কেন? মন্দ হবে কেন?
একসরসিজমের পুরো ব্যাপারটাই দারুণ সাজেসটিভ। মনের ওপর খুব প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া গির্জার অনুমতি প্রয়োজন। সে অনুমতি সহজে পাওয়া যাবে না। প্রথমে ওরা নিশ্চিত হতে চাইবে যে সত্যি আপনার মেয়েকে পিশাচে পেয়েছে। সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
আপনি কি একসরসিজম করতে পারেন?
পারি। সব ফাদারই পারেন। তবে গির্জার অনুমতি লাগবে। তাছাড়া হবে না।
আপনি কি একবার দেখবেন আমার মেয়েকে–প্লীজ?
নিশ্চয়ই দেখব। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট হিসেবে দেখব।
ফাদার কারাস, আমি অনেক সাইকিয়াট্রিস্ট আর ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন আমার একজন ফাদারের সাহায্য চাই। ফাদার, প্লীজ!
ফাদার কারাসকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ক্রিস হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত স্বরে কারাস বললেন, চলুন, আপনার মেয়েকে দেখে আসি।
ডেমিয়েন কারাস নিঃশব্দে হাঁটতে লাগলেন। বাড়ির সামনে এসে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। একটা কিছু যেন অনুভব করলেন। সারা শরীর তাঁর ঝিমঝিম করে উঠল। কিছু একটা … কিছু একটা আছে!
সিঁড়ি দিয়ে রেগানের ঘরের দিকে উঠতে উঠতে যেন অপার্থিব কোন কণ্ঠ শুনলেন কারাস। ভারী গম্ভীর গলা। ঘৃণা আর ক্রোধ মেশানো। ভ্রু কুঁচকে গেল তাঁর। কিন্তু তারপরই হাসির শব্দ। হা হা শব্দে হাসি। শ্লেষ্ম জড়ানো বৃদ্ধের ক্রুর হাসি।
কার্ল দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল। একদৃষ্টে সে তাকিয়ে রইল ফাদার কারাসের দিকে। ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল, আপনি কি একজন ফাদার?
হ্যাঁ।
যান, ভেতরে যান। দেখুন।
কারাস ক্রিসকে জিজ্ঞেস করলেন, ভদ্রলোকটি কে? আপনার মেয়ের সঙ্গে যে কথা বলছে?
ও ঘরে ভদ্রলোক-টদ্রলোক কেউ নেই। রেগান একাই আছে। আপনি যান, আমি যাচ্ছি না।
ফাদার কারাস দরজার হাতল ধরতেই ভেতরের সমস্ত শব্দ থেমে গেল। সুমসাম নীরবতা। ঘরের ভেতর ঢুকে অনেকক্ষণ ফাদার কারাস কোন কথা বলতে পারলেন না।
কংকালসার যে আকৃতিটা বিছানায় দড়ি দিয়ে বাঁধা সেই কি বার বছরের রেগান? এ তো এক বৃদ্ধার কুৎসিত অবয়ব। তবে চোখ দুটো চকচক করছে। তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ তীব্র দৃষ্টিতে। সেই দৃষ্টিতে বুদ্ধির দীপ্তি খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায়, কিন্তু কি ভয়ংকর চাহনি!
ফাদার কারাস বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে নরম সুরে বললেন, কেমন আছ, রেগান?
কারাস চেয়ার টেনে রেগানের সামনে বসলেন। আগের মতই রেগান তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে তাঁকে দেখছে।
আমি তোমার মায়ের একজন বন্ধু। তোমার মা বললেন, তুমি একটু অসুস্থ। তাই তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।
রেগানের মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখা গেল। যেন বহু কষ্টে সে নিজেকে হা হা অট্টহাসি থেকে বিরত রাখছে।
রেগান বলল, শেষ পর্যন্ত তোমাকে ধরে এনেছে?
হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্যে এসেছি।
ভাল। আমার কিছু সাহায্য দরকার এই মুহূর্তে। দড়ির বাঁধনগুলো খুলে দাও তো দেখি।
ওগুলো খুব কষ্ট দিচ্ছে বুঝি?
কষ্ট-টষ্ট না, বিরক্তিকর ব্যাপার। মহা বিরক্তিকর।
বাঁধন খুললে তুমি নিজেকে ব্যথা দিতে পার, রেগান।
আমি রেগান নই।
ও, তুমি রেগান নও? আমি বুঝতে পারিনি। আমাদের পরিচয় হয়নি। আমার নাম ডেমিয়েন কারাস। তোমার নাম?
আমি পিশাচ। শয়তানও বলতে পার।
ভাল, খুব ভাল। একজন পিশাচের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। তাহলে কিছু কথাবার্তা বলা যাক।
কথা বলতে চাও বুঝি?
হ্যাঁ।
ভাল। কথা বলব। কিন্তু এরকম বাঁধা অবস্থায় আমি কথা বলতে পারি না। কথা বলার সময় হাত-পা নাড়ানো আমার পছন্দ। পুরানো অভ্যেস। এখন দয়া করে বাঁধনগুলো খুলবে?
ডেমিয়েন কারাস কথার বাঁধুনি দেখে অবাক হলেন। চেয়ার নিয়ে রেগানের কাছে খানিকটা এগিয়ে গেলেন। তাঁর কৌতূহল ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
তুমি তাহলে শয়তান?
হ্যাঁ, এ-বিষয়ে তুমি একশো ভাগ নিশ্চিত থাকতে পার।
শয়তান হলে তা তুমি নিজেই দড়ির বাঁধন খুলে ফেলতে পার। শয়তানের ক্ষমতা তো কম নয়। ইচ্ছা করলেই দড়িগুলো তুমি শূন্যে মিলিয়ে দিতে পার।
তা পারি। তবে ক্ষমতার নমুনা দেখাতে পছন্দ করি না। ব্যাপারটা তাহলে স্কুল হয়ে পড়ে। আমি সবকিছুতেই সূক্ষ্মতা পছন্দ করি। কারণ আমি একজন শিল্পী, বুঝলে?
হ্যাঁ, তা বুঝতে পারছি।
তাছাড়া আমি যদি তোমাকে বাঁধন খুলতে না দেই তাহলে একটা সকাজ করার সুযোগ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করা হয়।
শয়তানের কাজই হচ্ছে মানুষকে ভাল কাজ করা থেকে বিরত রাখা। কাজেই তোমার চেষ্টা করা উচিত যাতে আমি কোনভাবে ভাল কিছু করতে না পারি। তাই না?
হা হা হা, ডেমিয়েন কারাস, তুমি দেখছি শেয়ালের মত ধূর্ত। তা শোন, যদি বাঁধনগুলো তুমি খুলে দাও, তাহলে তোমাকে আমি তোমার ভবিষ্যতের সবকিছু বলে দেব।
ভবিষ্যৎ বলে দেবে? প্রমাণ কি যে তুমি ভবিষ্যৎ বলতে পার?
আমি শয়তান। আমি পারি।
একটা প্রমাণ দাও।
প্রমাণ দিয়েও লাভ হবে না। তোমার মধ্যে বিশ্বাস খুব কম। তুমি তো ঈশ্বরেও বিশ্বাস কর না।
কারাস চমকে উঠলেন। রেগানের ভুরু নাচছে। চোখ দুটো ঝলসে উঠছে বিদ্রুপে। মনের ভাব লুকিয়ে কারাস সহজভাবে কথা বলে যেতে চেষ্টা করলেন,
একটা সহজ প্রমাণই না হয় দেখাও তুমি আমাকে। তুমি যদি শয়তান হও তাহলে তো তুমি সব কিছুই জান।
উহুঁ, সবকিছু না, প্রায় সবকিছু। দেখলে তো, আমি আমার অক্ষমতাও স্বীকার করি।
আমি ভাবছিলাম তোমার জ্ঞানের গভীরতাটা পরখ করব।