আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?
ছি ছি, ফাদার। ভয় দেখাবো কি? আপনি আমাকে লজ্জায় ফেললেন।
ফাদারদের কাছে কেউ যদি কনফেশন করে তাহলে ফাদাররা তা গোপন রাখতে পারেন। আইন তাদের সে অধিকার দিয়েছে।
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।
আমি মনে করি, মানুষের একটা আশ্রয় থাকা প্রয়োজন– যেখানে সে নির্ভয়ে তার অপরাধ স্বীকার করে মন হালকা করতে পারে।
কিন্তু ফাদার, অপরাধ স্বীকার করার পরও তো একজন আবার অপরাধ করতে পারে। আমাদের কি উচিত নয় ওদের খুঁজে বের করা?
অবশ্যই উচিত। তবে, মিঃ কিণ্ডারম্যান, আমি এরকম কাউকে চিনি না। চিনলেও আপনাকে বলতাম না। আমাদের উর্বর্তনকে জানাতাম।
আচ্ছা, ফাদার, আপনি তো অনেককেই নিয়মিত দেখছেন। ওদের দিকে, মানে পাদ্রীদের দিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন কি?
মিঃ কিণ্ডারম্যান, উপাসনার দায়িত্ব থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অনেকের সঙ্গে এখন আমার আর দেখা হয় না। কিণ্ডারম্যান কি একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর হঠাৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল, আপনি কি সিনেমা দেখেন ফাদার?
দেখি।
লিয়ার দেখেছেন?
না।
আমরা সঙ্গে যাবেন ছবি দেখতে? একা একা ছবি দেখতে আমার ভাল লাগে একটুও। আমরা স্ত্রী আবার আমার সঙ্গে যেতে চায় না। অথচ আমার ইচ্ছে করে কাউকে সঙ্গে নিয়ে দেখি। যাবেন, ফাদার?
কবে?
সে আমি ঠিক করব। আমি ঠিক করে এসে আপনাকে নিয়ে যাব।
বেশ তো। আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন?
না, না।
আমি কি যেতে পারি এখন?
নিশ্চয়ই। তবে ফাদার, আপনার কাছ থেকে একটা জিনিস নিতে চাই।
কি?
হলি ট্রিনিটিতে একটা টাইপ করা কাগজ পাওয়া গিয়েছিল। অনেক অশ্লীল কথাবার্তা লেখা, সেই কাগজটা—
কি করবেন সেটা দিয়ে? আঙুলের ছাপ তো পাবেন না। অনেকের হাত পড়েছে তাতে।
তবু একটু দেখতে চাই।
বেশ তো, আসুন আমার সঙ্গে।
সন্ধ্যা সাতটা তেইশ মিনিটে কিণ্ডারম্যান একটা স্পেকটোগ্রাফিক অ্যানালিসিস করল। দেখা গেল, যে-রঙ রেগানের বানানো পাখিতে ছিল, সেই রঙই শয়তান উপাসকরা মাতা মেরীর গায়ে মাখিয়েছে।
রাত আটটা সাতচল্লিশ মিনিটে কার্লকে দেখা গেল শহরের একটা বস্তি অঞ্চল থেকে চুপিসারে বেরোতে। মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে সে বাসস্ট্যাণ্ড পর্যন্ত এসে মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থাকল, তারপর হঠাৎ হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করল। তার আশেপাশে কেউ ছিল না। লেফটেন্যান্ট কিণ্ডারম্যান তখন ছবি দেখছিলেন মাইল খানেক দূরের একটা প্রেক্ষাগৃহে।
২.৬
মে মাসের ১১ তারিখ বুধবার বিকাল তিনটায় রেগানকে ডেটন থেকে ফিরিয়ে আনা হল। ডাক্তাররা রেগানের ঘরের বড় জানালাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিল। আর ঘর থেকে সরিয়ে নিল সবগুলো আয়না ও কাচের জিনিস।
ডাঃ ক্লীন এসে অনেকক্ষণ ধরে ক্রিসকে শেখালেন কিভাবে নাকের ভেতর নল দিয়ে খাবার খাওয়াতে হয়। এখন রেগানের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে এই পদ্ধতি ছাড়া খাবার খাওয়ানোর অন্য উপায় নেই। ডাঃ ক্লীন বললেন, মিসেস ম্যাকনীল, লক্ষ্য রাখবেন তরল খাবার যেন ফুসফুসে চলে না যায়। খুব সাবধানে ব্যবহার করবেন এটা।
ডাঃ ক্লীন চলে যেতেই ক্রিস তার এজেন্টকে ফোন করল। জানিয়ে দিল, ছবি পরিচালনার দায়িত্ব সে এখন নিতে পারবে না। মিসেস জো পেরিনকেও ফেন করল ক্রিস, কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না।
কার্ল শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে বিছানার সঙ্গে রেগানকে বাধল। তার মুখ তখনো অভিব্যক্তিহীন। এক সময় শুধু বলল, ম্যাডাম, আমাদের রেগান কি ভাল হবে?
ক্রিস তার কোন উত্তর দিল না।
কার্লের মধ্যে রেগানের জন্যে গাঢ় মমতা আছে। ক্রিস দেখেছে, কাল প্রায়। সারাক্ষণই রেগানের ঘরে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
ক্রিসের জীবনযাত্রা সংগত কারণেই বদলে গেছে। তার অনুভূতিগুলো কেমন ভেঁতা হয়ে গেছে ইদানীং। বসার ঘরে চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে এক সময় ভাবল, বাইবেল পড়লে কেমন হয়? কিন্তু ঘরে বাইবেল নেই। ধর্মীয় কোন কিছুই নেই। ক্রিস অলস চোখে তাকাল বইয়ের তাকের দিকে–একি! মেরি জোর পাঠানো বইটা এখানে কেন? এটা না তার শোবার ঘরে ছিল?
ক্রিস তাক থেকে বইটা নামিয়ে আনল। এখানে কে আনল এটা?
শ্যারনকে ডেকে এ-কথা সে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই ক্রিস বইটার প্রসঙ্গ তুলল। বইটা পড়েছ?
না, এ-ধরনের বই পড়তে আমার ভাল লাগে না। ভূত-প্রেতের বই আমি পড়ি না। রাতে ঘুম হয় না–বিচ্ছিরি লাগে।
বই হাতে ক্রিস উপরে উঠে গেল।
কার্ল, কার্ল!
কি হয়েছে, ম্যাডাম?
এই বইটা কি তুমি বসার ঘরে রেখেছ?
না, ম্যাডাম।
উইলি কোথায়?
রান্নাঘরে। ডিনার তৈরি করছে।
নিচে নেমে এল ক্রিস। তার মনে একটা সন্দেহ জেগেছে। হয়ত রেগান পড়েছে এই বই, বেরিঞ্জার ক্লিনিকের ডাক্তাররা যা বলেছেন হয়ত তাই সঠিক। রেগান সম্ভবত এই অবস্থায় এসেছে অটোসাজেশনের মাধ্যমে। এই বইটাই হয়ত সবকিছুর মূলে।
উইলি?
ম্যাডাম।
এই বইটা কি তুমি বসার ঘরে রেখেছো?
হ্যাঁ।
কোথায় পেয়েছিলে এটা?
রেগানের শোবার ঘরে। সত্যি?
হ্যাঁ, ম্যাডাম। রেগানের ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে হঠাৎ দেখলাম।
ঠিক আছে, যাও।
উইলিকে বিদায় দিয়ে চিন্তিত মুখে ক্রিস বইটা নিয়ে বসল। ডাইনীতন্ত্র। ভূতে পাওয়া। শয়তানের উপাসনা। অনেকগুলো অধ্যায় আছে বইটিতে। মিসেস জো পেরিন এই বইটা তাকে পড়তে দিলেন কেন?
ক্রিস।
কি?
ডিটেকটিভ মিঃ কিণ্ডারম্যান তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন।