এই ওইজা বোর্ড নিয়ে খেলছিলে নাকি, রেগান?
হ্যাঁ।
জানো কি করে খেলতে হয়?
হুঁ। দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি।
রেগানের উৎসাহ দেখে ক্রিস গম্ভীর গলায় বলল, যতদূর জানি দুজন লাগে এতে।
না মা, একজনেও হয়। আমি তো সব সময় একা একাই করি।
ক্রিস চেয়ার টেনে বসল। হালকা স্বরে বলল, এসো দুজনে মিলেই করি।
রেগান খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বসে পড়ল মায়ের সামনে। আঙ্গুল রাখল বোতামে। ক্রিস নিজেও তর্জনী বাড়িয়ে বোতাম স্পর্শ করতেই সেটি কেমন যেন নড়ে উঠে বোর্ডে যেখানে না লেখা সেখানে স্থির হল। রেগান লাজুক হেসে বলল, আমি বরং নিজে নিজেই করি?
তুমি আমার সঙ্গে করতে চাও না, রেগান?
চাই, খুব চাই। কিন্তু দেখছো না, ক্যাপ্টেন হাউডি কেমন মানা করছে?
লক্ষ্মী মা, ক্যাপ্টেন হাউডিটা কে?
আমি যখন প্রশ্ন করি তখন সে ই তো উত্তর দেয়।
তাই?
হ্যাঁ মা। ক্যাপ্টেন হাউডি খুব ভালো। খুবই ভালো। আমার সঙ্গে কত কথা হয়।
ক্রিস চেষ্টা করল এমন ভাব করতে যাতে রেগান ওর মনের অস্বস্তিটা বুঝতে না পারে। তার এই বাচ্চা মেয়ে কি খানিকটা বদলে গেছে? বাবার খুব ভক্ত ছিল রেগান। তবু ওদের যখন ছাড়াছাড়ি হল, আলাদা হয়ে গেল ক্রিস ও হাওয়ার্ড, তখনো রেগান সবকিছু বেশ সহজভাবেই নিল।
ক্রিসের ব্যাপারটা একটুও ভাল লাগেনি। সব সময় ভেবেছে কোন না কোন দিন চেপে রাখা দুঃখ ভেসে উঠে সব গোলমাল করে দেবে। এই যে আজ ক্যাপ্টেন হাউডি নামের এক কাল্পনিক সঙ্গী হয়েছে রেগানের, আসলে সে কে? বাবার হাওয়ার্ড নাম থেকেই কি হাউডি নাম আসেনি? ক্রিস হালকা গলায় বলল, ক্যাপ্টেন হাউডি বলে ডাকছ কেন, রেগান?
তাহলে কি বলে ডাকব।? ওর নাম তো হাউডি!
কে বলেছে ওর নাম হাউডি।
ও নিজেই বলেছে।
আর কি বলেছে?
অনেক কিছু।
শুনি, কি বলেছে।
বললাম তো অনেক কিছু।
যেমন …?
ঠিক আছে, তুমি নিজের কানেই শোন। আমি ওকে এখনই প্রশ্ন করছি।
বেশ, প্রশ্ন কর।
ওইজা বোর্ডের বোতামটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে রেগান গম্ভীর স্বরে প্রথম প্রশ্নটি করল, ক্যাপ্টেন হাউডি! তোমার কি মনে হয় আমার মা খুব সুন্দরী? রেগানের সমস্ত চোখে-মুখে গভীর একাগ্রতা। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ও। এক সেকেণ্ড … পাঁচ সেকেণ্ড … দশ … বিশ …..
ক্যাপ্টেন হাউডি! ক্যাপ্টেন হাউডি!
ক্রিস খুব অবাক হল। ভেবেছিল, রেগান হয়ত নিজেই ঠেলে ঠেলে বোতামটা হ্যার ঘরে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেরকম কিছু হল না। চোখ-মুখ লাল করে গম্ভীর হয়ে বসে আছে রেগান। এক সময় ফিস ফিস করে বলল, ক্যাপ্টেন হাউড়ি! ভাল হচ্ছে না কিন্তু। মার সামনে তুমি খুব অভদ্র ব্যবহার করছো।
ক্রিস বলল, লক্ষী মা, রেগান, একটা কথা শোন। আমার মনে হয় বেচারা ক্যাপ্টেন হাউড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে।
এত সকালেই?
হ্যাঁ। আমার তো মনে হয় তোমারও ঘুমানো উচিত।
এখনই?
ক্রিস রেগানকে ওর শোবার ঘরে নিয়ে আদর করে বলল, রোববারে আমরা সবাই খুব ঘুরব, কি বল?
কোথায় যাবো?
এখন তো চেরী ফুল ফুটেছে। পার্কে গিয়ে চেরী ফুল দেখতে পারি, তার পর রাতে একটা সিনেমাও দেখা যেতে পারে।
আমি তোমাকে খুব ভালবাসি, মা।
আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি, মা-মণি।
তোমার যদি ইচ্ছা হয় তুমি মিঃ বার্ককেও সঙ্গে নিতে পারো।
ক্রিস রীতিমত যেন চমকে গেল, বার্ক? ওকে কেন? ওকে সঙ্গে নেব কেন?
রেগান চাপা গলায় বলল, ওকে তো তুমি পছন্দ কর। কর না?
হ্যাঁ, তা করি। তুমি কর না?
রেগান কোন জবাব দিল না। ক্রিস বলল, বল তো মা, তুমি এমন গম্ভীর হয়ে আছ কেন?
তুমি ওকে বিয়ে করবে, তাই না মা?
ক্রিস এবার খিলখিল করে হেসে উঠল, কি যে তোমার কথা। ওকে আমি বিয়ে করব কোন দুঃখে?
ওকে তুমি পছন্দ কর, তাই বিয়ে করবে।
আমি তো অনেককেই পছন্দ করি, তাই বলে কি সবাইকে বিয়ে করতে হবে? ও আমার বন্ধু, এর বেশি কিছু না।
আব্বকে তুমি যতোটা ভালবাসতে ওকে ততোটা বাসো না, তাই না?
তোমার আব্বকে আমি খুবই ভালবাসতাম, এখনো বাসি, সব সময়ই বাসবো। বার্ক এখানে প্রায়ই আসে, একা একা থাকে তো, তাই। এর বেশি কিছু না। একটু যেন হাসি ফুটল রেগানের ঠোটে। মনে হল মায়ের সব কথা ও মেনে নিচ্ছে। তার মুখের গম্ভীর ভাব এখন আর নেই।
এসব নিয়ে কখনো চিন্তা করবে না। যাও, ঘুমাও এখন।
ক্রিস মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। বাচ্চারা কোত্থেকে যে অদ্ভুত সব ধারণা পায় কে জানে। অবশ্যি রেগান জানে, ডিভোর্সের মামলাটা ক্রিসই দায়ের করেছে, ওর বাবা করেনি। কিন্তু ও কি জানে এতে ওর বাবা একটুও আপত্তি করেনি? স্ত্রীর অসামান্য খ্যাতি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না হাওয়ার্ড। হয়ত নামী-দামী তারকাদের স্বামী হওয়া খুব কষ্টকর একটা ব্যাপার!
স্টাডিরুমে ফিরে এসে বাতি জ্বালাতেই ক্রিস দেখল, রেগান নেমে এসেছে সিড়ির কাছে।
কি ব্যাপার, রেগান?
কেমন যেন অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে আমার ঘরে!
কি রকম শব্দ?
কেউ যেন দরজায় নক করছে। বড্ড ভয় লাগছে, মা।
ইঁদুর শব্দ করছে। ভয়ের কিছু নেই। যাও ঘুমিয়ে পড়।
ঘুমুবার আগে খানিকক্ষণ গল্পের বই পড়ি?
বেশ তো।
লক্ষ্য করল, রেগান সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ওর পা দুটো যেন চলতে চাইছে না। একটু যেন দিশেহারা ভাব। যেন যেতে চাচ্ছে না।
ঘরে কিন্তু ইঁদুর নেই, ম্যাডাম।
ক্রিস ভীষণ চমকে প্রায় চেঁচিয়েই উঠতে যাচ্ছিল। কার্ল খুব নিঃশব্দে চলাচল করে। কোত্থেকে এসে একেকবার আচমকা কথা বলে দারুণ ভয় পাইয়ে দেয়।