মায়ার এই হচ্ছে রহস্য। চোখের মায়া গণবিষয় না। শুধুমাত্র প্রিয়জনদের জন্যে। আরো রহস্য আছে। জানতে চান? জানলে অভিনয়ে সুবিধা হবে।
মুহিব বলল, বলুন।
নিলি বলল, আপনি আপনার সামনের পেইন্টিংটার দিকে তাকান। কী দেখছেন?
পাথরের ওপর পাখি বসে আছে।
নিলি বলল, মানুষের চোখের দৃষ্টি হচ্ছে Convergent, দুই চোখের দৃষ্টি একবিন্দুতে মিলে। যদি ইচ্ছা করে মিলতে না দেয়া হয়, তাহলেই চোখে মায়া চলে আসে। আপনি এখন পেইন্টিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকুন, তবে ছবি দেখবেন না। ডান চোখে দেখার চেষ্টা করেন পেইন্টিং-এর ডান ফ্রেম। বাঁ চোখে বা ফ্রেম। একটু চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে। এই তো হয়েছে। এবং আপনার চোখে মায়া চলে এসেছে।
মুহিব বলল, চোখে মায়া আনার ব্যাপারটা কি কেউ আপনাকে শিখিয়েছে?
নিলি বলল, না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই বের করেছি। ভালো কথা, আপনার বাসায় কি বড় আয়না আছে? পুরো শরীর দেখা যায় এমন আয়না?
না।
বড় একটা আয়না কিনবেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলবেন।
লাভ কী?
অভিনয় ভালো হবে। এক্সপ্রেশন ভালো হবে। শব্দ করে হাসবেন। এতে মুখের চামড়ায় ফ্লেক্সিবিলিটি আসবে। আপনাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস দিয়ে দিলাম। কারণ জানতে চান?
চাই।
আপনি খুব ভালো একটা দিনে এসেছেন। আজ আমার বাবুর জন্মদিন। দুবছর আগে এইদিনে সকাল দশটা চল্লিশ মিনিটে বাবু জন্মেছিল। ডাক্তার যখন আমার কোলে বাবুকে দিল আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ডাক্তার সাহেব, এই পদ্মফুল কি আমার? সেই থেকে ছেলের নাম পদ্ম!
নিলির চোখে পানি এসে গেছে। সে কোনোরকম অস্বস্তি বোধ না করে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছল। মুহিব বলল, আপনার পদ্মকে কি একটু দেখতে পারি?
নিলি বলল, না। পদ্মার বাবা তাকে নিয়ে গেছেন। পদ্মার কাস্টডি নিয়ে মামলা চলছিল। মামলায় সে জিতেছে। সাত বছর বয়স পর্যন্ত সব মায়েরা বাচ্চাকে রাখার অধিকার পায়। আমি পাই নি। কারণ তার বাবা কোর্টে প্রমাণ করতে পেরেছেন। আমি চরিত্রহীনা নারী। আমার বাড়িতে রোজা রাতে দুষ্ট লোকের আড্ডা হয় মদ্যপান করা হয়। অভিনয়ের নাম করে আমি দিনের পর দিন বিভিন্ন শুটিংস্পটে রাত কাটাই। আমার ছেলে কাজের মেয়েদের কাছে একা একা থাকে। বাবুর যে মূল আয়া সজিরন কোর্টে তাই বলেছে। বাবুর বাবা সজিরনকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছেন। পঞ্চাশ হাজার টাকা ওদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার।