তার দরকার নেই, আমি নিজে থেকেই বলছি। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড়-হ্রদের নাম টিটিকাকা। সেটা পেরুতে। ঠিক আছে?
না, আমি এমন একটা কিছু জিজ্ঞেস করব যার উত্তর শুধু শয়তানের পক্ষেই জানা সম্ভব। আচ্ছা বল তো রেগান এখন কোথায়?
এখানেই আছে সে।
তাকে দেখতে চাই আমি।
কেন দেখতে চাও?
তাহলে আমি বুঝতে পারব তুমি সত্যি কথা বলছ।
ওহে, ডেমিয়েন কারাস, তুমি ওর সঙ্গে কিছু করতে টরতে চাও নাকি? তাহলে প্যান্ট খুলে চলে আস না। দড়িগুলো খুলে দাও, তারপর দেখ মজাসে কেমন ফুর্তি হয়। রেগানের সঙ্গে কথা বলে কি করবে? ও কথাবার্তা তেমন পারে না।
তার মানে তুমি জান না বেগান এখন কোথায়। অর্থাৎ শয়তান তুমি নও।
জানি হে, জানি।
তাহলে দেখাচ্ছ না কেন?
আচ্ছা, আরেকটা কাজ করলে হয় না? আমি বরং তোমার মনের কথা বলে দেই? সেটাও একটা প্রমাণ হবে। এক থেকে দশ পর্যন্ত একটা সংখ্যা ভাব তো মনে মনে, আমি বলে দিচ্ছি।
না, ওতে কিছু প্রমাণ হবে না।
তা অবশ্যি হবে না। শোন, বাপু কারাস, তোমাকে আমি তেমন কোন প্রমাণ দেব না। বিশ্বাস আর অবিশ্বাস–এই দুয়ের মধ্যে তোমাকে আটকে রাখব আমরা।
আমরা বলছ কেন? আর কে আছে তোমার সঙ্গে?
এই কুত্তী মাগীটার মধ্যে এখন আমরা অনেকেই আছি। হা হা হা। পরে তোমাকে বলব কে কে আছি, তার আগে আমার একটা হাত শুধু খুলে দাও। শরীরে বড় চুলকানি হয়েছে। চুলকাতে হবে।
জায়গাটা দেখিয়ে দাও, আমিই চুলকে দিচ্ছি।
হুঁ, বলেছি না, তুমি শেয়ালের মত ধূর্ত!
বেশ রেগানকে একবার দেখাও, তারপর একটা বাঁধন না হয় খুলে দেব।
মুহূর্তের মধ্যে কিছু একটা হল। কারাস দেখলেন, গাঢ় দুঃখ মাখা এক জোড়া সজল চোখ। ব্যখাকাতর এক বালিকার ম্লান মুখ। কিন্তু তা মুছে গেল সঙ্গে সঙ্গে, তারপরই শোনা গেল ক্রুদ্ধ গর্জন, এখন নিশ্চয়ই বাঁধনটা খুলবে?
কারাসের আচ্ছন্নভাব তখনো কাটেনি। রেগানকে দেখা গিয়েছিল কি? ব্যথায় ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন ওই মেয়েটাই তবে রেগান।
ফাদার, ফাদার, দয়া করুন। এই পঙ্গুকে দয়া করুন।
কারাস চমকে তাকিয়ে দেখেন, রেগানের ত্রুর চোখে বিদ্রুপ ঝিলিক দিচ্ছে। কথাটা কোথায় শুনেছেন যেন? হ্যাঁ, নিউইয়র্ক সাবওয়েতে। লোকটাকে একটা ডলার দিয়েছিলেন তিনি।
ওহে কারাস, তোমার মা কিন্তু এখানেই আছেন। হা হা। কোন খবরাখবর থাকলে দিতে পার।
কাবাসের সহজ চিন্তাশক্তিও লোপ পেল। থেমে থেমে কোনরকমে বললেন, আমার মা? উনি যদি এখানে থাকেন তাহলে তুমি তাঁর ডাক নাম নিশ্চয়ই জানবে। বল, তাঁর নাম কি? বল!
কাছে আস, বলছি।
কারাস খানিকটা এগিয়ে গেলেন।
আরো কাছে। ফিসফিস করে বলব আমি।
আরো খানিকটা এগুতেই রেগান মুখ ভর্তি করে তাঁর ওপর বমি করল। কারাস নড়লেন না। শান্ত স্বরে বললেন, বল, আমার মায়ের নাম বল।
রেগান খিলখিল করে হাসতে লাগল। কারাস ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সহজভাবেই বাথরুম কোনদিকে জানতে চাইলেন। ক্রিস মুখ কাল করে বলল, ফাদার, আমি খুব লজ্জিত।
লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার মেয়েকে কি কোন ঘুমের ওষুধ দেয়া হচ্ছে?
হ্যাঁ, লিব্রিয়াম।
কতটুক করে দিচ্ছেন?
দৈনিক চারশো মিলিগ্রাম।
বলেন কি? মিসেস ম্যাকলীন, আমার মনে হয় ওকে কোন হাসপাতালে রাখা খুব খুব দরকার।
তা সম্ভব নয় ফাদার। রেগান একটা মারাত্মক অপরাধ করেছে। বাইরে রাখলেই তা জানাজানি হয়ে যাবে। আমি কিছুতেই সেটা হতে দিতে পারি না।
মিসেস ম্যাকনীল, আপনি নিচে গিয়ে বসুন। আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি।
ফাদার কারাস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রেগানের অসুখের সমস্ত ইতিহাস শুনলেন। দুএকটি ঘটনা দ্বিতীয়বার শুনতে চাইলেন। ক্রিস বলল, ওর কি হয়েছে, ফাদার?
একটু কঠিন ভাষায় বলতে হয়–মনের ওপর চেপে থাকা গ্লানি থেকে দ্বৈতসত্তার উদ্ভব ঘটেছে ওর মধ্যে। সেই সঙ্গে মানসিক অসুস্থতাজনিত হিস্টিরিয়া।
এসব ফালতু কথা অনেক শুনেছি, ফাদার!
আমাদের মানসিক হাসপাতালে যেসব রোগী আছে, তাদের তো আপনি দেখেননি, আমি দেখেছি। তারা রেগানের চেয়েও অনেক বিচিত্র সব কাণ্ডকারখানা করতে পারে।
বেশ, তাহলে ফাদার আপনি বলুন, রেগানের ঘরে যেসব শব্দ হয় সেগুলো কেমন করে হয়?
কই, আমি তো কোন শব্দ শুনিনি?
আপনি না শুনলেও বেরিঞ্জার ক্লিনিকের ডাক্তাররা সবাই শুনেছেন।
হয়ত শুনেছেন, কিন্তু তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। একে বলে। সাইকোকাইনেসিস।
কি?
বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের মধ্যে যদি ঘোরতর মানসিক অস্থিরতা থাকে তাহলে এসব হতে দেখা যায়। কোন অজানা শক্তি এর মূলে আছে, তবে তা ভৌতিক কিছু নয়।
রেগানের অবস্থা নিজের চোখে দেখেও এইসব বলছেন?
মিসেস ম্যাকনীল, অনেক সময় খুব জটিল কোন জিনিসের ব্যাখ্যা খুব সহজ হয়ে থাকে।
ফাদার কারাস, আমি এসব কিছু বুঝি না, আমি কোন থিওরি শুনতে চাই না। দ্বৈতসত্তা–দ্বৈতসত্তা? কি সেটা? বলুন আপনি? বোঝান আমাকে? আমি কি এতোই অজ্ঞ মূখ যে আপনাদের এইসব বুঝব না?
মিসেস ম্যাকনীল, পৃথিবীর কেউই এসব বোঝে না। আমরা শুধু জানি এটা হয়। জিনিসটা এইভাবে দেখুন, আমাদের মাথায় প্রায় সতেরো বিলিয়ন কোষ আছে। তারা প্রতি সেকেণ্ডে একশো মিলিয়ন অনুভূতির আদান প্রদান করে। মাথার প্রতিটা কোষের একটা স্বাধীন সত্তা আছে, যার জন্যেই এটা সম্ভব। এখন মানুষের মাথাটাকে একটা সমুদ্রগামী জাহাজ মনে করুন। কল্পনা করুন, মাথার প্রতিটা কোষ একজন নাবিক। তাদের একজন ক্যাপ্টেন আছে। সে ঠিক জানে না অন্য নাবিকরা কখন কি করছে, কিন্তু জানে যে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এখন যদি জাহাজে কোন বিদ্রোহ ঘটে আর অন্য এক নাবিক ক্যাপ্টেনের স্থান নেয় তখন সেই নাবিকটা হবে দ্বিতীয় সত্তা।