গুড নাইট।
বেজায় ঠাণ্ডা পড়েছে, কি বলেন?
হ্যাঁ।
দ্রুতপায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল কিণ্ডারম্যান।
রাত দশটার মত বাজে। শ্যারন ঘুমুতে গেছে। রেগানের ঘরের বাইরে এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল কার্ল। সে-ও একসময় নিজের ঘরে চলে গেল। ক্রিস পর পর দুপেয়ালা কফি খেয়েছে। না, ঘুম আসছে না কিছুতেই। রেগানের ঘরও সাড়াশব্দহীন। তার মানে এখনো জেগে ওঠেনি ও। ডাক্তারের কথাই ঠিক, রেগান আজ রাতে আর জাগবে না।
রাত এগারোটার দিকে ক্রিস মেয়েকে দেখতে গেল। ঘরের ভেতর নীল আলো। ভয়ানক নীরবতা। বাতাস কেমন যেন ভারি হয়ে আছে। ক্রিস মৃদু স্বরে ডাকল, রেগান, মা-মণি।
কোন সাড়া নেই।
ক্রিস খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসছে ঠিক তখনই ভারি গলায় কে যেন ডাকল, চলে যাচ্ছে কেন? এসো, ফিরে এসো, ময়না সোনা চাঁদের কণী।
কয়েক মুহূর্ত ক্রিস স্পষ্টভাবে কিছু চিন্তাও করতে পারল না। বার্ক ডেনিংসের গলা ভেসে আসছে রেগানের ঘর থেকে। কিন্তু তা কি করে সম্ভব।
আমি তোমার মেয়ের সঙ্গেই আপাতত আছি। যাব কোথায় বল? কি হল, ভেতরে আসছ না কেন?
ক্রিস বিকৃত স্বরে ডাকল, কাল, কার্ল!
আহ, আবার কার্লকে ডাকা কেন? ভয় লাগছে? ভয়ের কিছু নেই।
ক্রিস খোলা ঘরের দিকে তাকাল। রেগানের কাত হয়ে থাকা মাথাটা দেখা যাচ্ছে। ও কি জেগে আছে? খুট খুট করে শব্দ হল। কিসের শব্দ? ক্রিস তাকাল বন্ধ জানালার দিকে। তখনই চোখে পড়ল ওটা, কিন্তু কি ওটা?
চিৎকার করে উঠল ক্রিস, আর ওই চিৎকারের মধ্যেই জ্ঞান হারাল।
অতল গহ্বর
৩.১
ক্রিস একজনের জন্যে অপেক্ষা করছিল।
অফিস ছুটির সময়। সবাই ঘরে ফিরছে, রাস্তাঘাটে প্রচণ্ড ভিড়। ক্রিস এমন ভাবভঙ্গি করছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে সে কারো জন্যে অপেক্ষা করছে।
একজনকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল ওর দিকে। কিন্তু এ সে নয়। যে আসছে সে কিছুতেই ফাদার ডেমিয়েন কারাস হতে পারে না। লোকটার পরনে আধময়লা খাকি প্যান্ট। গায়ে নীল রঙের সোয়েটার। সে ক্রিসের দিকে বারবার তাকাচ্ছে।
যে জায়গাটায় ক্রিস দাঁড়িয়ে আছে তা নদীর পারে, অপেক্ষাকৃত নির্জন। কিন্তু লোকটা এমনভাবে দ্রুত পা ফেলে আসছে যে ক্রিসের আশংকা হল, তার মতলব ভাল না-ও হতে পারে।
আপনি মিসেস ম্যাকনীল? আমি ফাদার ডেমিয়েন কারাস।
নিজেকে সামলাতে ক্রিসের একটু সময় লাগল। তাড়াতাড়ি সানগ্লাস খুলে ফেলল। প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল ভেবে এখন ওর দারুণ লজ্জা লাগছে।
আমাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ভয় পেয়েছিলেন নাকি?
আমি ঠিক বুঝতে পারিনি আপনি ফাদার কারস।
তাই? আমি অবশ্য ইচ্ছা করেই পাত্রীদের পোশাকটা পরে আসিনি। আপনি বলেছিলেন গোপনে কথা বলতে চান, সেজন্যেই …
ফাদার কারাস, আপনাকে আগে একদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দেখেছি। তবু আজ চিনতে পারিনি। আপনার কাছে সিগারেট আছে?
আছে, ফিল্টার ছাড়া, চলবে?
আজ আমি যে কোন সিগারেট খেতে পারি।
মিসেস ম্যাকনীল, হঠাৎ কি দরকার পড়ল আমার–যা আবার খুব গোপনীয়? কারাস সিগারেট বের করলেন।
শুনলাম আপনি একজন নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট।
ঠিকই শুনেছেন। নামকরা কিনা জানি না তবে সাইকিয়াট্রিস্ট।
আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
হারভার্ড আর জন হপকিন্দে, তারপর বেলেভ্যুতে।
আশ্চর্য তো! আমি কিন্তু আপনাকে একজন সাধারণ পাদ্রীই মনে করেছিলাম।
আমি আসলে তাই, মিসেস ম্যাকনীল।
আপনি ফাদার ডায়ারকে চেনেন?
হ্যাঁ, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তিনি আমার বাড়িতে একদিন এসেছিলেন।
ডেমিয়েন কারাস জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন। ক্রিস থেমে থেমে বলল, তিনি কি আমার বাড়ির পাটি সম্পর্কে কিছু বলেছেন আপনাকে?
না তো।
আমার মেয়ের সম্বন্ধে কিছু?
না। আমি জানিই না আপনার কোন মেয়ে আছে।
ফাদাররা তাহলে সত্যি সত্যি মুখ বন্ধ করে রাখতে পারেন!
সবাই পারেন না, কেউ কেউ পারেন।
ফাদার কারাস, কেউ যদি আপনার কাছে গোপন কিছু বলে আপনি কি তা গোপন রাখেন?
তা রাখি।
আচ্ছা ফাদার, ধরুন, একজন খুব খারাপ লোক, একজন খুনী–সে যদি আপনার কাছে সাহায্যের জন্যে আসে, তাহলে কি তাকে সাহায্য করবেন?
কি ধরনের সাহায্য?
ক্রিস আচমকা বলল, কারো ওপর যদি শয়তান বা পিশাচের ভর হয় তাহলে কি করে তাড়ানো যায় জানেন?
আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
ধরুন, কারো ওপর শয়তানের আছর হয়েছে।
মিসেস ম্যাকনীল, এসব আজকাল হয় না।
হয় না? কখন থেকে হয় না?
যখন থেকে আমরা জানতে পারলাম যে মানসিক অসুখ বলে একটা জিনিস আছে।
ক্রিসের মুখে চোখে হতাশার ভাব জাগতে দেখে ফাদার কারাস যেন অবাক হলেন। শান্ত স্বরে বললেন, আজকাল অনেক ফাদার শয়তানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। শয়তানে বা পিশাচে পাওয়া বিশ্বাস করা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
আপনি কি সত্যি সত্যি একজন পাদ্রী? বাইবেলে তো মানুষের ওপর শয়তানের ভর হওয়ার অনেক অনেক কাহিনী আছে। প্রভু যিশু খ্রীস্ট সেসব শয়তান তাড়িয়েছেন।
মিসেস ম্যাকনীল, আসলে ওদের স্কিজোফ্রেনিয়া ছিল। শয়তান বা পিশাচের কোন ব্যাপার নয়।
ক্রিস অচমকা বলে ফেলল, ফাদার কারাস আমার একমাত্র মেয়ের ওপর পিশাচের ভর হয়েছে। আপনি কি কোনভাবে এই পিশাচকে তাড়াবার ব্যবস্থা করতে পারেন?
আপনি একসরসিজমের কথা বলছেন?
হ্যাঁ।
কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না একসরসিজমে ভালর চেয়ে মন্দ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।