রেগান মাথা নাড়ল।
তুমি কে?
মিয়াউকেয়ান।
এটা কি তোমার নাম?
রেগান মাথা নাড়ল।
তুমি কি পুরুষ?
আনহ।
তুমি কি আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছ?
আনহ।
এ কথার অর্থ যদি হ্যাঁ হয় তাহলে মাথা নাড়ো।
রেগান মাথা নাড়ল।
তুমি কি কোন বিদেশী ভাষায় কথা বলছ?
আনহ।
কোত্থেকে তুমি এসেছ?
রশ্বঙ্গ।
তুমি বলছো তুমি হ্রস্ব ই থেকে এসেছ।
আনমিয়াছিসেয়েরশ্বঈকেথে।
সাইকিয়াট্রিস্ট খানিকক্ষণ কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, এখন থেকে তোমাকে যখন প্রশ্ন করব তখন তুমি মাথা নেড়ে উত্তর দেবে। একবার মাথা নাড়লে হ্যাঁ, আর দুবার নাড়লে না। বুঝতে পেরেছো?
রেগান একবার মাথা নাড়ল।
তোমার উত্তরগুলোর কোন অর্থ আছে?–আছে।
তোমাকে কি রেগান আগে চিনতো?–না।
তোমাকে কি রেগান কল্পনা করেছে?–না।
তুমি সত্যি আছ?–হ্যাঁ।
তুমি কি রেগানের একটা অংশ?–না।
তুমি কি কখনো রেগানের অংশ ছিলে?–না।
তুমি কি রেগানকে পছন্দ করো?–না।
অপছন্দ করো?–হ্যাঁ।
ঘৃণা করো?–হ্যাঁ।
রেগানের বাবা-মার ডিভোর্সের জন্যে তুমি কি রেগানকে দায়ী করো?—না।
রেগানের বাবা-মার সঙ্গে কি তোমার কোন সম্পর্ক আছে?–না।
ওর কোন বন্ধুর সঙ্গে?–না।
তবু তুমি রেগানকে ঘৃণা করো?–হ্যাঁ।
তুমি তাকে শাস্তি দিতে চাও?–হ্যাঁ।
মেরে ফেলতে চাও?–হ্যাঁ।
তাকে মেরে ফেললে তুমি নিজেও কি মরে যাবে না?–না।
সাইকিয়াট্রিস্ট কেমন বিমূঢ় হয়ে পড়লেন বলে মনে হল। প্রশ্নোত্তরগুলো তার মনমত হচ্ছে না। ব্যাপারটা তিনি গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করলেন।
এমন কি কিছু আছে যা করা হলে তুমি রেগানকে ছেড়ে যাবে?–হ্যাঁ।
তুমি কি বলতে পারো তা কি?–হ্যাঁ।
তুমি কি বলবে?—না।
কিন্তু–
কথাটা শেষ করার আগেই সাইকিয়াট্রিস্ট হঠাৎ অস্ফুট চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলেন। পরমুহূর্তেই একটা বিকট চিৎকার। দুই হাতের বন্ধু মুষ্ঠিতে রেগান চেপে ধরেছে সাইকিয়াট্রিস্টের অণ্ডকোষ। হাতে তার অসুরের শক্তি। ক্রিস স্তম্ভিত হয়ে দেখল, দুজনে বিছানার ওপর দাপাদাপি শুরু করেছে। অসহ্য যন্ত্রণায় চিল্কার করে উঠলেন সাইকিয়াট্রিস্ট, ডাঃ ক্লীন, ডাঃ ক্লীন, আমাকে বাঁচান। মেরে ফেলল, আমাকে মেরে ফেলল।
রেগান হঠাৎ ঘর ফাটিয়ে হ্যাঁ হ্যাঁ করে হেসে উঠল।
ক্রিস লাফিয়ে উঠল। বিছানাটা ভয়ংকরভাবে কাপছে। ডাঃ ক্লীন দৌড়ে গিয়ে বাতি জ্বালালেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা ভয়ংকর কিছু যেন ঘর ছেড়ে চলে রেগান গেল। আবার নেতিয়ে পড়ল। ডাঃ ক্লীন পরীক্ষা করে দেখলেন রেগান ঘুমিয়ে পড়েছে। সাইকিয়াট্রিস্টের মুখ কাগজের মত সাদা। ক্রিস ফুঁপিয়ে উঠল, বলুন আপনারা, আমার মেয়ের কি হয়েছে?
মিসেস ম্যাকনীল, আসুন আমরা নিচে গিয়ে কথা বলি।
ক্লান্ত পায়ে নিচে নেমে এল সবাই। কেউ কারো মুখের দিকে ভাল করে তাকাতে পারছে না।
এখন আপনারা বলুন, আমরা মেয়ের কি হয়েছে? আপনারা তো নিজের চোখেই সব দেখলেন, এখন বলুন।
মিসেস ম্যাকনীল, পুরো ব্যাপারটাই বেশ জটিল।
তবুও কিছু একটা তো বলবেন?
আমার ধারণা, রেগানের হিস্টিরিয়া হয়েছে।
হিস্টিরিয়া?
হ্যাঁ, হিস্টিরিয়া।
এই যে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ কথা বলছে রেগানের মুখ দিয়ে, এটাও হিস্টিরিয়া? কি বলছেন আপনারা?
সাইকিয়াট্রিস্ট রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন। শান্ত স্বরে বললেন, রেগানের মনে একটা অপরাধবোধ আছে। সেই অপরাধবোধের জন্যেই ও নিজেকে নিজে শাস্তি দিতে চায়। এজন্যেই ও ক্যাপ্টেন হাউজিকে তৈরি করেছে। এই কাল্পনিক হাউড়ি এখন শাস্তি দিচ্ছে ওকে।
অপরাধবোধটা আসবে কোত্থেকে?
বাবা-মার ডিভোর্সের জন্যে শিশুরা সব সময়ই নিজেদের দোষী ভাবে। অপরাধবোধটা আসে সেখান থেকেই।
ক্রিস ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিগারেট ধরাল একটা। বলল, তাহলে আপনার ধারণা ওর হিস্টিরিয়া হয়েছে?
হিস্টিরিয়া হওয়ারই সম্ভাবনা।
রোগটা কি রকম একটু বুঝিয়ে বলুন।
মনের অসুখের শারীরিক অসুখ হয়ে যাওয়াকেই বলে হিস্টিরিয়া। হিস্টিরিয়া রোগীর মধ্যে দ্বৈত ব্যক্তিত্ব দেখা যায়। অনেক রকম অস্তিত্বহীন জিনিস ওরা দেখে। রেগানের সঙ্গে এসব লক্ষণ কিন্তু বেশ মিলে যায়, মিসেস ম্যাকনীল।
এখন আসল কথা বলুন। ওর কী চিকিৎসা করবেন?
ডাক্তার দুজনেই চুপ করে থাকলেন। ক্রিস অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে বলল, চুপ করে আছেন কেন? বলুন, এখন কি করতে হবে?
আমার মতে বেশ কয়েকজন এক্সপার্টকে দিয়ে পরীক্ষা করানো দরকার। সপ্তাহ তিনেকের জন্যে হাসপাতালে রেখে ভালমত পরীক্ষা করতে হবে। ডেটনের বেরিঙ্গার ক্লিনিক হবে সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা, মিসেস ম্যাকনীল।
ক্রিস দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। আরেকটা সিগারেট ধরাল। ডাঃ ক্লীন বললেন, ক্লিনিকে দিতে আপনার কোন আপত্তি আছে?
না, আপত্তি কিসের? তবে আমি ভরসা হারিয়ে ফেলছি, ডাক্তার।
সাইকিয়াট্রিস্ট টেলিফোন করলেন বেরিঙ্গার ক্লিনিকে। তারা জানাল পরদিন ভোরে এসে রেগানকে নিয়ে যাবে। আরো মিনিট দশেক চুপচাপ বসে থেকে ডাক্তাররা বিদায় নিলেন।
বেরিঙ্গার ক্লিনিকে যাওয়ার জন্যে কোন পোশাক পরতে হবে ক্রিস তাই দেখছিল। নতুন একটা পরচুলা আনিয়েছে সেদিন, ওটা পরলে কেউ আর ওকে চিনতে পারে না সহজে। নামী অভিনেত্রীদের কোথাও যাওয়াও এক ঝামেলা। কার্ল এসে বলল, একজন ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।
বল, দেখা হবে না। আমি ব্যস্ত।
ভদ্রলোক একজন ডিটেকটিভ।
ডিটেকটিভ?
হ্যাঁ। উইলিয়াম কিণ্ডারম্যান। হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের লেফটেন্যান্ট।