ডাক্তারের কথার মাঝখানেই কঠিন স্বরে ক্রিস বলল, রেগান অশ্লীল কথা বলেছে … এসব আপনি বলছেন কেন? ও কি আপনাকে কিছু বলেছে?
ডাক্তার আমতা-আমতা করতে লাগলেন।
বলুন, ও কি বলেছে?
হ্যাঁ, তা বলেছে … তবে এই জাতীয় অসুখে…
ও কি বলেছে তা আমি জানতে চাই, ডাঃ ক্লীন।
কি বলেছে সেটা মোটেই জরুরী নয়, মিসেস ম্যাকনীল।
আমার কাছে জরুরী। আপনি বলুন।
ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ধীরে ধীরে বললেন, আমি যখন ওকে পরীক্ষা করছিলাম, তখন হঠাৎ ও বলল, আমি যেন পরীক্ষা করার ছলে ওর পেন্টির ভেতর হাত ঢোকাবার চেষ্টা না করি।
হায়, ঈশ্বর! এসব কি বলছেন আপনি!
সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করার কিছু নেই। দুসপ্তাহ পর আবার ওকে দেখব।
ঠিক আছে।
আমি তাহলে লিখে রাখছি ২৬ তারিখ বিকেল তিনটা।
বাড়ি ফেরার পথে রেগান জিজ্ঞেস করল, ডাক্তার তোমাকে কি বলেছে, মা?
বলেছে, তুমি খুব নার্ভাস।
আর কিছু না?
না।
তুমি কি তাকে কিছু বলেছ?
নাতো। আমি কিছুই বলিনি।
মানসিক স্থবিরতা কাটানোর জন্যেই ক্রিস ছোটখাট একটা পার্টির ব্যবস্থা করল। কিছু অন্তরঙ্গ লোকজন এসে হৈচৈ করলে মন ভাল থাকবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই পার্টি নিয়েও যথেষ্ট দুশ্চিন্তা হচ্ছিল ওর। সব ঠিকমত হবে তো? নিমন্ত্রিত লোকজন আসবে তো সবাই? এছাড়া টাকা পয়সা নিয়েও ইদানীং বেশ চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। গত বছর ও উপার্জন করেছে মোট চার লক্ষ ডলার। ক্রিসের ম্যানেজারের ধারণা এই টাকা যথেষ্ট নয়। এ বছর আরো বেশি রোজগার হওয়া দরকার। ক্রিস যদিও সবকিছু নিয়ে বেশ কিছুটা অন্যমনস্ক তবু খুব লক্ষ্য রাখল যাতে রেগান তার ওষুধ ঠিকমত খায়।
রেগানের অবশ্যি তেমন কোন উন্নতি দেখা গেল না। বরং ক্রিসের মনে হল, অবস্থা আগের চেয়েও খানিকটা খারাপ হয়েছে। বিছানা কাপছে জাতীয় কথাবার্তা এখন বলছে না, কিন্তু নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে আরেকটা। প্রায়ই বলেছে, ওর ঘরে নাকি কেমন বাজে একটা গন্ধ পাওয়া যায়। রেগানের পীড়াপীড়িতে ক্রিস একদিন ওর ঘরে গিয়ে অনেকক্ষণ থাকল ক্রিস। কোন গন্ধ পাওয়া গেল না। রেগান অবাক হয়ে বলল, সত্যি কোন গন্ধ পাচ্ছে না?
না তো।
বল কি, মা। আমি তো পাচ্ছি।
কি রকম গন্ধ, রেগান?
কাপড় পোড়ালে যে গন্ধ হয় সেই গন্ধ।
তাই?
হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কেন গন্ধটা পাচ্ছে না?
হ্যাঁ, মানে, তা খানিকটা যেন পাচ্ছি।
আসলে ক্রিসের নাকে কোন গন্ধ আসছিল না। রেগানের মন রাখতে ওইটুকু মিথ্যে বলল। ও ঠিক করেছে, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রেগান যা বলবে তাতেই সায় দিয়ে যাবে।
ডিনার পার্টির আগের রাতে ক্রিস কেমন এক চাপা অস্বস্তিতে ভুগতে লাগল। হাওয়া যেন হঠাৎ ভারি হয়ে উঠেছে। যেন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে এ বাড়িতে।
মাঝরাতের দিকে আবার রেগানের ঘর থেকে শব্দ আসতে লাগল। বন্ধ জানালাটা কোন কারণে কি হঠাৎ খুলে গেছে? হাওয়া লেগে কাপছে? ক্রিস গায়ে রোব জড়িয়ে রেগানের ঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। ওর কেন যেন মনে হল, দরজা খোলামাত্র দেখবে অচেনা কোন এক লোক রেগানের বিছানায় বসে আছে। ক্রিসের দরজা খুলতে রীতিমত হাত কাপল। রেগান হাত পা ছড়িয়ে ঘমুচ্ছে। জানালাটা বন্ধ। বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল ক্রিস। কেমন শীত করতে লাগল ওর। রেগানের ঘরটা এত ঠাণ্ডা কেন? হিটার চালু আছে। তারপরেও এত ঠাণ্ডা?
১.৪
অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে ক্রিস দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে, তার গায়ে হাল্কা সবুজ রঙের একটা স্কার্ট। নিমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। প্রথমে এলেন প্রতিবেশী মেরি জো পেরিন, সঙ্গে তাঁর তের বছরের ছেলে রবার্ট। আর সবার শেষে এলেন ফাদার ডাইয়ার। ছোটখাট মানুষ। এসেই হাসিমুখে বললেন, আমি আমার নেকটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এই জন্যে দেরি হল।
ফাদার ডাইয়ারের কথার ভঙ্গিতে ক্রিস হো হো করে হেসে উঠল, ওর মনের উদ্বেগ অনেকখানি কেটে গেল। পাটি জমে উঠল দেখতে দেখতে। বুফে ডিনার। খাবার নিয়ে সবাই এক এক দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। গল্পগুজব জমে উঠছে ক্রমে ক্রমে।
রান্না চমৎকার হয়েছে, ক্রিস।
সত্যি, অপূর্ব।
বেঁধেছে কে, উইলী? বাহ, ভাল রাঁধুনী পেয়েছ।
আলোচনা জমেছে মেরি জো-কে ঘিরে। উনি একজন নাম করা মিডিয়াম। প্রেততত্ত্ব নিয়ে খুব পড়াশোনা করেছেন। বেশ হাসি-খুশি মহিলা। ক্রিসের চমৎকার লাগল মহিলাকে। এদিকে ফাদার ডাইয়ার ঘোষণা করেছেন, খানাপিনা শেষ হলে সবাইকে তিনি পিয়ানো বাজিয়ে শোনাবেন। ক্রিস হঠাৎ খাপছাড়াভাবে ফাদারকে জিজ্ঞেস করল, ফাদার, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।
কি কথা?
চার্চের পেছনে যে ছোট্ট সাদা রঙের একটা বাড়ি আছে …
হলি ট্রিনিটি?
হ্যাঁ, হলি ট্রিনিটি। কি হয় ওখানে, ফাদার?
ফাদার জবাব দেয়ার আগেই মেরি জো বললেন, শুনেছি ওখানে শয়তানের উপাসনা হয়।
কিসের উপাসনা?
শয়তানের। ওদের ব্ল্যাক মাস বলে সবাই।
সত্যি বলছেন?
সত্যি মিথ্যে আমি জানি না, ক্রিস। সত্যি হতেও পারে। মিসেস জো বললেন, তবে ফাদার ভাল বলতে পারবেন। কয়েকদিন আগেই নাকি ওখানে ও রকম উপাসনা হয়েছে?
ফাদার ভাইয়ার বললেন, এই আলোচনাটা এখন বন্ধ থাক।
ক্রিস বলল, বন্ধ থাকবে কেন, বলুন না? আমার জানতে ইচ্ছা করছে।
ওসব অসুস্থ লোকজনদের কাণ্ড, মিসেস ম্যাকনীল। না শোনাই ভাল।
ক্রিস বলল, এমন কি গোপন ব্যাপার যে বলতে পারছেন না? আমি একজন ফাদারকে ওই বাড়িতে প্রায়ই যেতে দেখি। বাদামী রঙ, লম্বা।