ক্রিস বলল, সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবার জন্যেই ও এখন বলে তার ঘরে নাকি রাত্রিবেলায় খটখট শব্দ হয়। কিন্তু আমার মনে হয় শব্দটা রেগানই করে। কারণ কেউ ঘরে যাওয়ামাত্র শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। ইদানীং ও জিনিসপত্র হারাচ্ছে–বই, জামা, টুথব্রাশ–সবকিছু। গতকাল থেকে আবার বলছে, কারা নাকি ওর ঘরের আসবাবপত্র নাড়াচ্ছে। যখন ও ঘুমিয়ে থাকে তখন নাকি তারা ঘরের আসবাবপত্র নাড়ায়। আমার ধারনা আসলে রেগান নিজেই এসব করছে। আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই এ ব্যাপারে।
ক্রিস, তুমি কি বলতে চাও ও ঘুমের মধ্যে এসব করছে?
উহুঁ। দিব্যি জেগে জেগেই করছে। সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্যেই করছে। অন্তত আমার তাই ধারণা।
ক্রিস বিছানা নাড়ার ঘটনাটাও বলল। এ পর্যন্ত রেগান দুবার বলেছে যে, তার বিছানা আপনা-আপনি কাঁপতে থাকে।
এই বলে সে ঘুমুতে আসে মায়ের ঘরে। নিজের ঘরে ঘুমুতে তখন তার খুব ভয় করে।
ক্রিস, শারীরিক কারণেও বিছানা কাঁপতে পারে। যদি রেগানের ক্রনিক স্পাজম থেকে থাকে তাহলে …
না মার্ক, আমি বলিনি যে বিছানা কাঁপে। এটা রেগানের কথা।
অর্থাৎ ও মিথ্যা বলছে। বিছানা আসলে কাঁপছে না?
না, তাও আমি জানি না।
গায়ে জ্বর আছে?
না।
তুমি বলছিলে স্কুলে পড়াশোনো ভাল পারছে না।গয়ে কেমন পারছে? সাধারণ গণিতের কথা বলছি।
কেন, এ কথা জিজ্ঞেস করছ কেন?
আগে বল, অংকটা কেমন পারছে?
খুবই খারাপ। ইদানীং খারাপ হয়েছে। অংকের কথা কেন জিজ্ঞেস করলে?
অংকে খারাপ করা হচ্ছে একটা বিশেষ লক্ষণ।
কিসের লক্ষণ?
শুধুমাত্র অনুমানের ওপর আমি কিছু বলতে চাই না। তোমার কাছে কি পেনসিল আছে? আমি একজন ডাক্তারের নাম বলছি, লিখে নাও।
মার্ক, তুমি নিজে কি একবার আসতে পার না? প্লীজ।
না, আমার আসার দরকার নেই। যার ঠিকানা দিচ্ছি সে অত্যন্ত ভাল ডাক্তার, তোমার খুব কাছেই আছে।
ক্রিস ঠিকানা লিখল। ডাঃ স্যামুয়েল ক্লীন, অরলিংটন।
ওকে বলবে, পরীক্ষা-টরিক্ষা শেষ করে যেন আমাকে ফোন করে।
মার্ক, তুমি কি নিশ্চিত যে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে না?
হ্যাঁ, নিশ্চিত। উদাহরণ দিয়ে তোমাকে বোঝাচ্ছি। মনে কর, একজন লোক হঠাৎ বলছে সে অদ্ভুত সব দৃশ্য দেখে। কারা যেন তাকে ডাকে। সে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। রাতে ঘুমায় না। দুঃস্বপ্ন দেখে। তুমি কি তাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবে?
নিয়ে যাওয়াই তো উচিত।
ভাল করে ভেবে দেখো।
ভেবেই বলছি।
না। প্রথমে দেখতে হবে লোকটির ব্রেন টিউমার হয়েছে কি না। কারণ লক্ষণটা হচ্ছে ব্রেন টিউমারের। কাজেই, যে কোন অসুখে সবার আগে দেখতে হয় কোন শারীরিক অসুবিধা আছে কি না।
ডাঃ ক্লীনকে টেলিফোন করে ক্রিস বিকেলের জন্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করল। এখন তার হাতে প্রচুর সময়। শুটিং শেষ, এখন এডিটিং চলছে। কিছু প্যাচওয়ার্ক বাকি, তবে সেসবে ক্রিসের কোনো ভূমিকা নেই।
রেগানকে অন্য ঘরে পাঠিয়ে ডাঃ ক্লীন রোগের ইতিহাস জানতে লাগলেন। মাঝে মাঝে নোট নেয়া আর মাথা নাড়ানো ছাড়া তিনি কোন সাড়াশব্দ করলেন না। ক্রিস যখন বিছানা কঁপার কথা বলল তখন ডাক্তারের ভ্রু কুঁচকে উঠল। ক্রিস সব শেষে বলল, ডাক্তার মার্কের ধারণা রেগান যে হঠাৎ অংকে খারাপ করছে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমি বুঝতে পারছি না কেন।
আপনি কি স্কুলের লেখাপড়া সম্পর্কে বলছেন?
হ্যাঁ। অংকে কি সে খুবই খারাপ করেছে?
খুবই।
মিসেস ম্যাকনীল, আপনার মেয়েকে আগে ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে। হুট করে কিছু বলা ঠিক হবে না।
পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনেকগুলো পরীক্ষা করা হল। তারপর একদিন ডাঃ ক্লীন হাসিমুখে রেগানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথাবার্তা বললেন। তারপর প্রেসক্রিপশন লিখতে বসলেন। আমার মনে হচ্ছে আপনার মেয়ের যা হয়েছে তাকে হাইপার কাইনেটিক বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার বলা যেতে পারে।
কি বললেন?
এটা নার্ভের একটা অসুখ। এখনো আমরা ভাল জানি না। সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময়টায় অসুখটা হতে দেখা যায়। রেগানের মধ্যে এই অসুখের সব লক্ষণই আছে। অতিরিক্ত জীবনী শক্তি, রাগ, অংকে খারাপ করা …
এত জিনিস থাকতে অংক কেন?
এই অসুখের একটি বড় লক্ষণ হচ্ছে মনোসংযোগে অক্ষমতা। অংক হচ্ছে মনোসংযোগের ব্যাপার। ডাক্তার ক্লীন প্রেসক্রিপশনটি ক্রিসের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আমি ওকে দিয়েছি মিথাইলফেনিডেট। ওতেই দেখবেন কাজ হবে।
ওতেই হবে?
হ্যাঁ, ওতেই হবে। দশ মিলিগ্রাম করে দিনে দুবার।
এটা কি ট্রাংকুলাইজার?
না, এক ধরনের স্টিমুলেন্ট।
স্টিমুলেন্ট?
হ্যাঁ। ওর স্টিমুলেন্টেরই প্রয়োজন। অসুখটা হয়েছে মানসিক ডিপ্রেশনের জন্যে। উত্তেজনা দিয়ে তা নষ্ট করতে হবে।
তাহলে ওকে কোন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নেয়ার দরকার নেই?
না, তেমন দরকার আছে বলে মনে করি না।
ওষুধটা কতদিন খাওয়াতে হবে?
দুসপ্তাহ। এর মধ্যেই দেখবেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে।
আপনার ধারণা নার্ভের অসুখ?
আমার সেই রকমই সন্দেহ।
আচ্ছা, আপনি কি মনে করেন ও ইদানীং যে-সব মিথ্যা কথা বলছে সে সবও সেরে যাবে?
ডাঃ ক্লীন এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজেই আচমকা এক প্রশ্ন করলেন, বলুন তো, রেগান কি আগে কখনো অশ্লীল কথা বলেছে?
ক্রিস অবাক হয়ে বলল, না তো, কখনো না। ও সেরকম মেয়েই নয়।
এই তো মিলে যাচ্ছে। অশ্লীল কথা বলাটাও মিথ্যা বলা শুরু করার মত ব্যাপার। এই জাতীয় অসুখে …