আছে, উইলি আর কার্ল। স্বামী-স্ত্রী। তখন ওরা বাড়িতে ছিল না। ওদের আমি ছুটি দিয়েছিলাম।
ওদের কি আপনি প্রায়ই ছুটি দেন, না শুধু ওই দিনই দিয়েছিলেন?
প্রায়ই ছুটি দিই।
ক্রিসের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল। সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাবার্তা শুরু হলেও এখন যা শুরু হয়েছে তা নিখুঁত তদন্ত। কিন্তু কেন? ক্রিস দেখল, কার্ল রান্নাঘরের সামনে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের জিনিসটা পরিষ্কার তবু কাল এত ঘষাঘষি করছে কি জন্যে?
কিণ্ডারম্যান একটা সিগারেট ধরিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, মিসেস ম্যাকনীল, তাহলে দেখা যাচ্ছে একমাত্র আপনার মেয়েই বলতে পারবে কখন মিঃ ডেনিংস বিদায় নিয়েছেন।
না, সে বলতে পারব না। সে খুব অসুস্থ। ওকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
কি অসুখ জানতে পারি?
না, আমরা নিজরাই এখনো জানি না।
ঠাণ্ডা বাতাস থেকে হয় এই সব। ঠাণ্ডা বাতাসে থাকে লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া। খুব লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক্রিস সরু চোখে তাকিয়ে রইল।
আপনার মেয়ের ঘরটা কোথায়?
দোতলায়। শেষ মাথায়।
ওর ঘরের জানালা বন্ধ রাখবেন। ঠাণ্ডা বাতাস হচ্ছে সমস্ত অসুখের মূল। এখন আমি কার্লকে শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো। তারপর শেষ। পুলিশের চাকরি যে কি যন্ত্রণা, মিসেস ম্যাকনীল।
কার্ল নিজে থেকেই সামনে এগিয়ে এল।
মিঃ কার্ল, আপনি কাল কটায় বাড়ি ফিরেছেন?
আমি সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরেছি ঠিক নটা পঁয়ত্রিশে।
কি ছবি দেখেছেন?
লিয়ার। ক্রেস্ট মুভি হাউসে।
আমি ছবিটা দেখেছি। চমৎকার ছবি।
ছবি শুরু হয়েছে ঠিক ছটায়। শেষ হয়েছে আটটায়। শেষ হওয়ামাত্র আমি বাসে উঠলাম …।
না, না, এত সব বলতে হবে না। কোন প্রয়োজন নেই।
প্রয়োজন না থাকলেও আমি বলতে চাই। আমি এম স্ট্রীটে বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফিরেছি।
আহা, কে জানতে চাচ্ছে এসব? ছবিটা কেমন ছিল সেটা বলুন।
ছবিটা ভালো।
আপনার স্ত্রী, তিনি কি আপনার সঙ্গে ছিলেন?
না, সে অন্য ছবি দেখেছে।
কি ছবি দেখেছেন তিনি?
বীটলসদের একটা ছবি।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। মিসেস ম্যাকনীল, আজ তাহলে উঠি। যদি দরকার হয় তাহলে পরে আবার টেলিফোন করবো।
আমি কিন্তু কিছুদিন এখানে থাকবো না। ডেটনে যাচ্ছি।
আমার কোন তাড়া নেই। আমি অপেক্ষা করবো।
কিণ্ডারম্যান সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে চিন্তিত সুরে বলল, আপনার মেয়ের জন্যে কি ভাল ডাক্তারের ব্যবস্থা করেছেন?
হ্যাঁ, ওকে আমি একটা ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি।
ক্লিনিকটা কোথায়?
ডেটনে–এই যে বললাম আমি যাচ্ছি সেখানে।
ও। তাহলে আজ উঠি, মিসেস ম্যাকনীল। গুড নাইট।
গুড নাইট।
কিণ্ডারম্যান চিস্তিতমুখে তার গাড়ির দিকে এগুল। গাড়িতে উঠে সে বাতি জ্বালাল। গ্রোভ কম্পার্টমেন্ট খুলে ছোট্ট একটা ছুরি বের করে তার নখের ডগায় লেগে থাকা রঙ চেঁছে চেঁছে তুলতে লাগল। রঙ লেগেছে রেগানের বানানো পাখির মূর্তি থেকে। ছোট্ট একটা খামের ভেতর রঙের গুঁড়োগুলো রেখে সেটার মুখ বন্ধ করে দিল কিণ্ডারম্যান। এগুলো পাঠাতে হবে পরীক্ষার জন্যে। কার্ল লোকটার ব্যাপারে আরো খোজ খবর নিতে হবে। বয়স বেশ হয়ে গেলেও ব্যাটা এখনো দিব্যি গাট্টাগোট্টা। বউটা তত বুড়িয়ে গেছে। দেখলে কে বলবে ওরা স্বামী-স্ত্রী! গাড়ির ড্রাইভারকে কিণ্ডারম্যান বলল মর্গে নিয়ে যেতে। মর্গের ৩২ নম্বর লকারে বার্ক ডেনিংসের লাশ রাখা আছে। সেটা আরেকবার দেখা প্রয়োজন।
কিণ্ডারম্যা অনেকক্ষণ ধরে বার্ক ডেনিংসের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে থাকল। আগেও সে দুবার দেখেছে আর প্রতিবারেই তার ভ্রু কুঞ্চিত হয়েছে। বার্ক ডেনিংসের মাথাটা এমনভাবে ঘোরানো যেন কেউ মুচড়ে সেটা ঘুরিয়ে তাকে মেরেছে। কুৎসিত ব্যাপার। কিণ্ডারম্যান মৃদু স্বরে বলেই ফেলল, পুলিশের চাকরির মত খারাপ চাকরি আর নেই।
২.৫
ফাদার ডেমিয়েন কারাস সুতির একটা টি শার্ট আর খাকী রঙের প্যান্ট পরে দৌড়াচ্ছিলেন। তিনি রোজ ঘণ্টাখানেক এ-রকম দৌড়ান। উপাসনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এই হয়েছে তার নতুন রুটিন। আজ তিনি দৌড়াচ্ছেন এসট্রনমিক্যাল অবজারভেটরির দিকে। গা বেয়ে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে। পায়ের পেশীগুলো টন টন করছে। তবু অবজারভেটরি পর্যন্ত না পৌঁছে তিনি থামবেন না।
মেডিক্যাল স্কুলের কাছে এসে ফাদার কারাস বা দিকে মোড় নিলেন। তখনই তার চোখে পড়ল সামনের দিকে বেঞ্চে বসা এক লোক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে লক্ষ্য করছে। লোকটির গায়ে ওভারকোট, মাথায় ফেল্ট হ্যাট। মুখের ভাব কিছুটা যেন বিষণ্ণ।
কাছাকাছি আসতেই ওভারকোট পরা লোকটা উঠে দাঁড়াল। ভাঙা গলায় শুধাল, ফাদার কারাস?
কারাস মাথা নাড়লেন। একটুখানি হাসলেন। থামলেন না, কিন্তু গতিবেগ কমিয়ে দিলেন যাতে লোকটা তাকে ধরতে পারে। বললেন, আমি থামতে পারছি না। দয়া করে এগিয়ে আসুন।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই,আমি আসছি।
লোকটা এবার দৌড়াতে শুরু করল। ফাদার কারাস জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে কি আমি চিনি?,
না, ফাদার। আমার নাম উইলিয়াম কিণ্ডারম্যান। হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে আছি।
আমার কাছে কি দরকার বলুন তো?
ফাদার, আমি শুনেছিলাম আপনি দেখতে একজন বক্সারের মতো। আসলেও তাই। আপনার গালে একটা কাটা দাগ পর্যন্ত আছে। তা সত্যি সত্যি কি বক্সিং করেন?।
মাঝে মাঝে করি।
আপনার বাড়ি কোথায় ফাদার? বসতবাড়ি?
নিউইয়র্ক।