আসছে। তুমি শান্ত হয়ে বস।
বেশ, বসলাম।
আর শোন, একটা খিস্তিও করবে না কিন্তু, প্লীজ।
ঠিক আছে, ঠোঁট ফাঁকই করব না। নীরবে পান করব।
ক্রিস গ্লাসে ধীরে ধীরে ভদকা ঢালছিল। এক ফাঁকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বার্ক, কখনো কি মৃত্যুর কথা ভেবেছো? মানে মরবার পর কি হয় এই
সব?
কি বললে?
তুমি কি কখনো মৃত্যুর কথা ভাবোনা?
তোমার হয়েছে কি, ক্রিস?
না মানে, আজ ভোর রাতে খুব একটা খারাপ স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম আমি যেন মরে যাচ্ছি।
বার্ক সহজ ভঙ্গিতে বলল, মৃত্যু খুব শান্তিময় একটা ব্যাপার। মৃত্যুর স্বপ্ন দেখে ভয় পাওয়া কোন কাজের কথা নয়।
আমি মরতে চাই না। সারাজীবন আমি বেঁচে থাকতে চাই।
তুমি বেঁচে থাকবে ঠিকই। তোমার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।
দূর। তুমি দেখি মদ খেয়ে পাদ্রীদের মত কথা বলতে শুরু করেছে।
বার্ক আর কিছু বলল না। আর চোখে তাকিয়ে রইল। ক্রিস বলল, আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি। পাদ্রীরাও কি মদ খায়?
বাক বলল, আমাকে আরেক গ্লাস ভদকা দাও তো, ক্রিস।
ক্রিস বলল, আচ্ছা, ওরাও কি পাপ করে আমাদের মতো?
আমি জানব কি করে?
তোমার তো জানার কথা। এক সময় পাদ্রী হওয়ার জন্যে তুমি চার্চে ঘোরাফেরা শুরু করেছিলে।
ক্রিস, আমাকে আরেক গ্লাস দাও।
না, আর না। কফি খাও বরং।
উহুঁ, কফি নয়। কফি আমি খাই না।
ক্রিস এবার গ্লাসে জিন ঢালল। তারপর নরম গলায় বলল, জানো, মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছা হয় ওদের আমার এখানে চা খেতে বলি।
কাদের?
পাদ্রীদের।
বার্ক এবার খুব বিচ্ছিরি একটা খিস্তি করল বার্ক। ক্রিস দেখল, বাকের চোখমুখ ধীরে ধীরে লাল হয়ে উঠছে। বোঝা গেল এখনই সে প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়বে। ক্রিস প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল খুব তাড়াতাড়ি। ছবি পরিচালনার যে অফার ও পেয়েছে সে কথা তুলল, বার্ক, আমি পারব কি না কে জানে?
যদি আমার মত একটা গাধা মার্কা লোক ছবি পরিচালনা করতে পারে তবে দুনিয়ার যে কেউ পারবে।
কিন্তু বার্ক, ছবি পরিচালনার তো আমি কিছু জানি না।
জানার কোন দরকারও নেই। তুমি একজন ভাল ক্যামেরাম্যান, একজন ভাল এডিটর, আর কয়েকজন ভাল স্ক্রিপ্ট রাইটার নাও। দেখবে তারাই তোমাকে পার করে নেবে। তোমাকে একটা জিনিস শুধু করতে হবে। অভিনেতাঅভিনেত্রীদের খুব সাবধানে বেছে নিতে হবে।
মাতাল হোক আর দুশ্চরিত্রই হোক, বার্ক ডেনিংস যে সেরা চিত্রপরিচালকদের একজন তা ক্রিস ভাল করেই জানে। মন দিয়ে তাই ক্রিস তার কথাগুলো শুনছে।
টেকনিক্যাল স্টাফদের নানা খুঁটিনাটি বোঝাতে শুরু করল বার্ক। ক্রিস লক্ষ্য করল, বাকের চোখ থেকে সেই রাগী ভাবটা দূর হয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস সময়মত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করা হয়েছে।
ম্যাডাম, আপনাদের কিছু লাগবে।
ঘাড় ফিরিয়ে বার্ক দেখে, দরজার কাছে গম্ভীর মুখে কাল দাঁড়িয়ে আছে।
বার্ক নতুন এক খেলা শুরু করল। কালকে দেখলেই এই খেলা খেলতে ইচ্ছে করে। ও, তোমার নামটা যেন কি? থর্নডাইক নাকি হেনরিখ? কিছুতেই আমার মনে থাকে না।
আমার নাম কার্ল।
ও, কার্ল। ঠিক বলেছ, কার্ল। তা তুমি জার্মান গেস্টাপোর সঙ্গে ছিলে না?
আমি জার্মান নই, সুইস।
হ্যাঁ, তাই তো। তাই তো। তুমি তাহলে গোয়েবলসের সঙ্গে ফুটবল খেলনি?
কার্ল আহত চোখে তাকাল ক্রিসের দিকে। বার্কের মজা করা ফুরোয় না, তুমি নিশ্চয়ই রুডলফ হেসের সঙ্গে প্লেনেও চড়োনি? নাকি চড়েছো?
কার্ল বার্ককে অগ্রাহ্য করে ক্রিসের দিকে তাকাল। ম্যাডাম, আপনার কি কিছু লাগবে?
ক্রিস বলল, না, আমার কিছু লাগবে না। বার্ক, তোমার কিছু লাগবে? কফি?
কফি? আমি খাব কফি? কেন আমি কি …
বার্ক খিস্তিটা সজোরে ঝাড়তে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল। তারপর প্রায় ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। ক্রিস পরিস্থিতি সহজ করার জন্যে কার্লের দিকে তাকিয়ে বলল, রেগান কোথায়, কাল?
খেলার ঘরে। ডেকে আনব?
না, আমিই যাচ্ছি। আর শোন, বাকের ব্যবহারের জন্যে আমি খুব দুঃখিত। তুমি কিছু মনে কর না।
উনি কি বলেন তাতে আমি কখনো কান দেই না, ম্যাডাম।
দাও না বলেই সে আরো বেশি করে।
ক্রিস নিচের তলায় নেমে এল।
রেগান, তোমার পাখি বানানো শেষ হয়েছে?
হ্যাঁ, মা। দেখ, তোমার পছন্দ হয়েছে?
বাহ! ভারী সুন্দর হয়েছে।
উজ্জ্বল চোখে হাসল রেগান। খেলার ঘরটাও নিজের মত করে সাজিয়েছে। চারদিকের দেয়ালে নিজের আঁকা সব ছবি ঝোলানো। মাঝখানে একটা রেকর্ড প্লেয়ার। দুটো খেলার টেবিল। মূর্তি বানাবার জন্যে একটা ছোট্ট টেবিল। রেগান বলল, পাখিটা তাহলে তোমার পছন্দ হয়েছে, মা?
খুব, খুব পছন্দ হয়েছে। তা এ পাখির নিশ্চয়ই একটা নাম আছে?
আছে।
খুব সুন্দর নাম নিশ্চয়ই।
জানি না সুন্দর কি না।
এর নাম রাখা যাক বোকা পাখি। কি–ঠিক আছে নাম?
রেগান খিলখিল করে হাসল। আমার ঘরে সাজিয়ে রাখবো এই বোকা পাখিকে, কেমন?
পাখিটা সাবধানে নামিয়ে রাখতে গিয়ে ক্রিস দেখল, টেবিলে একটা ওইজা বোর্ড সাজানো। এটা এখানে এল কিভাবে? বোর্ডটা ও কিনেছিল কয়েক বছর আগে। সে সময় খুব শখ হয়েছিল প্ল্যানচেটের। অনেকবার বন্ধুদের নিয়ে বসেছে যদি সত্যি সত্যি পরকালের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। না, কোনো কাজ হয়নি। বোর্ডের বোতামে আঙ্গুল দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও বোতাম নড়ে না। বন্ধুদের সঙ্গে প্লানচেট করতে বসলেই শুধু হাসাহাসি আর অশ্লীল কথা হয়। ভূতরা যেসব খবর দেয় সেগুলোও মাত্রাছাড়া অশ্লীল। যারা প্ল্যানচেট করতে বসে তাদেরই কেউ যে আঙ্গুল দিয়ে বোতাম ঠেলে ঠেলে নেয়, তা বলাই বাহুল্য।