ওকে চলে যেতে … না, না, আসতে বল শ্যারন, আসতে বল।
মিসেস ম্যাকনীল।
আসুন, ভেতরে আসুন।
কেমন আছেন আপনি?
ভাল। ধন্যবাদ।
আর আপনার মেয়ে? সে কেমন আছে?
আগের মতোই।
আ-হা, বড় দুঃখের ব্যাপার। বাচ্চা-কাচ্চার শরীর খারাপ থাকলে কেমন লাগে আমি জানি। আমার মেয়ে রুথের যখন অসুখ হল, ওহ,…
দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।
ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ। অবশ্যি আপনি ব্যস্ত থাকলে আরেকদিন অসিতে পারি। কোন তাড়া নেই আমার।
না, ব্যস্ত না। কি যেন বলছিলেন?
রুথের কথা বলছিলাম। আমার বড় মেয়ে। থাক সে-সব। আরেকদিন বলবো। আপনি ব্যস্ত। আমার নিজর জীবনের কথাই বলবো। অদ্ভুত। আপনি ইচ্ছা করলে একটা ছবি বানাতে পারেন। আমার মায়ের কথাই ধরুন। তার জন্যে আমরা সপ্তাহে ছদিন গোসল করতে পারতাম না। গোসল হত শুধু শুক্রবারে। বাকি ছদিন গোসল বন্ধ। বলতে পারেন কেন?
ভারি আশ্চর্য তো! কেন?
হ্যাঁ, আশ্চর্যের ব্যাপারই। ওই ছদিন আমার মা বাথটাবে একটা কাতলা মাছ ছেড়ে রাখতেন। জ্যান্ত মাছ। তার ধারণা ছিল, মাছটা বাথটাবের সব দূষিত জিনিস খেয়ে ওটাকে জীবাণুমুক্ত রাখবে। এখন আপনি বুঝুন অবস্থাটা।
ক্রিস কোন কথা বলল না। কিণ্ডারম্যানের দিকে তাকিয়ে রইল। কেমন বিমূঢ় ওর চাহনি। কিণ্ডারম্যান কিন্তু হঠাৎ উৎসাহী হয়ে নড়েচড়ে বসল। মিসেস ম্যাকনীল, আপনার হাতের এই বইটা প্রেত পূজার ওপর লেখা, তাই না?
হ্যাঁ।
কোনো ছবির গল্পের জন্যে পড়ছেন?
না, এমনি।
বইটা ভালো?
মিঃ কিণ্ডারম্যান, আপনি ঠিক কি জন্যে এসেছেন বলুন তো?
এই দেখুন, কিচ্ছু মনে থাকে না। আসল কথাই ভুলে গেছি। তবে তেমন কিছু না, এই যা। না এলেও হতো, কিন্তু …?
কিন্তু কি?
কিণ্ডারম্যান প্রসঙ্গ পাল্টে হঠাৎ শ্যারনের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার সঙ্গে বোধহয় আমার পরিচয় হয়নি।
আমি শ্যারন স্পেনসার। ক্রিসের সেক্রেটারি।
খুব আনন্দ হল আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে মিস স্পেনসার। আমি আবার লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করি। বকবক করা আমার স্বভাব।
কিছু জিজ্ঞেস করতে চান আমাকে?
মিঃ ডেনিংসকে এ বাড়িতে বসিয়ে রেখে আপনিই তো ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ।
তাকে একা রেখে গিয়েছিলেন?
না, একা নয়, রেগান ছিল।
তাঁকে রেখে কখন আপনি ঘর ছেড়ে যান?
সাড়ে ছটা হবে। তখন টিভির ছনম্বর চ্যানেলে খবর হচ্ছিল।
ক্রিস হঠাৎ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, আপনি এত সব জিজ্ঞেস করছেন কেন?
একটা হিসাব মিলছে না, মিসেস ম্যাকনীল। তাই খোঁজ-খবর নিতে হচ্ছে। যেমন ধরুন, মিঃ ডেনিংস আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখা না করেই দশ মিনিটের মধ্যে চলে গেলেন অথচ ঘরে তখন গুরুতর অসুস্থ একটা মেয়ে। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক নয়?
ক্রিস শুকনো গলায় বললেন, বার্ককে তো আপনি জানেন না, ও খুব খামখেয়ালী।
মিসেস ম্যাকনীল, আরো একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে।
বলুন।
মিঃ ডেনিংস এ-শহরে তাঁর গাড়ি নিয়ে আসেননি। আমি খোঁজ নিয়েছি, তিনি কোথাও যেতে হলে সব সময় টেলিফোন করে ট্যাক্সি আনেন। ঠিক না?
হ্যাঁ, ঠিক।
কাজেই তাঁর উচিত ছিল এখান থেকে ট্যাক্সির জন্যে ফোন করা। কিন্তু প্রতিটা ট্যাক্সি কোম্পানীতে খোঁজ নিয়েছি এ-রকম কোন রেকর্ড তাদের কাছে নেই।
ক্রিসের মুখ ছাইয়ের মত সাদা হয়ে গেল। কিণ্ডারম্যান ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ব্যাপারটা ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে, মিসেস ম্যাকনীল।
জটিল?
প্যাথলজিস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী মিঃ ডেনিংসের মৃত্যু দুর্ঘটনার জন্যে হলে হতেও পারে। কিন্তু …
আপনি কি বলতে চান ওকে খুন করা হয়েছে?
কিণ্ডারম্যান আমতা আমতা করে বলল, আমি বুঝতে পারি, সমস্ত ব্যাপারটাই আপনার জন্যে অত্যন্ত দুঃখজনক।
হোক দুঃখজনক, আপনি বলে যান।
মিঃ ডেনিংসের মৃতদেহ পরীক্ষা করলে প্রথমে মনে হয় কেউ যেন ওকে … তার আগে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
শ্যারনের দিকে ফিরল কিণ্ডারম্যান। মিস স্পেনসার, আপনি যখন ওষুধ আনতে যান তখন মিঃ ডেনিংস কি রেগানের ঘরে ছিলেন?
না, বসার ঘরে।
এমন কি হতে পারে না যে তিনি একসময় উঠে গিয়েছিলেন রেগানের ঘরে?
এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছেন? ক্রিস শুকনো গলায় বলল।
আপনার মেয়ের হয়ত মনে আছে, তাকে জিজ্ঞেস করতে পারলে …
আমি তো আপনাকে আগেও বলেছি সে অত্যন্ত অসুস্থ, তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা ঠিক। আগেই বলেছেন।
আপনি এত সব জিজ্ঞেস করছেন কেন, বলুন তো?
মিসেস ম্যাকনীল, একটা নতুন সম্ভাবনার দিকে আমার চোখ পড়েছে। এমন কি হতে পারে না যে মিঃ ডেনিংস সেদিন খুব বেশি মদ খেয়ে ফেলেছিলেন আর এই অবস্থায় আপনার মেয়ের ঘরে হাজির হলেন, তারপর সেখান থেকে জানালা দিয়ে নিচে পড়ে মারা গেলেন– হতে পারে না এ রকম?
না। প্রথমত, জানালাটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বার্ক কখনো বেসামাল মাতাল হত না, যদিও প্রচুর মদ খেতো।
তাই কি?
হ্যাঁ। ছবি পরিচালনার সময় সে থাকত পাঁড় মাতাল, কিন্তু তাতে ছবি পরিচালনার কোন অসুবিধা হত না।
আচ্ছা বেশ, তাহলে বলুন ওই রাতে কি অন্য কারো বাড়িতে আসার কথা ছিল?
না।
আপনার এমন কোন বন্ধু কি নেই যে খোঁজ-খবর ছাড়াই হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়?
এ-রকম বন্ধু আমার একজনই–বার্ক।
কিণ্ডারম্যান গম্ভীর মুখে মাথা চুলকাতে লাগল। তারপর নিচু গলায় হেসে বলল, মিসেস ম্যাকনীল, পুরো ব্যাপারটাই জট পাকিয়ে গেছে। আমি বলতে গেলে অথৈ সমুদ্রে পড়ে গেছি। একজন লোক এল আপনার সঙ্গে দেখা করতে। পনেরো মিনিট অপেক্ষা করেই, অত্যন্ত অসুস্থ একটা মেয়েকে ঘরে একা ফেলে সে চলে গেল? আশ্চর্য নয় কি?