রাজিয়া বললেন, খেতে আয় তো।
মুহিব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, মা, তুমি যে লটারিতে এক হাজার টাকা পেয়েছ এটা জানো?
না তো। আমি তো কোনো লটারির টিকিট কিনি নাই। মুহিব বলল, আমি তোমার হয়ে কিনেছি। সেখানে এক হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এই নাও।
রাজিয়া টাকা হাতে নিতে নিতে আনন্দিত গলায় বললেন, কিসের লটারির টিকিট কিনেছিলি?
মুহিব বলে, ড্রামা লটারি। সেখানেই উঠেছে। তুমি বিরাট ভাগ্যবতী মা।
রাত একটা বাজে। মুহিবের চোখ ঘুমে ভেঙে আসছে। সে অনেক কষ্টে জেগে আছে। লীলা রাত একটায় টেলিফোন করবে। অল্প কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমুতে যাবে। এই নিয়ম।
মুহিবের টেলিফোন বাজছে। মুহিব ঘুমঘুম গলায় বলল, লীলা, কেমন আছ?
লীলা বলল, বৃষ্টি হচ্ছে জানো?
মুহিব বলল, জানি। আমাদের বাসার ছাদ টিনের। ছাদে শব্দ হচ্ছে।
আমি ঠিক করেছি ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজব।
মুহিব বলল, বৃষ্টিতে ভিজে নিওমোনিয়া বাধাও। কোনো অসুবিধা নেই।
লীলা বলল, কতক্ষণ তোমাকে দেখি না জানো?
কতক্ষণ?
চুয়ান্ন ঘণ্টা। কাল সন্ধ্যায় বাসায় আসতে পারবে?
পার্টি?
হ্যাঁ পার্টি।
হাইফাই ধরনের?
বলতে পার। পার্টি দিচ্ছেন আহসান সাহেব। উনি হাইফাই পার্টি পছন্দ করেন।
আহসান সাহেবটা কে?
তুমি যদি উত্তরমেরু হও উনি দক্ষিণমেরুরও দক্ষিণ। বৎসরে ছয় মাস আমেরিকা-ইউরোপ করেন। তাঁর একটা পিএইচডি ডিগ্রি আছে। টঙ্গীতে তার এটা ওষুধ ফ্যাক্টরি আছে। সাভারে আছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি।
তোমার সঙ্গে সম্পর্কটা কী?
লীলা বলল, আমার মা তাকে খুব পছন্দ করতেন। বাবাকে মৃত্যুর আগে বলে গেছেন তার সঙ্গে যেন আমার বিয়ে হয়।
সম্ভাবনা আছে?
অবশ্যই আছে। অপছন্দ করার মতো কিছু তাঁর মধ্যে নেই।
মুহিব হাই তুলতে তুলতে বলল, টেলিফোন রাখি। ঘুম পাচ্ছে।
লীলা বলল, আচ্ছা। তোমাদের ওদিকে কি এখনো বৃষ্টি হচ্ছে?
হুঁ।
হুঁ কী! সুন্দর করে বলল।
বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
লীলা বলল, এক লাইন বৃষ্টির গান গেয়ে টেলিফোন রাখ।
মুহিব বলল, আমি ক্যাসেট প্লেয়ার না। টিপ দেবে আর গান বের হবে।
এক লাইন। প্লিজ, এক লাইন।
বৃষ্টির গান একটাও মনে পড়ছে না।
লীলা বলল, ঐটা গাও–এসো করো স্নান নবধারা জলে– এসো নীপ বনে। গানটা মাথার মধ্যে নিয়ে আমি বৃষ্টিতে ভিজব। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। তিনবার প্লিজ বললে কথা শুনতে হয়। না শুনলে কী হয় জানো?
কী হয়?
তিনদিক থেকে বিপদ আসে।
মুহিব বলল, এখন গান শুরু করলে আমার ঘুম কেটে যাবে।
লীলা বলল, ঘুম কাটলে খুব ভালো হবে। তুমিও বৃষ্টিতে ভিজবে। একই সময় একই কাজ দুজন দুদিকে করব।
মুহিব হতাশ গলায় বলল, আমার ঘুম কেটে গেছে। সারারাত আমার আর ঘুম হবে না।
ঘুমের ওষুধ খেলেও হবে না?
না। এটা আমার অনেক দিনের সমস্যা, ঘুম কাটলে ঘুম শেষ।
তাহলে গল্প কর। তোমার নাটকটা কবে দেখাবে?
জানি না।
অন্ধ সেজেছে যে মেয়েটি তার নাম কী?
নিলি।
উনি তো বিখ্যাত অভিনেত্রী।
জানি না তো।
আমাদের ইউনিভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। এক্স স্টুডেন্ট হিসেবে। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি অভিনয় করেন কী জন্যে? তিনি বললেন, অভিনয় হচ্ছে অন্য মানুষ সাজা। এক অর্থে মানুষকে ভেঙ্গানো। মানুষকে ভেঙ্গাতে আমার ভালো লাগে। এই জন্যেই অভিনয় করি। মজার আনসার না?
খুব মজার না। যারা শো বিজনেসে থাকেন, তাদের মজার মজার কথা বলতে হয়।
লীলা বলল, তুমিও তো এখন শো বিজনেসে ঢুকে পড়েছ। তুমি একটা মজার কথা বলো। আচ্ছা আমি প্রশ্ন করছি–মুহিব সাহেব, আপনি অভিনয় করেন কেন?
হঠাৎ কিছু টাকা পাচ্ছি এই কারণে অভিনয় করি।
আপনার জীবনের প্রথম অভিনয় নিয়ে মজার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
না নেই। সব অভিজ্ঞতাই টেনশনের।
ঠিক আছে। একটা টেনশনের অভিজ্ঞতাই বলুন।
মুহিব বলল, একটা দৃশ্য ছিল এরকম— অন্ধ মেয়েটি দিঘির পারে বসে আছে। আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। আমি যে তার পাশে বসেছি এটা সে বুঝতে পারল না। আমি তখন তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে কাশলাম।
এই দৃশ্যে টেনশনের কী আছে?
টেনশনের ব্যাপার হচ্ছে, দৃশ্যটা আমার পছন্দ হচ্ছিল না। কাশি বান্ধবীর দৃষ্টি আকর্ষণ কেন করব? আমি তখন ডিরেক্টর সাহেবকে বললাম, কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ না করে আমি যদি নিচু গলায় এক লাইন গান করি–আজ তোমারে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে– তাহলে কেমন হয় স্যার? আমি গান গাইতে পারি। ডিরেক্টর স্যার বললেন, খুবই ভালো হয়। ম্যাডাম নিলি বললেন, মোটেই ভালো হয় না। পুরো ব্যাপারটা সিনেমেটিক হয়। সস্তা বাংলা সিনেমা। দুজনের মধ্যে তর্ক বেধে গেল। এক পর্যায়ে ম্যাডাম কঠিন গলায় বললেন, আমি এই নাটকে কাজ করব না। আমি চলে যাচ্ছি, আপনি অনা কোনো নায়িকা খুঁজে বের করুন।
উনি চলে গেলেন?
হ্যাঁ চলে গেলেন। আমার জন্যে পুরো ব্যাপারটা কেঁচে গেল। আগামীকাল শুটিং ছিল। শুটিং ক্যানসেল হয়ে গেছে।
লীলা বলল, তুমি সমস্যা বাঁধিয়েছ, তোমার উচিত সমস্যা মেটানো।
কীভাবে মেটাব?
যে সমস্যা তৈরি করে সে জানে কীভাবে সমস্যা মিটাবে। এই অনেক কথা বলে ফেলেছি— আমার নিজেরই এখন ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।
বৃষ্টিতে ভিজবে না?
অবশ্যই ভিজব। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘুমাব। তুমি কখনো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘুমিয়েছ?
না।
একটা পাটি পেতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। টাওয়েল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। মুখে বৃষ্টি পড়লে ঘুম আসবে না। মনে হবে মশা কামড়াচ্ছে।