রাত বারোটার দিকে কারাস সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন। তার মাথায় একটা পরিকল্পনা এসেছে। রেগানের গায়ে যদি হলি ওয়াটার নাম দিয়ে সাধারণ কিছু পানি ছিটিয়ে দেয়া হয় তাহলে কি হবে? যদি সত্যি সত্যি শয়তান হয়ে থাকে তাহলে সে জানবে ওটা কিছুই না, কাজেই হলি ওয়াটারের কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু যদি এটা কোন মানসিক অসুখ হয়, যদি এই শয়তান হয়ে থাকে রেগানের মনের কল্পনা, তাহলে সে সাধারণ পানিকেই হলি ওয়াটার মনে করবে, আর যন্ত্রণায় চিৎকার শুরু করবে। কারাস খুশিমনে আরেকটা সিগারেট ধরালেন। নিখুঁত পরিকল্পনা।
কারাস ভোরবেলায় ক্রিসের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তার পরনে পাদ্রীদের পোশাক। দরজা খুলে দিল উইলি।
মিসেস ম্যাকনীল কোথায়?
ওপরে আছেন।
ক্রিস রেগানের ঘরের সামনে চেয়ারে মাথা নিচু করে বসেছিল। এত ভোরে কারাসকে আসতে দেখে সে খুবই অবাক হল।
গুড মর্নিং, মিসেস ম্যাকনীল।
গুড মর্নিং।
রাতে বোধ হয় আপনার ভাল ঘুম হয়নি?
না ফাদার, একেবারেই ঘুম হয়নি। সারারাত রেগান বড় বিরক্ত করেছে।
আপনার কাছে কোন টেপ রেকর্ডার আছে, মিসেস ম্যাকনীল? আমি ওর কথা টেপ করতে চাই।
কথাটা শুনেই ক্রিসের কেমন ভাবান্তর ঘটল। প্রথমে আপত্তি জানাল, কিন্তু কারাসের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হল। দাঁড়ান, পাঠাচ্ছি, বলেই ক্রিস ছুটে বেরিয়ে গেল। কারাস অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন। ক্রিসের আচরণ খানিকটা অন্যরকম লাগছে। তিনি লক্ষ্য করলেন, রেগানের ঘর থেকে কোন সাড়াশব্দ আসছে না। অস্বাভাবিক নীরবতা। কারাস দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। পানির বোতলটা তার পকেটেই আছে।
ঘরের ভেতর তীব্র কট্ট একটা গন্ধ। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। কারাসের অবশ্য কোন ভাবান্তর হল না। তিনি তাকালেন বিছানার দিকে। সেই ক্রুর হাসি শোনা গেল আবার। চাপা, ঘৃণা মাখানো হাসি।
কেমন আছ, ডেমিয়েন কারাস?
তুমি কেমন আছ?
ভাল। বেশ আনন্দে আছি। তোমাকে দেখে আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। তা পোশাক-টোশাক জড়িয়ে এসেছ দেখছি। ঘরে একটু দুর্গন্ধ আছে। তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো?
না।
তুমি মহা মিথ্যুক।
তাতে কি তোমার খারাপ লাগছে?
কিছুটা লাগছে।
কিন্তু শয়তানরা তো মিথ্যাবাদীদেরই পছন্দ করে।
করে। তবে আমি যে শয়তান সে-খবর তুমি পেলে কোত্থেকে?
তুমি শয়তান নও?
মোটেও না। এত বড় সৌভাগ্য কি আমার হতে পারে?
তাহলে তুমি কে?
আমাকে একটা ক্ষুদে শয়তান বলতে পার। হা-হা-হা। ভাল কথা, ভূত তাড়ানোর জন্যে আজকের দিনটা খুব চমৎকার, তাই না?
কারাস অবাক হয়ে রেগানের ঝকঝকে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তাড়াতাড়ি শুরু করা দরকার, ফাদার। যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো।
কিন্তু তাতে তো তোমাকে চলে যেতে হবে, তা জান নিশ্চয়ই?
হা-হা-হা। ভুল বললে। এতে তোমাকেও পবি আমাদের মধ্যে।
কারাস এবার রীতিমত চমকে উঠলেন। তার মনে হল কেউ যেন তাকে পেছন থেকে বরফ শীতল হাতে স্পর্শ করেছে। রেগান ঘর ফাটিয়ে হেসে উঠল।
তুমিও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে ফাদার, দিতেই হবে। অবিশ্বাসীদের এ ছাড়া পথ নেই। তোমার সঙ্গে কথা বললে বড় আনন্দ হয়, কারাস …
রেগান হঠাৎ থেমে গেল। যেন শুনতে পেল কেউ একজন আসছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কারাসও তাকালেন। একটা টেপরেকর্ডার হাতে কার্ল এসে ঢুকল। রেকর্ডারটি চলছে। মাইক্রোফোন স্ট্যাণ্ডটা টেবিলের ওপর রেখে কার্ল ঘর ছেড়ে চলে গেল।
এসব কি হচ্ছে, কারাস? আমাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা রেকর্ড করে ফেলছ মনে হচ্ছে?
কিছুমাত্র না। অভিনয় করতে আমার চমৎকার লাগে?
নাম কি তোমার?
নাম? নাম-টাম কিছু নেই।
তুমি কি গ্রীক ভাষা জান?
চমৎকার জানি।
উৎসাহিত হয়ে কারাস ক্লাসিক গ্রীক ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন,
পম এগনোকাস হতি প্রেসবিটের এই নিই?
আমার কথা বলার মুড নেই।
তার মানে তুমি গ্রীক জান না?
বললাম তো, আমার মুড নেই।
এই সময় ড্রেসারের একটা ভারি ডুয়ার হঠাৎ শব্দ করে খানিকটা বেরিয়ে এল। কারাস চমকে উঠে বললেন, ড্রয়ারটা তুমি বের করলে?
নিশ্চয়ই। ক্ষমতার সামান্য একটু নমুনা দেখালাম।
আবার করতে পার?
পারি, কিন্তু করব না। তোমাকে সব সময় খানিকটা সন্দেহের মধ্যে রাখা দরকার। হা-হা-হা।
আবার কে যেন হিম শীতল হাতে কারাসের ঘাড় স্পর্শ করল। চমকে উঠলেন তিনি। এক সীমাহীন আতংক যেন তাকে ধীরে ধীরে গ্রা করে ফেলছে।
ভয় পেলে নাকি, কারাস?
কারাস চট করে নিজেকে সামলে নিলেন। সহজভাবে কথা বলতে চেষ্টা করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বলতে পার এই মুহূর্তে আমি কি চিন্তা করছি?
তোমার চিন্তায় আমার কোন আগ্রহ নেই।
তার মানে তুমি আমার মনের কথা বলতে পারি না!
তা ভাবতে তোমার যদি ভাল লাগে তাহলে তাই।
তুমি যে-ই হও, তুমি অদ্ভুত।
তা ঠিক। প্রিয় কারাস, খুব সত্যি কথাই বলেছ?
তোমার নাম কি?
নামে কি আসে যায়, বন্ধু?
কারাস। পকেটে হাত দিয়ে পানির বোতলটা এখন বের করলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রেগান বলল, ওটা কি?
চিনতে পারছ না? হলি ওয়াটার।
মুহূর্তের মধ্যে যেন একটা প্রলয় ঘটে গেল। বিকট স্বরে চিৎকার করতে লাগল। রেগান : বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও পুড়িয়ে ফেলছে, পুড়িয়ে ফেলছে। উঃ পুড়িয়ে ফেলছে। চেঁচাতে চেঁচাতে সে নিথর হয়ে পড়ল। বিচিত্র আঞ্চলিক ভাষায় বিড়বিড় করতে লাগল।