অর্থাৎ আমাকে কোন গির্জার সিস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে?
উহুঁ। তোমাকে অভিনয় করতেই হবে না।
মানে?
মানে, ওরা তোমাকে ছবিটা পরিচালনা করতে বলছে।
ঠাট্টা করছো?
মোটেই না। ক্রিস অবাক হয়েই পড়ল চিঠিটা। এমন অবিশ্বাস্য ব্যাপারও ঘটে? সত্যি-সত্যি ছবি পরিচালনার অনুরোধ। ছবিটা হবে আফ্রিকাতে। সন্ধ্যার পর তাঁবুর সামনে বসে থাকা। অন্ধকার নামবে ধীরে ধীরে। দূরের বনভূমি থেকে হিংস্র জন্তুর ডাক ভেসে আসবে। আহ, অদ্ভুত!
মা, আমার নতুন জামাটা খুঁজে পাচ্ছি না। রেগান ওপর থেকে চেঁচিয়ে ডাকল।
ড্রয়ারগুলো খুঁজে দেখো।
দেখেছি, কোথাও নেই।
দাঁড়াও, আমি আসছি।
ক্রিসের সঙ্গে সঙ্গে শ্যারনও উঠে দাঁড়াল, আমাকে উঠতে হয়, ক্রিস। আমার এখন ধ্যান করার সময়।
ক্রিস বাকা চোখে তাকাল শ্যারনের দিকে। ধ্যানের ব্যাপারটা ইদানীং শুরু হয়েছে। এর শুরু সেই লস অ্যাঞ্জেলেসে। প্রথম দিকে শুধু আত্মসম্মোহনের ব্যাপারটাই ছিল। আজকাল আরো অনেক কিছু যোগ হয়েছে। ঘর বন্ধ করে মন্ত্র টস্ত্র পড়া হয়। ধূপকাঠি জ্বালানো হয়। ক্রিসের এসব ভাল লাগে না। আজো লাগল না। শুকনো গলায় বলল, এই সব করে তোমার কি কোন লাভ হয়?
না, তবে মনের শান্তি হয়।
ক্রিস কঠিন স্বরে বলল, মনের শান্তি হলে তো ভালই।
ক্রিস ওপরে উঠে দেখে রেগান তার ঘরের বাইরে পাংশু মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে, রেগান?
আমার ঘরে কি যেন হয়েছে, মা।
রেগান ভীত গলায় বলল, কি জানি কি। কেমন যেন শব্দ হচ্ছে।
কই আমি তো শুনছি না।
এখন হচ্ছে না। আগে হচ্ছিল।
ইঁদুর শব্দ করছে। খুব ইদুরের উপদ্রব হয়েছে।
জামাটা এই ঘরে নেই। পুরো ঘর খুঁজে দেখেছি।
ভাল করে খোঁজ নি। তুমি আজকাল কোন কাজ ভাল মত করতে পার না। রেগান।
নীল জামাটা পাওয়া গেল না। কোথাও নেই। রেগান গম্ভীর হয়ে বলল, এখন বিশ্বাস হল তো?
হুঁ। খুব সম্ভব উইলি ধুতে দিয়েছে।
নতুন জামা ধুতে দেবে কেন?
ঠিক আছে এটা পরো। এটাও চমৎকার।
ওরা খেতে গেল হট শপ-এ। ক্রিস শুধু সালাদ খেল। রেগান নিল সূপ, চারটা রোল, ফ্রাইড চিকেন, একটা চকলেট শেক, আর সবশেষে কফি আইসক্রিমের সঙ্গে অর্ধেক ব্লবেরি পাই। এত জিনিস ও খায় কি করে? এইটুকু তো মোটে শরীর!
চমৎকার ডিনার হয়েছে, মা।
ক্রিস সস্নেহে তাকাল মেয়ের দিকে। তাকিয়েই চমকে উঠল। মেয়েকে অবিকল হাওয়ার্ডের মত লাগছে দেখতে। বাবার এতোটা ছায়া যে মেয়ের মধ্যে আছে তা হঠাৎ হঠাৎ শুধু চোখে পড়ে। সব সময় চোখে পড়ে না।
মেয়ের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ক্রিস সহজ স্বরে বলল, আরো কিছু নেবে?
উহুঁ!
বাড়ি ফিরেই রেগান চলে গেল নিচের তলায় ওর খেলার ঘরে। পাখির মূর্তিটা শেষ করতে হবে।
রান্নাঘরে বিরস মুখে উইলি কফি বানাচ্ছিল। সন্ধ্যার দিকে গিয়েছিল কার্লের সঙ্গে সিনেমায়। উইলীর ইচ্ছা ছিল বিটলসদের ছবি দেখে, কিন্তু কার্লের পাল্লায় পড়ে কি একটা আর্ট ফিল্ম দেখে এসেছে। উইলি মুখ কুঁচকে বলল, কাল একটা গর্দভ বিশেষ।
ক্রিস কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, রেগানের নতুন জামাটা কোথাও দেখেছ? নীল রঙেরটা?
হ্যাঁ, আজ সকালেই রেগানের ড্রয়ারে দেখেছি।
তারপর কোথায় নিয়ে রেখেছো?
কোথায় আবার রাখবো? ড্রয়ারেই আছে।
ভুল করে লণ্ডীতে পাঠাওনি তো?
না তো!
ওটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
উইলি কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না। বিরক্ত মুখভঙ্গি করে কফিতে চুমুক দিল।
গুড ঈভনিং, ম্যাডাম।
ক্রিস দেখল কার্ল লম্বা মুখটাকে আরো লম্বাটে বানিয়ে ঘরে ঢুকছে। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল, ইঁদুর-মারা কলগুলো পাতা হয়েছে, কার্ল?
ম্যাডাম, এ-বাড়িতে কোন ইঁদুর নেই।
আমি জানতে চাইছি কলগুলো পাতা হয়েছে কি না।
জ্বী, হয়েছে।
তোমরা ছবি দেখতে গিয়েছিলে শুনলাম। কেমন ছবি?
চমৎকার।
ইঁদুর-মারা কল কিনতে তো কোন অসুবিধা হয়নি?
জ্বি, না।
ভোর ছটায় দোকান খোলা ছিল?
কোন কোন দোকান চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে।
ও, আচ্ছা।
ক্রিস বাথরুমে অনেকক্ষণ ধরে ভিজল। তারপর গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে শোবার ঘরে গিয়ে ড্রয়ার খুলতেই দেখে, আশ্চর্য! রেগানের হারানো জামাটা পড়ে আছে তার ড্রয়ারের এক কোণে। অনেকটা অজ্ঞাতসারেই ভ্রু কুঁচকে গেল ওর। জামাটার তো এখানে আসার কথা নয়।
ক্রিস পোশাক পরে চিন্তিত মুখে নিচের স্টাডিরুমে নেমে এল। স্ক্রিপ্টটা ওর হাতে। পড়া দরকার ভালমতো। ডায়ালগগুলি কিছুতেই মুখস্ত হচ্ছে না।
ফায়ারপ্লেসের সামনের সোফায় বসে দুচার পাতা উল্টাছে তখনই খবর হল বার্ক ডেনিংস এসেছে। লোকটি নিঃসঙ্গ। প্রায়ই আসে ক্রিসের এখানে।
ঘরে ঢুকেই বার্ক বলল, ক্রিস, আমি কিন্তু কিছুটা মাতাল, প্রচুর পান করে এসেছি।
ক্রিস দেখল, বার্কের হাত দুটো রেনকোটের পকেটে। মাথা খানিকটা নিচু। চাউনি কেমন এলোমেলো। এই চাউনি ক্রিসের চেনা। লাউসান এ ছবির শুটিং-এর সময় দেখেছে। ওরা ছিল জেনেভা হ্রদের পারে ছোট্ট একটা হোটেলে। ক্রিসের ঘুম। আসছিল না। ভোর পাঁচটার দিকে ও নেমে এল লবিতে, যদি চা বা কফি কিছু পাওয়া যায়। তখন দেখল হ্রদের পার ঘেঁষে বার্ক দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে। লবিতে ঢুকেই সে খিস্তি করল, একটা বেশ্যা মেয়েলোকও পাওয়া গেল না। শালার একটা শহর। থু থু।
সেদিন বার্কের চোখে এ রকমই অস্বাভাবিক দৃষ্টি ছিল। তবে আজ সে অনেক শান্ত। কতক্ষণ শান্ত থাকে সেটাই কথা। বার্ক বলল, ক্রিস, আমার ড্রিংকস?