দরকার নেই।
তুমি রেস্ট নাও। জ্বর নিয়ে অতি প্রিয়জনদের সঙ্গেও কথা বলতে ভালো লাগে না। আর আমি অতি প্রিয়জনদের তালিকায় নেই।
লীলা বলল, আমার অতি প্রিয়দের তালিকায় কে কে আছে বলে আপনার ধারণী?
আহসান বলল, তোমার বাবা। মুহিব নামের যুবক, যে তোমাকে ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করেছে। তোমার ডাক্তার ছোটখালা সালেহা। ছাদে তোমার পোষা দুই ময়ূর এবং বাঁদরটা। বাঁদরটার নাম যেন কী? হড়হড়কু না?
জি, হড়হড়কু।
এই অদ্ভুত নামটা কেন দিয়েছ?
লীলা বলল, আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার হড়হড়কু বলুন, দেখবেন হড়হড়কু বলার সময় চেহারাটা বাঁদরের মতো হয়ে যায়। এইজন্যেই নাম রেখেছি হড়হড়কু।
আহসান বলল, এক্ষুনি ব্যাপারটা টেস্ট করছি। লীলা, কথা শেষ করার আগে ছোট্ট আরেকটা কথা। ভিন্ন প্রসঙ্গ। বলি?
বলুন।
আমি বিদেশ থেকে যখন আসি, তুমি আমার সঙ্গে আপনি আপনি করে কথা বলো। একটা পর্যায়ে এসে তুমি বলতে শুরু কর, তখন বিদেশে যাবার সময় হয়। বিদেশ থেকে ফিরে আসি, আবার শুরু কর আপনি।
লীলা বলল, এবার যখন তুমি বলা শুরু করব তখন বিদেশ যাবেন না। তাহলেই তো হয়।
আহসান বললেন, এটা মন্দ বলে নি। লীলা রাখি। দেখা হবে সন্ধ্যায়। দ্রুত সেরে উঠ।
চেষ্টা করছি।
থ্যাংক য়্যু
লীলা টেলিফোন রাখার পরপরই আসমা গামলাভর্তি পানি এবং তোয়ালে নিয়ে ঢুকেছে। লীলা বলল, কী?
ম্যাডাম, আপনার গা স্পঞ্জ করে দেব।
লাগবে না।
আপনি চুপ করে শুয়ে থাকুন। আমি গা স্পঞ্জ করছি, দেখবেন কত ভালো লাগবে। ম্যাডাম, আমি আপনার সারা গা স্পঞ্জ করব। আপনি চোখ বন্ধ করে থাকুন। আমাকে লজ্জা করার কিছু নেই।
আসমা গা স্পঞ্জ করছে। লীলা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তার ভালো লাগছে। মনে হয় জ্বর কমতে শুরু করেছে।
ম্যাডাম, ছাদে আপনার ময়র দুটা দেখে এসেছি। এদের স্বাস্থ্য বেশ ভালো। কিছুদিনের মধ্যেই পালকে রঙ ধরবে।
তুমি জাননা কীভাবে?
আমি কুয়েতে যে শেখের বাড়িতে কাজ করতাম, উনার দশটা ময়ূর ছিল। দুটা ইমু পাখি ছিল। ময়ুরকে খাওয়ানোর জন্যে উনি তার প্রাইভেট প্লেনে করে হংকং থেকে সাপ আনাতেন।
শেখের নাম কী?
অনেক লম্বা নাম— আল হাসান ইবনে মোহম্মদ ইবন জাফর ইবনিল হোসায়ান। সবাই ডাকত শেখ হাসান।
তাঁর চিড়িয়াখানায় আর কী ছিল?
নানান ধরনে পাখি ছিল। কোনো পশু ছিল না। তিনি পশু পছন্দ করতেন। অনেক জাতের ঈগল ছিল। একটা ঈগল ছিল তার পোষা। নাম সাব্বাই। তিনি ছাদে উঠে ঈগলটা ছেড়ে দিতেন। ঈগল সোজাসুজি আকাশে উঠে নিমিষের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেত। আবার নেয়ে এসে তার হাতে বসত। ঈগলকে খাওয়ানোর জন্যে রোজ একটা করে দুম্বা জব হতো। উনার পাখি দেখাশোনার জন্যে চারজন লোক ছিল।
তোমার দায়িত্ব কী ছিল?
ম্যাডাম, আমি, ফিলিপিনের তিন মেয়ে, শ্রীলঙ্কার একটা মেয়ে আর ইন্ডিয়ার একটা মেয়ে, আমরা ছিলাম হাউসমভ।
এতজন?
শেখের বাড়িটা ছিল প্রকাণ্ড। শোবার ঘর ছিল একুশটা। ম্যাডাম, বাথরুমে যান, হাতমুখ ধোন। আমি নাশতা আনিচ্ছি। আপনার জ্বর নামছে, গা ঘামছে।
কী নাশতা খাব?
রুটি আর ভাজি। আমি একটা লিস্টি করে রেখেছি। লিস্টি মতো জিনিস আনিয়ে দিলে সকালের নাশতার সমস্যা হবে না।
তোমার ঐ শেখ, উনি সকালে কী নাশতা খেতেন?
প্যারিসের একটা রেস্টুরেন্টের সঙ্গে উনার কন্ট্রাক্ট ছিল। তারা নাশতার ব্যবস্থা করত। উনার এত টাকা যে খরচ করার পথ জানতেন না। ম্যাডাম, আপনার জ্বর এখন আরেকবার মাপব?
দরকার নেই। আমি বুঝতে পারছি জ্বর কমেছে।
আসমা থার্মোমিটার হাতে নিয়ে বলল, জ্বর কতটা কমেছে জানা দরকার ম্যাডাম।
তুমি আমাকে এখন থেকে আপা ডাকবে। ম্যাডাম ডাকবে না। বারবার ম্যাডাম ডাকছু। মনে হচ্ছে আমি সিনেমার নায়িকা। এক্ষুনি ডিরেক্টর সাহেব আমাকে শট দেবার জন্যে ডাকবেন। আমাকে লীলা আপা ভাকবে। যতবার লীলা শব্দটা শুনি আমার ভালো লাগে।
আসমা বলল, আমি আপা ডাকব। লীলা আপা ডাকব না। আপনার নাম ধরে ডাকবেন আপনার প্রিয়জনরা।
লীলা বলল, থার্মোমিটার মুখে দিয়ে আমি এক মিনিট বসে থাকব, কথা বলতে পারব না। এই এক মিনিটে তুমি তোমার স্যার আহসান সাহেব সম্পর্কে যা জানো বলবে।
আসমা বলল, পুরুষমানুষের মধ্যে মন্দভাব বেশি। মন্দ নাই এমন পুরুষ পাওয়া কঠিন। স্যারের মধ্যে মন্দ অংশ কম। আপা, আপনি এক সময় না এক সময় জানবেন এইজন্যে এখনই বলছি— কুয়েতের ঐ শেখ সৰু কয়জন মেয়েকে ব্যবহার করত। অনেক ঝামেলা করে আমি ফিরে আসি। আহসান স্যার ফিরে আসার ব্যাপারে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমার মতো মেয়েদের পুরুষরা বেশ্যা বিবেচনা করে। তাদের সঙ্গে সেই আচরণ করে। অহসান স্যার কখনো এরকম করেন নি। তিনি সম্মানের সঙ্গেই আমার সঙ্গে কথা বলেন।
আসমা থার্মোমিটার হাতে নিয়ে বলল, আপা, আপনার টেম্পারেচার এখন একশর সামান্য নিচে।
লীলা বলল, শেখের নামটা আরেকবার বলো তো!
আসমা বলল, আল হাসান ইবনে মোহম্মদ ইবন জাফর ইবনিল হোসায়ান।
মুহিব নিলি ম্যাডামের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। দুজন দারোয়ান গেট পাহারা দিচ্ছে। আর একজন সম্ভবত কেয়ারটেকার জাতীয় কেউ। সে-ই মুহিবকে আটকেছে।
আপনার নাম, কোথেকে এসেছেন সেই ঠিকানা এবং কেন এসেছেন সেটা লেখেন।
মুহিব বলল, এত লেখাপড়া?
জি এইটাই নিয়ম। নিলি ম্যাডাম এই নিয়ম করেছেন। তাকে অনেক উটকা লোক বিরক্ত করে তো এইজন্যে। আপনি করেন কী?