কারাস সন্ধ্যাবেলায় ক্রিসের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ক্রিস তখন নিচতলায় ঘর অন্ধকার করে বসেছিল। কোন কিছুতেই তার মন নেই।
মিসেস ম্যাকনীল, ক্লিনিকের সব কাগজপত্র আমাকে পাঠিয়েছে।
পড়েছেন আপনি?
হ্যাঁ। লাইব্রেরিতেও কিছু পড়লাম।
এখন আপনি কি বলতে চাইছেন?
রেগানের অসুস্থতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া অসম্ভব নয়, মিসেস ম্যাকনীল।
আপনি এখনো এসব বলছেন?
হ্যাঁ। আমার মনে হয় রেগানকে বেশ কিছুদিন কোন ক্লিনিকে রাখা উচিত। আপাতত এক্সরসিজম করা ঠিক হবে না।
অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল ক্রিস।
আপনার কি শরীর খারাপ, মিসেস ম্যাকনীল?
না, আমার শরীর ভালোই আছে। ফাদার, আপনাকে আজ একটা কথা বলি। রেগান একজন মানুষ খুন করেছে। তার নাম বার্ক ডেনিংস। সেই বার্ক ডেনিংস প্রায়ই হাজির হয় রেগানের মধ্যে। আমি যদি ওকে আজ ক্লিনিকে নিয়ে যাই তাহলে কালই সব প্রকাশ হয়ে যাবে। ওরা রেগানকে স্রেফ মেরে ফেলবে। কিংবা বাকি জীবনের জন্যে সেলে বন্ধ করে রাখবে।
কারাস স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ক্রিস উঁচু গলায় বলল, আপনি কি তাই চান, ফাদার? বলুন, আপনি তাই চান?
মিসেস ম্যাকনীল, আপনি শান্ত হন।
বলুন, কিভাবে? কিভাবে আমি শান্ত হব?
ক্রিস এবার হু হু করে কেঁদে ফেলল। তারপর চোখে রুমাল চেপে বাথরুমে চলে গেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কাল এসে বলল, আপনার টেলিফোন, ফাদার।
টেলিফোন এসেছে ম্যাক ফ্রাঙ্কের কাছ থেকে। মনের উত্তেজনা গোপন করে কারাস সহজ সুরে বললেন, ফ্রাঙ্ক, কিছু পেয়েছ?
তা পেয়েছি। টাইপ টোকেন অনুপাত বের করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস দুরকম স্বরের কথা যা টেপে আছে তা একজনের নয়, দুজনের। একই লোকের হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ফ্রাঙ্ক, তুমি কি পুরোপুরি নিশ্চিত নও?
না। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আমাদের অনেক বেশি ডাটা দিতে হবে। তুমি সামান্য কিছু দিয়েছ।
ফ্রাঙ্ক হাসতে লাগলেন।
হাসছ কেন? হাসির কি হল?
ফাদার কারাস, আমার বিশ্বাস তুমি টেপগুলো মিশিয়ে-টিশিয়ে ফেলেছ।
ফ্রাঙ্ক, আমাকে সোজাসুজি বল ওটা কি কোন ভাষা।
হ্যাঁ, ভাষা তো বটেই।
কোন ভাষা?
আমাদের ভাষা যে ভাষায় আমার কথা বলি।
ফ্রাঙ্ক, তুমি কি রসিকতা করছ?
না, রসিকতা নয়। ভাষা ঠিকই আছে, শুধু উল্টো করে বল। তোমার টেপে যদি রিভার্স প্লে পজিশন থাকে তাহলে উল্টোদিক থেকে বাজালেই তুমি বুঝতে পারবে।
বল কি?
খুবই মজার ব্যাপার। এ ব্যাপারে পরে এক সময় তোমার সঙ্গে কথা বলব।
কারাস লক্ষ্য করলেন, কার্ল তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। টেলিফোনের কথাবার্তা সে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেছে তা বলাই বাহুল্য। কারাস তার দিকে তাকাতেই সে বলল, ফাদার, ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করবেন। মেয়েটির জন্যে আপনি যা করছেন তার ফলস্বরূপ ঈশ্বর অবশ্যই আপনার মঙ্গল করবেন।
কারাস দেখলেন কার্লের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
কলি, সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিশ্চয়ই ফাদার, নিশ্চয়ই।
হ্যাঁ, শোন, আমি রাতের দিকে একবার আসব।
ম্যাডামকে ডেকে দেব?
না থাক। তার বিশ্রাম দরকার।
ঘর থেকে বেরিয়েই কারাসের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।
কিণ্ডারম্যান রাস্তার ওপাশে পায়চারি করছে। সে কি এ বাড়ির ওপর লক্ষ্য রাখতে শুরু করেছে?
ফাদার কারাস না?
হ্যাঁ। কেমন আছেন, মিঃ কিণ্ডারম্যান?
ভাল। আমি আপনাকেই খুঁজছিলাম। ভাবছিলাম আপনার বাসায় যাব। যাক, দেখা হয়ে ভালই হল।
কোন কাজ …
না না, কোন কাজ নয়। ওই যে একদিন আপনাকে বলেছিলাম–আমার সঙ্গে সিনেমা দেখতে– এই ব্যাপারে।
কি ছবি?
খুব ভাল ছবি। ক্রেস্ট সিনেমা হলে নতুন চলছে।
কবে দেখতে চান?
আজ যাবেন, ফাদার?
না, আজ আমার খানিক কাজ আছে।
ফাদার, আপনি কি ইদানীং রাত জাগছেন?
কেন বলুন তো?
চোখের নিচে কালি পড়েছে, তাই বললাম। রাত জাগা ঠিক নয়। শরীর একবার নষ্ট হলে সব নষ্ট।
মিঃ কিণ্ডারম্যান, আপনার কেসটার কোন কিনারা হল?
কোন কেসের কথা বলছেন, ফাদার?
বার্ক ডেনিংস।
ও, আচ্ছ। সেইটা। আর জিজ্ঞেস করবেন না। ওটা নিয়ে আমি মোটেও ভাবছি না। আমার মনে হয় সমস্তটাই একটা ভয়াবহ অ্যাকসিডেন্ট। আপনি কি বলেন?
এসব তো আপনাদেরই ভাল জানা উচিত। গুড নাইট, মিঃ কিণ্ডারম্যান।
গুড নাইট, ফাদার। গুড নাইট।
রাস্তার মোড় পর্যন্ত এসে কারাস মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন কিণ্ডারম্যান তখনো দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে হল, যে কোন সময় কিণ্ডারম্যান হয়ত ক্রিসকে বলবে, আমি রেগানের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এখনো কেন যে বলছে না কে জানে। বলবে সে নিশ্চয়ই। শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
রেগান সম্পর্কিত সমস্ত কাগজপত্র ফাদার কারাস টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন। বেরিঞ্জার ক্লিনিকের কাগজপত্র, ডাঃ ক্লীনের রিপোর্ট, সাইকিয়াট্রিস্টের রিপোর্ট, আর তার নিজের নোট। অনেক রাতে টেপ রেকর্ডার নিয়ে বসলেন। খুব ঠাণ্ডা মাথায় তিনি রেগানের বিচিত্র ভাষার মর্ম উদ্ধার করতে চান। টেপ রেকর্ডারের রিভার্স প্লের বোতাম টিপে তিনি কাগজ-কলম নিয়ে বসলেন–
… ভয়। বিপদ। এখনো নয়। (অস্পষ্ট)। মারা যাব। এখন হচ্ছে (অস্পষ্ট)। চারদিকে শূন্যতা। আমার ভয় হয়। সময় চাই। (অস্পষ্ট)। (অস্পষ্ট)। এ সে নয়। এ অন্য (অস্পষ্ট)। সে অসুস্থ। আহ কি মিষ্টি,
শরীরের রক্ত কি মিষ্টি। আমাকে (অস্পষ্ট) দাও।
যে জায়গায় কারাস জিজ্ঞেস করলেন– কে তুমি? তার উত্তরে বলা হল–আমি কেউ নই, আমি কেউ নই। তারপর কারাস জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি তোমার নাম? উত্তর হল, আমার কোন নাম নেই। আমি কেউ না। অনেকেই। শরীরের উষ্ণতায় থাক। শরীর থেকে মহাশূন্যতায় (অস্পষ্ট)। ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও। মেরিন, মেরিন। মেরিন (অস্পষ্ট)।